ভবিষ্যতে বাংলাদেশে যেন কর্তৃত্ববাদী ও ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হতে না পারে, সেই প্রস্তাব দেবে ছায়া সংস্কার কমিশনগুলো। তারা স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদে এই প্রস্তাব দেওয়ার কথা জানিয়েছে।
আজ রোববার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে ছায়া সংস্কার কমিশনের চতুর্থ কর্মশালায় এ কথা বলা হয়। পলিটিক্যাল অ্যান্ড পলিসি সায়েন্স রিসার্চ ফাউন্ডেশন (পিএসআরএফ) এই কর্মশালার আয়োজন করে। অন্তর্বর্তী সরকারের গঠিত ১১টি সংস্কার কমিশনকে সহায়তা করতে ছায়া সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়। এই ছায়া সংস্কার কমিশনে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি বিদেশে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে উচ্চশিক্ষারত বাংলাদেশিরা রয়েছেন।
কর্মশালায় বলা হয়েছে, রাষ্ট্রের বিভিন্ন খাতের সংস্কার প্রস্তাব তৈরির জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের গঠিত ১১টি সংস্কার কমিশনে রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের সংশ্লিষ্টতা কম। তবে যত দিন রাষ্ট্র থাকবে, তত দিন সংস্কার থাকবে। ফলে সংস্কার কমিশনগুলোর অভিজ্ঞতা দীর্ঘ মেয়াদে কাজে লাগবে।
ছায়া সংস্কার কমিশনের আহ্বায়ক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কাজী মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান বলেন, ছায়া সংস্কার কমিশনগুলো সরকারের সংস্কার কমিশনগুলোর বিকল্প হিসেবে কাজ করছে। ভবিষ্যতে বাংলাদেশে যেন কর্তৃত্ববাদী ও ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হতে না পারে, সে জন্য কমিশনগুলো (১১টি ছায়া সংস্কার কমিশন) স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদে বিভিন্ন প্রস্তাব তুলে ধরবে। এভাবে বাংলাদেশকে নাগরিকবান্ধব রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার জন্য তারা সচেষ্ট থাকবে।
এ সময় সরকারের রাষ্ট্র সংস্কার কমিশনের বিপরীতে ছায়া সংস্কার কমিশনের প্রয়োজনীয়তাও ব্যাখ্যা করেন কাজী মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান। তিনি বলেন, সরকার যে ধরনের সংস্কার কমিশন গঠন করেছে, সেগুলোয় রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের সংশ্লিষ্টতা কম থাকায় রাষ্ট্রবিজ্ঞানের দিক থেকে চিন্তার প্রতিফলনের সীমাবদ্ধতা থাকতে পারে। তাই বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষক–শিক্ষার্থী এবং বিদেশে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে উচ্চশিক্ষারত বাংলাদেশিদের সমন্বয়ে ছায়া সংস্কার কমিশনগুলো গঠন করা হয়েছে, যাতে রাজনৈতিক সমস্যা সমাধানে তাত্ত্বিক ও বাস্তব বিষয়ের আশা–আকাঙ্ক্ষার সম্মিলন ঘটে। এ ছাড়া সরকারের গঠিত কমিশনগুলো পৃথকভাবে কাজ করছে। ফলে তাদের মধ্যে সমন্বয়হীনতা থাকতে পারে। অন্যদিকে ছায়া সংস্কার কমিশনগুলো নিজেদের মধ্যে সমন্বয় করে চার মাস ধরে কাজ করছে।
ছায়া সংস্কার কমিশনগুলোয় সরকারের গঠিত সংস্কার কমিশনের বাইরেও কিছু কমিশন তৈরি করা হয়েছে বলে জানান ছায়া সংস্কার কমিশনের আহ্বায়ক। তিনি বলেন, এমন একটি কমিশন হচ্ছে রাজনৈতিক দলব্যবস্থা সংস্কার কমিশন। রাজনৈতিক দলের মধ্যে জবাবদিহির বিষয়টি একটি দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য সবচেয়ে প্রয়োজনীয় বিষয়। এতে করে জবাবদিহিমূলক সরকারব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হবে। নাগরিকবান্ধব রাজনৈতিক দলব্যবস্থা প্রণয়ন করার জন্য এই কমিশন করা হয়েছে।
এ ছাড়া দায়িত্বশীল শাসন বিভাগের জন্যও একটি ছায়া কমিশন করা হয়েছে। সব কটি সংস্কার কমিশনের নামের শুরুতেই ‘টেকসই’ শব্দটি উল্লেখ করা হয়েছে।
কমিশনগুলোর সুপারিশ বাস্তবায়িত হলে টেকসই উন্নয়নের স্বপ্ন নিশ্চিত হবে।
কর্মশালায় বলা হয়, ছায়া সংস্কার কমিশনের স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনা হলো, কমিশনগুলো সমন্বিতভাবে সুপারিশ তৈরি করে জাতীয় পর্যায়ে সেমিনার ও সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে জাতিকে জানাবে। জাতীয় পর্যায়ে সেমিনারের মাধ্যমে তৈরি করা চূড়ান্ত প্রতিবেদন সরকারের ঐক্যবদ্ধ কমিশনের কাছে হস্তান্তর করা হবে। মধ্যমেয়াদি পরিকল্পনা হিসেবে সরকারের সংস্কার কমিশনগুলো ও ছায়া সংস্কার কমিশনগুলোর সুপারিশ সরকার কতটা বাস্তবায়ন করেছে, তা পর্যবেক্ষণ করা হবে। প্রাথমিকভাবে ২০ বছরের কর্মপরিকল্পনা নিয়ে ছায়া সংস্কার কমিশন কাজ করছে।
কর্মশালায় স্বাগত বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান নাসিমা খাতুন। পরে বিশেষজ্ঞ হিসেবে বক্তব্য দেন একই বিভাগের অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ, এস এম আলী রেজা এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান মেজবা-উল-আযম সওদাগর। ঢাকার বাইরের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের বেশ কয়েকজন শিক্ষক কর্মশালায় ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত ছিলেন।