দক্ষিণ এশিয়ার কেন্দ্রবিন্দু আর হিমালয় নয়, কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে বঙ্গোপসাগর বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর। তিনি বলেন, সরকার এমন পরিবেশ তৈরি করতে পারে, যার মাধ্যমে ভবিষ্যতে রাজনৈতিক সরকার দক্ষিণ এশিয়ার নেতৃত্ব দিতে পারে। সেই নেতৃত্ব দেওয়ার পরিবেশ তৈরি করতে হবে।
ঐক্য, সংস্কার ও নির্বাচন শীর্ষক দুই দিনের জাতীয় সংলাপের দ্বিতীয় দিন আজ শনিবার এক অধিবেশনে এ কথা বলেন অধ্যাপক রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর। রাজধানী ফার্মগেটের খামারবাড়িতে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে ফোরাম ফর বাংলাদেশ স্টাডিজ এই সংলাপের আয়োজন করেছে।
আন্তর্জাতিক ভূরাজনীতি পরিবর্তন হচ্ছে মন্তব্য করে রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর বলেন, ২০২৫ সালে সবচেয়ে বড় রকমের পরিবর্তন হবে। হিমালয় থেকে বঙ্গোপসাগরে পরিবর্তন হবে। এ অঞ্চলে কোনো নেতা নেই, যিনি বঙ্গোপসাগরে বর্তমান পরিস্থিতিতে জাতীয়ভাবে নেতৃত্ব দান করতে পারবেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের নতুন প্রতিবেশী আসতে পারে, নতুন রাষ্ট্রের উত্থান হতে পারে। তাই এমন পরিস্থিতি তৈরি হওয়া উচিত যে দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ আন্তর্জাতিকভাবে, ভূরাজনৈতিকভাবে নেতৃত্ব দেবে।’
রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর বলেন, সংস্কার ও নির্বাচনকে পাল্টাপাল্টি না বলে ন্যূনতম ঐক্যের দিকে যেতে হবে।
অর্থনীতি মন্দা অবস্থায় আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, অর্থনীতির উৎপাদন সম্পর্কে কোনো কথাবার্তা নেই। সেটা আসলে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কায়দায় চলবে না, অন্য কোনো কায়দাও চলবে না। দেশজ কায়দা চলতে হলে দৃষ্টান্ত তৈরি করা যাবে। কিন্তু সামগ্রিক সংস্কার করা যাবে না। সরকারের একটাই লক্ষ্য থাকতে হবে, দৃষ্টান্ত তৈরি করতে হবে। চারটা থেকে পাঁচটা দৃষ্টান্ত তৈরি করতে হবে।
বাংলাদেশের সাম্প্রতিক অনুমোদন দেওয়া ১২ ব্যাংকের স্পনসর কোথা থেকে পেয়েছে, তা বের করা এনবিআরের দায়িত্ব বলে মন্তব্য করেন রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর।
সংলাপে ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের নেতা মাওলানা গাজী আতাউর রহমান বলেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা রাখা যায় কি না, তা সংবিধান সংস্কার কমিটিকে ভাবতে হবে৷ বাহাত্তরের সংবিধান রচনার সময় শেখ মুজিবও কিন্তু ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলেননি৷ সংবিধান নতুন করে রচনার সময় এ অঞ্চলের ধর্মীয় সংস্কৃতি, ইতিহাস, ঐতিহ্যকে প্রাধান্য দিতে হবে৷
আতাউর রহমান দ্বিকক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্ট ও সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের পরামর্শ দেন৷
জাতীয় নাগরিক কমিটির সরোয়ার তুষার বলেন, ৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের পরে বাংলাদেশের যে সংবিধান তা বাতিল হয়ে গেছে৷ বলা যায়, এ সংবিধান এখন কোমায় চলে গেছে৷ সংবিধান পরিবর্তন করার লক্ষ্যে একটি লিগ্যাল ফ্রেমওয়ার্ক তৈরি করতে হবে, গঠন করতে হবে একটি গণপরিষদ। এ গণপরিষদ সংবিধান রচনা করবে নতুন করে৷ এই গণপরিষদ পরে আইনসভা বা জাতীয় সংসদে পরিণত হতে পারে। প্রয়োজনে গণভোট করা যেতে পারে৷
তবে তুষারের কথার বিরোধিতা করেন ছাত্রদলের গবেষণা সেলের সদস্য হাবিবুর রহমান হাবীব৷ তিনি বলেন, ‘যে সংবিধানের ১০৪ ধারা মতে অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতাসীন হয়েছে, আপনারা শপথ নিয়েছেন, তা এত সহজে বাতিল করে দেবেন? সংবিধান সংস্কার করতে গেলে প্রয়োজন গণভোট। থাকতে হবে জনগণের ভাষ্য। জনগণের কথা বলবেন, তাদের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা৷ জনগণের প্রতিনিধিদের বাদ দিয়ে কেবল ১০-১২ জনের পাঠচক্রে সংবিধান সংস্কার করে ফেলবেন?’
জবাবে সারোয়ার তুষার বলেন, রাজনৈতিক দলই জনগণের প্রতিনিধি এটা ভুল ধারণা। তাহলে জুলাই বিপ্লবে ছাত্রদের ডাকে সাধারণ মানুষ নেমে আসতো না।
দৈনিক ইত্তেফাকের নির্বাহী সম্পাদক সালেহ উদ্দিনের সঞ্চালনায় সংলাপে অংশ নেন নৌপরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, গণফোরামের কো-চেয়ারম্যান সুব্রত চৌধুরী, গীতিকার শহীদুল্লাহ ফরাজী, গণসংগীত আন্দোলনের আবুল হাসান রুবেল প্রমুখ।