যুক্তরাজ্যের ক্ষমতাসীন লেবার পার্টির মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিক নিজে ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগের বিষয়ে তাঁর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন দেশটির মন্ত্রিপরিষদ অফিসের কর্মকর্তারা।
টিউলিপ সিদ্দিক যুক্তরাজ্যের ‘সিটি’ মন্ত্রী (সিটি মিনিস্টার)। একটি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণসংক্রান্ত চুক্তির মাধ্যমে টিউলিপ সিদ্দিক ও তাঁর পরিবারের চার সদস্য চার বিলিয়ন পাউন্ড আত্মসাৎ করেছেন—এমন অভিযোগের বিষয়ে বাংলাদেশে অনুসন্ধান চলছে।
গতকাল রোববার এ বিষয় জানাজানি হয় যে অভিযোগের বিষয়ে যুক্তরাজ্যের মন্ত্রিপরিষদ অফিসের শুদ্ধতা ও নীতিসংক্রান্ত দল টিউলিপ সিদ্দিককে প্রশ্ন করেছেন।
টিউলিপ সিদ্দিককে বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কর্মকর্তারা জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারেন—এ বিষয় প্রকাশ হওয়ার পর তাঁকে যুক্তরাজ্যের মন্ত্রিপরিষদ অফিসের কর্মকর্তারা প্রশ্ন করলেন।
দুদক গত সপ্তাহে টিউলিপ সিদ্দিক (৪২), তাঁর মা শেখ রেহানা (৬৯) ও খালা শেখ হাসিনার (৭৭) বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান শুরু করেছে।
শেখ হাসিনা বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী। তিনি ১৫ বছর প্রধানমন্ত্রীর পদে থাকার পর গত আগস্টে ক্ষমতাচ্যুত হন।
বাংলাদেশের হাইকোর্ট অভিযোগ অনুসন্ধানের জন্য দুদককে নির্দেশ দেন।
টিউলিপ সিদ্দিক ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা ভুয়া কোম্পানি ও মালয়েশিয়ার একাধিক ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্প থেকে চার বিলিয়ন পাউন্ড যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রে পাচার করেছেন বলে অভিযোগের (রিট) ওপর শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট এ আদেশ দেন।
অভিযোগ সামনে আসার পরিপ্রেক্ষিতে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার তাঁর মন্ত্রিসভার সদস্য টিউলিপ সিদ্দিকের পাশে দাঁড়িয়েছেন।
সম্প্রতি বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিট বলেছে, টিউলিপ সিদ্দিকের ওপর প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের আস্থা রয়েছে। টিউলিপ সিদ্দিক তাঁর দায়িত্ব চালিয়ে যাবেন।
দ্য টেলিগ্রাফ–এর প্রতিবেদনে বলা হয়, অর্থ আত্মসাতে সম্পৃক্ততার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন টিউলিপ সিদ্দিক। তিনি বলেছেন, অভিযোগের ব্যাপারে এখন পর্যন্ত কোনো কর্তৃপক্ষ তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেনি।
যুক্তরাজ্যের ক্ষমতাসীন লেবার পার্টির কর্মকর্তারা এসব অভিযোগকে ‘মিথ্যা’ বলে বর্ণনা করেছেন। তাঁরা বলেছেন, শেখ হাসিনার বিরোধীরা রাজনৈতিক কারণে এসব অভিযোগ এনেছেন।
যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যম মেইল অন সানডে জানিয়েছে, টিউলিপ সিদ্দিক ও অন্যদের সঙ্গে সম্পর্কিত ‘তথ্যগত প্রমাণ’ (ডকুমেন্টারি এভিডেন্স) সংগ্রহ করছেন পাঁচজন তদন্ত কর্মকর্তা। এ বিষয়ে টিউলিপ সিদ্দিকসহ অন্যদের বক্তব্য জানানোর জন্য তদন্তকারীরা আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে তাঁদের চিঠি দিতে পারেন।
পত্রিকাটি বলেছে, দুদক বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় অবস্থিত যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনের মাধ্যমে টিউলিপ সিদ্দিককে চিঠি পাঠাবে।
নাম প্রকাশ না করা কর্মকর্তারা পত্রিকাটিকে বলেছেন, অভিযোগের বিষয়ে ওই সব ব্যক্তির বক্তব্য পেলে তদন্ত কর্মকর্তারা বিষয়টি মূল্যায়ন করবেন যে তাঁদের বিরুদ্ধে প্রাথমিক তথ্যবিবরণী (এফআইআর) দায়ের করবেন কি না।
এফআইআর হলে টিউলিপ সিদ্দিক একজন সম্ভাব্য সন্দেহভাজন আসামি হবেন। আর এতে বাংলাদেশি পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তারের ক্ষমতা পাবে।
দুদকের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘তদন্ত অনুসন্ধান পর্যায়ে রয়েছে। তদন্ত শেষ হলে আমরা সবাইকে চিঠি পাঠাব। জবাব দেওয়ার জন্য তাঁকে (টিউলিপ সিদ্দিক) ডাকা হবে।’
দুদকের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) আক্তার হোসেন বলেছেন, তাঁরা যে চিঠি পাঠাবেন, তা টিউলিপ সিদ্দিক ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের ‘আত্মপক্ষ’ সমর্থনের সুযোগ দেবে।
মন্ত্রী হিসেবে টিউলিপ সিদ্দিকের যেসব দায়িত্ব রয়েছে, তার মধ্যে আছে যুক্তরাজ্যের আর্থিক খাতে দুর্নীতি-জালিয়াতি বন্ধ করা। তিনি যদি বাংলাদেশের তদন্ত কর্মকর্তাদের সহযোগিতা না করেন, তাহলে তা বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষকে যুক্তরাজ্য সরকারের দেওয়া সাম্প্রতিক প্রতিশ্রুতিকে ক্ষুণ্ন করবে। কারণ, শেখ হাসিনা সরকারের কর্মকর্তাদের চুরি করা বিপুল অর্থ পুনরুদ্ধারে সহায়তার ব্যাপারে সম্প্রতি বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যুক্তরাজ্য।
বাংলাদেশের দুর্নীতিবিরোধী তদন্তকে ‘সমর্থন’ দিতে গত অক্টোবরে যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সির (এনসিএ) তদন্তকারীরা বাংলাদেশ সফর করেছিলেন।