Home » চিকিৎসার জন্য আগামীকাল লন্ডন যাচ্ছেন খালেদা জিয়া

চিকিৎসার জন্য আগামীকাল লন্ডন যাচ্ছেন খালেদা জিয়া

by radesk
0 comments

উন্নত চিকিৎসার জন্য বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া আগামীকাল মঙ্গলবার লন্ডন যাচ্ছেন। বিএনপির নেতারা জানিয়েছেন, সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে কাল রাত ১০টায় কাতারের আমিরের পাঠানো বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে তিনি ঢাকা ছেড়ে যাবেন। যুক্তরাজ্যে পৌঁছানোর পর সরাসরি তাঁকে লন্ডন ক্লিনিকে ভর্তি করা হবে। সেখানে কিছুদিন চিকিৎসার পর যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ডে জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয় হসপিটালে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নেওয়ার কথা রয়েছে।

বিএনপির চেয়ারপারসনের ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন গতকাল রোববার প্রথম আলোকে বলেন, চিকিৎসার জন্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বিদেশযাত্রার সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। গতকাল রাত সোয়া ৯টার দিকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ স্থায়ী কমিটির সদস্যরা তাঁর সঙ্গে গুলশানের বাসায় দেখা করেন। এরপর মির্জা ফখরুল সাংবাদিকদের বলেন, তাঁদের নেত্রী সুস্থ হয়ে দ্রুত দেশে ফিরবেন, এটি তাঁদের কামনা। বিএনপির মহাসচিব এ–ও বলেন, খালেদা জিয়া সুস্থ হয়ে দেশে ফিরে গণতন্ত্রের সংগ্রামে নেতৃত্ব দেবেন, এটি তাঁরা আশা করেন। বিএনপি যেন গণতন্ত্রের পক্ষে, দেশের মানুষের পক্ষে থাকে, তাঁদের সেই নির্দেশনা দিয়েছেন খালেদা জিয়া।

এর আগে গতকাল সন্ধ্যায় লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) প্রেসিডেন্ট কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করেন। এ ছাড়া গত বৃহস্পতিবার রাতে খালেদা জিয়ার সঙ্গে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান সস্ত্রীক সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। তিনিও তাঁর চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যের খোঁজখবর নেন।

৭৯ বছর বয়সী প্রবীণ এই রাজনীতিকের এবারের বিদেশযাত্রা উন্নত চিকিৎসার জন্য হলেও গত ৫ আগস্টের পটপরিবর্তন-পরবর্তী এ যাত্রা নিয়ে বিএনপির নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের মধ্যেও কৌতূহল রয়েছে। সাত বছর পর লন্ডনে খালেদা জিয়ার সঙ্গে বড় ছেলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেখা হবে। ছেলের বউ জোবাইদা রহমান ও নাতনি জাইমা রহমানও খালেদা জিয়ার অপেক্ষায় আছেন।

এমন পরিস্থিতিতে দল ও পরিবারের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে তাঁর বিদেশে চিকিসার অনুমতি চেয়ে আবেদন করা হয়। সরকার তাতে সাড়া দেয়নি।

জানা গেছে, খালেদা জিয়ার সঙ্গে তাঁর ছোট ছেলে প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী সৈয়দা শর্মিলা রহমান, চিকিৎসক, বিএনপি নেতারা, ব্যক্তিগত কর্মী ও দুজন গৃহকর্মী থাকবেন।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করছেন, মা-ছেলের দীর্ঘ কাঙ্ক্ষিত এই সাক্ষাতে দেশ, দল ছাড়াও ভবিষ্যতের রাজনীতি নিয়ে অনেক কথাবার্তা হতে পারে। সবার প্রত্যাশা, চিকিৎসা শেষে তিনি সুস্থ হয়ে দ্রুত দেশে ফিরবেন।

তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন থেকে লিভার সিরোসিস, কিডনি, হার্ট, ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিসসহ নানা শারীরিক অসুস্থতায় ভুগছেন। ২০১৮ সালে একটি দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত হয়ে কারাগারে যাওয়ার পর তাঁর অসুস্থতা বাড়ে। এর মধ্যে কয়েকবার তিনি জীবনমৃত্যুর সন্ধিক্ষণেও পড়েন। একাধিকবার তাঁর মৃত্যুর গুজবও ছড়ায়। এমন পরিস্থিতিতে দল ও পরিবারের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে তাঁর বিদেশে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে আবেদন করা হয়। সরকার তাতে সাড়া দেয়নি।

৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর রাষ্ট্রপতির এক আদেশে খালেদা জিয়া মুক্তি পান। এরপর দুর্নীতির যে দুটি মামলায় তিনি কারাবন্দী হয়েছিলেন, সেগুলোর রায় বাতিল করেন আদালত।

২০২৩ সালের অক্টোবরে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসা জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয় হসপিটালের তিন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে খালেদা জিয়ার শরীরে রক্তনালিতে সফল অস্ত্রোপচার হয়।

খালেদা জিয়ার চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত খালেদা জিয়ার লিভার প্রতিস্থাপন খুব জরুরি হয়ে পড়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, লিভার প্রতিস্থাপনের পর পুরো চিকিৎসায় কয়েক মাস লেগে যেতে পারে। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, চিকিৎসা শেষ হলে বিএনপির চেয়ারপারসন আবার লন্ডনে যাবেন। সেখান থেকে সৌদি আরবে পবিত্র ওমরাহ পালন করে তারপর দেশে ফিরতে পারেন।

খালেদা জিয়ার বিদেশযাত্রা ও এর দিন-তারিখ নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরে আলোচনা চলছিল। একাধিকবার তারিখ পরিবর্তন হয়েছে। খালেদা জিয়াসহ সফরসঙ্গীদের কারও কারও ভিসা-সংক্রান্ত জটিলতাও ছিল। শেষে ৭ জানুয়ারি চূড়ান্ত হয় এবং সে অনুযায়ী সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়। তিনি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও সৌদি আরবের ভিসা নিয়েছেন। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দুই মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি কারাগারে যান খালেদা জিয়া। ২০২০ সালের মার্চে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে তৎকালীন সরকারের নির্বাহী আদেশে শর্তসাপেক্ষে সাময়িক মুক্তি পান তিনি। মূলত সাময়িক কারামুক্তির পর থেকেই খালেদা জিয়া বিদেশে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁর পরিবার এবং দল থেকে একাধিকবার দাবি জানানো হচ্ছিল।

২০২৩ সালের অক্টোবরে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসা জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয় হসপিটালের তিন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে খালেদা জিয়ার শরীরে রক্তনালিতে সফল অস্ত্রোপচার হয়। পরে খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ড যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই হাসপাতালেই লিভার প্রতিস্থাপনের পরামর্শ দেয়।

You may also like

Leave a Comment

Rajneeti Ajkal is a leading news portal dedicated to providing comprehensive coverage of news, current affairs, political analysis, and the contemporary landscape of Bangladesh.

Rajneeti Ajkal, A Media Company – All Right Reserved. Designed and Developed by Rajneeti Ajkal