Home » যে জেলায় সবচেয়ে বেশি ক্রসফায়ারের অভিযোগ বিএনপির

যে জেলায় সবচেয়ে বেশি ক্রসফায়ারের অভিযোগ বিএনপির

by radesk
0 comments

দলের ২ হাজার ২৭৬ নেতা-কর্মীকে ‘ক্রসফায়ারে’ হত্যার অভিযোগ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দাখিল করেছে বিএনপি। একই সঙ্গে দলের কেন্দ্রীয় নেতা, সিলেট-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এম ইলিয়াস আলীসহ ১৫৩ জনকে গুমের অভিযোগ এনেছে দলটি। অভিযোগের সঙ্গে জেলাভিত্তিক ক্রসফায়ারের তালিকা তুলে ধরেছে বিএনপি। এ তালিকা অনুসারে সবচেয়ে বেশি ক্রসফায়ার হয়েছে চট্টগ্রাম বিভাগের জেলা কক্সবাজারে। এ জেলায় গত ১৬ বছর তথা ২০০৮ সাল থেকে গত ৫ আগস্ট পর্যন্ত ক্রসফায়ার হয়েছে ২০০টি। আর সবচেয়ে কম হয়েছে ময়মনসিংহ বিভাগের জেলা শেরপুরে। সেখানে মাত্র একটি হয়েছে।

এ তালিকা অনুযায়ী ঢাকা মহানগর ৫২, নারায়ণগঞ্জ ১৫, গাজীপুর ২১, ঢাকা জেলা ৮, নরসিংদী ১১, টাঙ্গাইল ১৫, মুন্সিগঞ্জ ২৬, ফরিদপুর ২৭, নেত্রকোনা ৫, ময়মনসিংহ ৫৪, জামালপুর ১১, শরীয়তপুর ৮, কিশোরগঞ্জ ৭, রাজবাড়ী ১১, সাতক্ষীরা ৫১, চুয়াডাঙ্গা ১৬, যশোর ৮৮, খুলনা ৫৪, মেহেরপুর ৩৭, মাগুরা ১১, নড়াইল ৮, বাগেরহাট ২৮, কুষ্টিয়া ৬২, ঝিনাইদহ ৫৯, নাটোর ২১, রাজশাহী জেলা ৩৩, রাজশাহী মহানগরী ৪৩, জয়পুরহাট ২৬, পাবনা ৮৮, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ২৯, সিরাজগঞ্জ ৪২, বগুড়া ১৭, ফেনী ৫৭, নোয়াখালী ৫৪, চট্টগ্রাম জেলা ১০৪, চট্টগ্রাম মহানগর ১৯, কক্সবাজার ২০০, খাগড়াছড়ি ৫, রাঙামাটি ৭, লক্ষ্মীপুর ৮৮, চাঁদপুর ৩৮, কুমিল্লা ৭৩, রংপুর ২৬, দিনাজপুর ১৮, গাইবান্ধা ২৮, নীলফামারী ৯, লালমনিরহাট ১০, ঠাকুরগাঁও ১৭, কুড়িগ্রাম ৬, সিলেট ১১, সুনামগঞ্জ ৪, হবিগঞ্জ ৬, মৌলভীবাজার ৫, পটুয়াখালী ৯, ভোলা ১২, বরগুনা ৮, বরিশাল ১১, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ২৮, ঝালকাঠি ২, মাদারীপুর ৬ ও শেরপুরে ১ জনকে ক্রসফায়ারে হত্যা করা হয়েছে।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সংশ্লিষ্ট আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে বৃহস্পতিবার (০৯ জানুয়ারি) ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন টিমের কাছে এমন অভিযোগ তুলে দিয়েছে বিএনপি। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের পক্ষে অভিযোগটি দায়ের করেন দলটির গুম, খুন তথ্য সংরক্ষণ সমন্বয়কের দায়িত্বে থাকা মো. সালাউদ্দিন খান। আইনজীবী নুরুল ইসলাম জাহিদ সঙ্গে ছিলেন।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সই করা গুমের অভিযোগে বলা হয়েছে, ২০০৮ থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত বিএনপির মতো একটি রাজনৈতিক দলকে ধ্বংস ও নিশ্চিহ্ন করার লক্ষ্যে অবৈধ আওয়ামী লীগ সরকারের প্রধান, আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কিছু অতি উৎসাহী সদস্য বিএনপির নেতা-কর্মী-সমর্থকদের অপহরণপূর্বক গুম করে হত্যা করেছেন এবং এখন পর্যন্ত অনেককেই গুম করে রাখা হয়েছে। বিএনপির তথ্যানুযায়ী এ পর্যন্ত মোট ১৫৩ জনকে গুম করে হত্যা ও অপহরণপূর্বক গুম করে রাখা হয়েছে। এ গুমসংক্রান্ত অনুসন্ধান ও তদন্ত করে মামলা গ্রহণের ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করা হলো।

