আমাকে জেল বা সাজার ভয় দেখিয়ে কোন লাভ নেই। আমি মাথা নত করবো না। জনগণের অধিকার ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার দাবি থেকে পিছু হটবো না।-বলেছিলেন বাংলাদেশের ইতিহাসের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া।
২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকার বকশিবাজারস্থ আলিয়া মাদ্রাসায় স্থাপিত বিশেষ আদালত বেগম খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছর সশ্রম কারাদন্ড দেয়। এরপর গণমাধ্যমের সামনে এসে তিনি বলেন, আপনাদের খালেদা জিয়া কোন অন্যায় করেনি। ন্যায়বিচার হলে আমার কিছুই হবে না। আর যদি ক্ষমতাসীন মহলকে তুষ্ট করার জন্য রায় হয় তা কলঙ্কের ইতিহাস হয়ে থাকবে। দেশবাসীকে ছেড়ে কোথাও যাবো না আমি। আমি আপনাদের সাথেই আছি, আপনাদের সাথেই থাকবো।
৮ ফেব্রুয়ারির রায়ের পর ঐদিন থেকেই বেগম জিয়া নাজিম উদ্দিন রোডস্থ পুরাতন কারাগারে নির্জন কারাবাস ভোগ করছেন। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলাটির ইতিহাস যারা জানেন তারা স্বীকার করবেন যে, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেই ২০০৮ সালের ৩ জুন তৎকালীন ক্ষমতাসীন তথাকথিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার এই মামলাটি দায়ের করে।
বিগত চার দশকের রাজনৈতিক জীবনে বেগম খালেদা জিয়া অনেকবার নিপীড়ন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। ২০০৭ সালের ৩ সেপ্টেম্বর তত্ত্বাবধায়ক সরকার তাকে গ্রেফতার করে। ২০০৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টের আদেশে মুক্ত হন খালেদা জিয়া। অনুরূপভাবে তারেক রহমানও কারা নির্যাতনের পর হাইকোর্টের আদেশে চিকিৎসার জন্য ব্রিটেনে যান।
এর আগে ১৯৮৩ সালের ২৮ নভেম্বর, ১৯৮৪ সালের ৩ মে এবং ১৯৮৭ সালের ১১ নভেম্বর আটক হন তিনি। এরশাদবিরোধী আন্দোলনের কিছু সময় তাকে একরকম গৃহবন্দী করা হয়। বেগম খালেদা জিয়ার বিগত প্রায় চার দশকের রাজনীতিতে প্রতিবেশী বা কোনো পরাশক্তির সাথে আপোষ করেননি। তাই বাংলাদেশের আপামর জনগণ তাকে স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতীক বলেই বিশ্বাস করে। আর এ দুটো কারণেই বেগম খালেদা জিয়াকে শাসকগোষ্ঠীর সবচেয়ে বেশি ভয়। দল হিসেবে বিএনপিকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য স্বৈরাচার এরশাদ নিপীড়ন ও বিভাজনের নীতি অনুসরণ করেছিল। এসময় তিনি যে দৃঢ়তার পরিচয় দিয়েছিলেন সেজন্যই তিনি আপোষহীন।
ফ্যাসিস্ট আওয়ামী শাসন আমলের ১৭ বছরে তিনি সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত হন। তাকে সেনানিবাসের বাসা থেকে অপমানজনকভাবে বের করে দেওয়া হয়। ২০১৩ সালের ২৯ ডিসেম্বর গুলশানের বাসায় তাকে অবরুদ্ধ করা হয়। ২০১৫ সালের ৫ জানুয়ারি তার গুলশানের কার্যালয়ের দুই পাশে বালু বোঝাই ট্রাক রেখে তাকে বন্দী করা হয়। সরকারবিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলন ব্যর্থ করে দেওয়ার জন্য এই ব্যবস্থা নেয় ফ্যাসিস্ট আওয়ামীলীগ।
খালেদা জিয়া এবং তার দল বিএনপির জনপ্রিয়তাই বেগম জিয়াকে এনে দিয়েছে নির্যাতনের দীর্ঘ ও দূর্গম পথ। দীর্ঘ ৪০ বছরের রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে তাকে কখনো বেঁফাস কথা বলতে দেখা যায়নি। ২০১৮ সালে নির্বাচনে আনার জন্য বিএনপি নেতা-কর্মীদের গণ গ্রেফতার, শত হামালা-মামলা দেওয়া হয়। এরপরেও বিএনপি নির্বাচনে আসেনি।
এত নিপীড়নের পরও বেগম খালেদা জিয়া এই বয়সে এখনো অনড় সুদৃঢ় এবং অটল রয়েছেন। যদি তিনি েআপোষ করতেন তাহলে কী হতো? তিনি এপর্যন্ত যা যা হারিয়েছেন তার কিছুই হয়তো হারাতে হতো না। তবুও তিনি আপোষহীন, বাংলার প্রাণ। আপোষহীন হিসেবেই তিনি গণমানুষের হৃদয়ে চির অম্লান।