রাজধানীতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গণ অধিকার পরিষদের নেতা ফারুক হাসানের ওপর কোনো হামলা হয়নি বলে দাবি করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহতদের একটি পক্ষ। তাদের দাবি, শহীদ মিনারে এক সমাবেশে ফারুক হাসান অন্তর্বর্তী সরকার ও রাজনৈতিক নেতাদের নিয়ে কটূক্তি করেন। ফারুক হাসানকে তাঁর বক্তব্য প্রত্যাহারের অনুরোধ জানিয়েছিলেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আহত একজন। এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি হয়। তবে গণ অধিকার পরিষদ ঘটনাস্থলে থাকা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আহত কয়েকজনকে রাজনৈতিক ‘ট্যাগ’ দিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অপপ্রচার চালাচ্ছে।
আজ রোববার জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের দোতলায় সংবাদ সম্মেলন করে এসব কথা বলেছেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আহত কয়েকজন। তাঁরা বলছেন, গতকাল শনিবার ‘জাতীয় বিপ্লবী পরিষদ’ ব্যানারে আয়োজিত একটি সমাবেশে আমন্ত্রিত হয়ে অংশ নেন। ওই অনুষ্ঠানে গণ অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সহসভাপতি ফারুক হাসানও আমন্ত্রিত ছিলেন। সেখানে ফারুক হাসানের সঙ্গে তাঁদের একটি ‘অপ্রীতিকর’ ঘটনা ঘটে। যদিও ফারুক হাসানের অভিযোগ, ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা তাঁর ওপর ‘অতর্কিত আক্রমণ’ চালিয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে আহতদের পক্ষ থেকে কোরবান শেখ হিল্লোল নামের একজন বলেন, শহীদ মিনারের ওই অনুষ্ঠানে আহতদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। তাঁদের বলা হয়েছিল, ওই অনুষ্ঠানে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে নিহত ও আহতদের নিয়ে কথা হবে। কিন্তু ফারুক হাসান সরকারের সমালোচনা করে বক্তব্য দেন। রাজনৈতিক নেতাদের নিয়ে কটূক্তি করেন। ফারুক হাসানকে রাজনৈতিক বক্তব্য না দেওয়ার জন্য আন্দোলনে আহত সাইফুল ইসলাম অনুরোধ জানান। পাশাপাশি রাজনৈতিক বক্তব্য প্রত্যাহারের জন্য ফারুক হাসানকে অনুরোধ করেন সাইফুল ইসলাম। এ সময় ফারুক হাসানসহ গণ অধিকার পরিষদের কয়েকজন সাইফুল ইসলামকে মঞ্চের পেছনে নিয়ে যান। তারপর আন্দোলনে আগত কয়েকজন এগিয়ে এলে উভয় পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি হয়। এই ঘটনাকে গণ অধিকার পরিষদ রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করছে।
কোরবান আলী হিল্লোল বলেন, গণ অধিকার পরিষদ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছবি দিয়ে বলছে, এরা হামলাকারী। এরা দুষ্কৃতকারী, এদের ধরিয়ে দেন। তাঁরা নানা ধরনের উদ্দেশ্যমূলক কথা বলছেন, রাজনৈতিক ‘ট্যাগ’ দিচ্ছেন। এখন সাধারণ মানুষ তো আমাদের চেনেন না। তাঁরা যদি আমাদের ওপর হামলা করেন, এর দায়ভার কে নেবে? তিনি বলেন, আহতদের কোনো দল নেই। আহতদের নিয়ে বাণিজ্য করবেন না, ফায়দা নেওয়ার চেষ্টা করবেন না।
গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হককে উদ্দেশ করে কোরবান আলী সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘আন্দোলনে আহতদের পাশে থেকেছেন নুরুল হক। সহযোগিতাও করেছেন। গতকালের ঘটনা সামান্য একটা ব্যাপার। চেয়ার-ছোড়াছুড়ির ব্যাপার। এটাকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করবেন না। আর এ ঘটনার জন্য আহতদের পক্ষ থেকে প্রয়োজনে হাতজোড় করে ক্ষমা চাওয়া হবে। কিন্তু সর্বপ্রথম আপনার (নুরুল হক) দলের কর্মীদের ঠান্ডা হতে বলেন।’
সংবাদ সম্মেলনের শুরুতেই বক্তব্য দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহত মোহাম্মদ আবীর আহমেদ শরীফ। গতকাল শহীদ মিনারের সমাবেশে তিনিও অংশ নেন। মোহাম্মদ আবীর আহমেদ বলেন, গতকাল শহীদ মিনারে ফারুক হাসানের ওপর কোনো হামলা হয়নি। তিনি পড়ে গিয়ে হয়তো আহত হয়েছেন। গণ অধিকার পরিষদ প্রচার চালাচ্ছে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আহতরা নাকি গতকালের অনুষ্ঠানে ছুরি নিয়ে গেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বিভিন্ন পেজ থেকে বলা হচ্ছে, ‘আমরা নাকি সন্ত্রাসী। আমি বলতে চাই, ছাত্র-জনতা কোনো সন্ত্রাসী-গুণ্ডা নয়। ছাত্র-জনতা ২৪’–এর যোদ্ধা, ২৪’–এর বীর।’
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আহতদের একজন আব্দুর রহমান নিজেকে ছাত্র-অধিকার পরিষদের নারায়ণগঞ্জ মহানগরের সহসভাপতি পরিচয় দিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, গতকালের ঘটনাটি রাজনৈতিকভাবে দেখছে গণ-অধিকার পরিষদ। এখানে আমাদের একটাই পরিচয়, আমরা শুধুই ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আহত। এ ঘটনাটিকে রাজনৈতিকভাবে বিশ্লেষণ না করতে গণ অধিকার পরিষদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ফারুক হাসান ‘জাতীয় বিপ্লবী পরিষদ’ নামের নতুন একটি রাজনৈতিক দলের আয়োজনে শহীদ মিনারে আয়োজিত নাগরিক সমাবেশে বিশেষ অতিথি ছিলেন। সেখানে দেওয়া বক্তব্যে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর ‘বিপ্লবী সরকার’ না হওয়ার জন্য বিভিন্ন রাজনৈতিক দলকে অভিযুক্ত করার পাশাপাশি অন্তর্বর্তী সরকারের নানা সমালোচনা করেন তিনি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, ফারুক হাসান বক্তব্যের পর মঞ্চ ছাড়লে কয়েকজন ব্যক্তি তাঁর সঙ্গে তর্কে জড়ান এবং একপর্যায়ে তাঁর ওপর হামলা করা হয়। এ সময় সমাবেশস্থলের কয়েকটি চেয়ারও ভাঙচুর করেন ওই ব্যক্তিরা। এরপর ফারুককে ধাওয়া দিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল অভিমুখী সড়ক পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেও তাঁকে মারধর করা হয়।
হামলার পর একটি ভিডিও বার্তায় ফারুক হাসান বলেন, জাতীয় বিপ্লবী পরিষদের সমাবেশে তিনি তাঁর রাজনৈতিক বক্তব্য দিয়েছেন। সেখানে ছাত্রদলের ‘সন্ত্রাসীরা’ উপস্থিত ছিল। সমাবেশে তাঁর বক্তব্যে ক্ষুব্ধ হয়ে ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা তাঁর ওপর অতর্কিত আক্রমণ করেছে। তাঁর মানিব্যাগ ও মুঠোফোনও ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে। ভিডিও বার্তায় কারও নাম উল্লেখ করেননি ফারুক হাসান।