ছাত্র-জনতার জুলাই বিপ্লবের প্রথম সারিতে যাঁরা নেতৃত্ব দিয়েছেন, তাঁদের বাদ দিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাতক্ষীরা জেলার আহ্বায়ক কমিটি গঠন করার অভিযোগ উঠেছে। আজ শনিবার সংবাদ সম্মেলন করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একাংশ এ অভিযোগ করে। ওই সংবাদ সম্মেলন থেকে নতুন এই কমিটি বাতিলেরও দাবি জানানো হয়।
আজ বেলা ১১টায় সাতক্ষীরা শহরের শহীদ আসিফ চত্বরে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এ সময় নতুন কমিটি থেকে নয়জন পদত্যাগ করেছেন বলে দাবি করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়েন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক মো. ইমরান হোসেন।
ইমরান হোসেন বলেন, ‘সাতক্ষীরায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের যে কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে, সেই কমিটি গঠনে স্বজনপ্রীতি, আর্থিক লেনদেন এবং যোগ্য ব্যক্তিদের অবমূল্যায়ন করা হয়েছে। দলছুট, অনুপ্রবেশকারী, বহিরাগত ও আন্দোলনে যাদের কোনো ভূমিকা ছিল না, তাদের নিয়ে এই কমিটি গঠন করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় কমিটির প্রতি সম্মান রেখে আমরা তাদেরকে হুঁশিয়ারি করে বলে দিতে চাই, আপনারা ঢাকায় বসে কমিটি করেছেন, আপনাদের উচিত ছিল সাতক্ষীরায় যারা নেতৃত্বে ছিল, তারাসহ সবার সঙ্গে কথা বলে সমন্বয় করে একটি বৈষম্যহীন কমিটি করা।’
অপর সমন্বয়ক বখতিয়ার হোসেন বলেন, বর্তমানে সাতক্ষীরা জেলায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের যে কমিটি দেওয়া হয়েছে, সেটি একটি ভিত্তি ছাড়া ভবন মাত্র। স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে প্রকৃত ত্যাগীদের অবমূল্যায়ন করে পকেট কমিটি করা হয়েছে। যারা সামনের সারিতে থেকে এই আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিল, তাদের অধিকাংশকে বাদ দিয়ে এই কমিটি দেওয়া হয়েছে। তাই এই পকেট কমিটিকে প্রত্যাখ্যান করা হচ্ছে।
বখতিয়ার হোসেন আরও বলেন, নতুন কমিটি গঠনে অনিয়ম করা হয়েছে। এই কারণে নতুন কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ছায়েম রহমান সিয়াম, সদস্য এ এইচ রিফাত, নাহিদ হোসেন, জালাল, মুশফিকুর রহমান, সাকিব হাসান, মেহেদি ও ইখতিয়ার উদ্দিন। তিনি সাতক্ষীরা জেলার এই কমিটি বাতিল করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যাঁরা প্রথম সারিতে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন, তাঁদের সবাইকে নিয়ে একটি নিরপেক্ষ কমিটি করার জোর দাবি জানান।
সংবাদ সম্মেলনে এ এইচ রিফাত, সায়েম রহমান, মাসকুরা পারভীন, বখতিয়ার উদ্দিন, মোল্লা মোহাম্মদ সাহাজুদ্দিন, মো. তানজিদুর রহমান, সাকিব হাসান, রাকিব হাসান, মোমিনুর রহমান, তুহিন হোসেন, মিজান রহমান, আনারুল ইসলাম, সামিউজ্জামান, মোস্তাফিজুর রহমান, ইব্রাহিম খলিল, মেহেদী হাসান, তারিক ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
গত ২৮ ডিসেম্বর সাতক্ষীরা জেলার আহ্বায়ক কমিটি অনুমোদন করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ ও সদস্যসচিব আরিফ সোহেল। বৃহস্পতিবার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে সাতক্ষীরা ও বাগেরহাট জেলার কমিটি প্রকাশ করা হয়।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাতক্ষীরা জেলার ১৬৯ সদস্যের কমিটিতে আরাফাত হোসাইনকে আহ্বায়ক, সুহাইল মাহদীনকে সদস্যসচিব, আল শাহরিয়ারকে মুখ্য সংগঠক ও মোহেনী পারভীনকে মুখপাত্র করা হয়েছে। তাঁরা চারজনই সাতক্ষীরা সদরের বাসিন্দা। এই কমিটিতে ১৪ জনকে যুগ্ম আহ্বায়ক, ১৩ জনকে যুগ্ম সদস্যসচিব, ১৬ জনকে সংগঠক এবং ১২২ জনকে সদস্য করা হয়েছে।
জানতে চাইলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাতক্ষীরা জেলা কমিটির আহ্বায়ক আরাফাত হোসাইন বলেন, কমিটি নিয়ে একটা ক্ষুদ্র অংশের অসন্তোষ রয়েছে। কেউ তাঁর কাঙ্ক্ষিত পদ পাননি। আবার কেউ কমিটিতে আসতে পারেননি। তাঁদের মধ্য থেকে একটা অংশ সংবাদ সম্মেলন করেছে।
নতুন কমিটির নয়জনের পদত্যাগের বিষয়ে জানতে চাইলে আরাফাত হোসাইন বলেন, তিনজনের নাম শুনেছেন তিনি। অন্য যাঁদের নাম বলা হচ্ছে, তাঁদের অধিকাংশই কমিটিতে নেই।