ক্রসফায়ারের অভিযোগে বলা হয়েছে, ২০০৭ সালে তৎকালীন সেনাপ্রধান মইন উ আহমেদ গোয়েন্দা সংস্থা, পুলিশ বাহিনীর কিছু সদস্য এবং আনসার ও বিজিবির সহায়তায় বিএনপিসহ বিরোধী দলের ওপর দমন-নিপীড়ন-নির্যাতন করে ২০০৮ সালে শেখ হাসিনাকে অবৈধভাবে ক্ষমতায় আনেন। একইভাবে অবৈধ নির্বাচনের মাধ্যমে ২০১৪ সালেও আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে। ২০১৮ ও ২০২৪ সালেও অবৈধ নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় থাকে আওয়ামী লীগ।

অভিযোগে বলা হয়, এর প্রতিবাদে বিএনপি ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দল শান্তিপূর্ণ সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি অংশ গ্রহণ করলে মিথ্যা গায়েবি মামলা দিয়ে নির্যাতন করে বিনা পরোয়ানায় গ্রেপ্তার, অপহরণ, গুম, খুনসহ নির্যাতন করতে থাকে। নির্যাতন করে অনেককে দেশ ত্যাগ করতে ও বাড়ি ছাড়তে বাধ্য করে।

অভিযোগে আরও বলা হয়, ভোটারবিহীন অবৈধ আওয়ামী লীগ সরকারপ্রধানের নির্দেশে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অতি উৎসাহী কিছু সদস্য দমন-নিপীড়ন-নির্যাতন করে বিএনপিকে ধ্বংস, নিশ্চিহ্ন এবং দল থেকে লোকজন বিচ্ছিন্ন করার জন্য ক্রসফায়ারের নামে জঘন্যতম হত্যাকা  চালান। ক্রসফায়ারের নামে মোট ২ হাজার ২৭৬ জনকে হত্যা করা হয়েছে। আওয়ামী লীগসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও তাদের মূল উদ্দেশ্যই ছিল বিএনপিকে নিশ্চিহ্ন, ধ্বংস এবং ক্রসফায়ারের নামে হত্যা করে বিএনপির মতো একটি বড় দল থেকে লোকজন শূন্য করা এবং বিএনপি পরিবারের সদস্যদের দেশ থেকে বিতাড়িত করা, ক্রসফায়ারের নামে হত্যা করে দলের মধ্যে ভীতি সৃষ্টি করা, সমর্থক ও লোকজনদের দলীয় কাজ থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করা ও মেধাশূন্য করা।

অভিযোগে বলা হয়, আওয়ামী লীগ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এ জঘন্য কর্মকা  এবং মিথ্যা, বানোয়াট পরিকল্পনা সৃষ্টি করে ক্রসফায়ারের নামে ২ হাজার ২৭৬ জনকে হত্যার ন্যায়বিচারের লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার মাধ্যমে তদন্ত করে বিচারের ব্যবস্থা করার জন্য বিএনপির পক্ষ থেকে জোর দাবি করছি।

অভিযোগ প্রসঙ্গে পরে সালাউদ্দিন খান সাংবাদিকদের বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিএনপিকে নির্মূল করার উদ্দেশ্যে সারা দেশে দলটির নেতা-কর্মীদের ক্রসফায়ারে হত্যা করা হয়। এ ক্রসফায়ারের জেলা ও উপজেলাভিত্তিক তালিকা তৈরি করে জমা দিয়েছি। এ ছাড়া বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমেদ, সাবেক নেতা ইলিয়াস আলী, ওয়ার্ড কমিশনার চৌধুরী আলমসহ ১৫৩ জন কর্মীকে গুম করা হয়েছে। সে ঘটনায় আলাদা অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘এ ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রধান আসামি করা হয়েছে। এ ছাড়া অজ্ঞাত আরও শতাধিক ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে। এ অপকর্মে বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য যারা জড়িত ছিলেন, তাদের নামও এখানে উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু তদন্তের স্বার্থে কারও নাম উল্লেখ করছি না। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্বাক্ষরিত ২৪৫ পৃষ্ঠার ক্রসফায়ারের এবং ১৫৩ গুমের ঘটনায় ২০ পৃষ্ঠার অভিযোগ জমা দেওয়া হয়েছে।’

You may also like

Leave a Comment

Rajneeti Ajkal is a leading news portal dedicated to providing comprehensive coverage of news, current affairs, political analysis, and the contemporary landscape of Bangladesh.

Rajneeti Ajkal, A Media Company – All Right Reserved. Designed and Developed by Rajneeti Ajkal