জুলাই–আগস্টের পরের সময়টাকে একাত্তরের ভূমিকা নিয়ে জনগণের কাছে ক্ষমা চাওয়ার জন্য জামায়াতের সুযোগ হিসেবে বিবেচনা করছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, ‘এখন একটা সুযোগ এসেছে, এই সুযোগে তারা (জামায়াতে ইসলামী) একাত্তরের ভূমিকা নিয়ে জনগণের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করবে। সেটি না করে তারা একাত্তরে তাদের ভূমিকাকে জাস্টিফাই (জায়েজ) করার চেষ্টা করছে।’
রাজধানীতে জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে আজ বৃহস্পতিবার এক সমাবেশে হাফিজ উদ্দিন আহমদ এ কথা বলেন। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের উদ্যোগে ‘৭১-এর মুক্তিযুদ্ধই জাতির হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ অহংকার’ শীর্ষক ওই সমাবেশের আয়োজন করে।
হাফিজ উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘কিছুদিন আগে একটি বক্তব্যের প্রতি আমাদের দৃষ্টি আকর্ষিত হয়েছে। জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে এ দেশে দেশপ্রেমিক শুধু সামরিক বাহিনী ও জামায়াতে ইসলামী। এই বক্তব্যে আমরা আহত হয়েছি।’ তিনি বলেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছে। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে গড়ে ওঠা একটি বাহিনী। জনগণের বাহিনী হয়ে ৯ মাস যুদ্ধ করে দেশকে স্বাধীন করেছে। এই বাহিনী গড়ে তুলেছেন মেজর জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে তৎকালীন ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট এবং ইপিআরের সৈনিক-অফিসাররা। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কারও সনদের (সার্টিফিকেট) প্রয়োজন নেই। তারা দেশপ্রেমিক নাকি দেশপ্রেমিক নয়—তাদের একাত্তরের ভূমিকা, বর্তমান ভূমিকা, প্রতিটি ভূমিকা সাক্ষ্য দেয়। তারা সব সময় জনগণের পাশে ছিল এবং ভবিষ্যতেও জনগণের পাশে থাকবে। হাফিজ উদ্দিন বলেন, ‘তবে জামায়াতে ইসলামীর এই বক্তব্যে আমি অবাক হয়েছি। এখন একটা সুযোগ এসেছে, এই সুযোগে তারা (জামায়াতে ইসলামী) একাত্তরের ভূমিকা নিয়ে জনগণের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করবে। সেটি না করে তারা একাত্তরে তাদের ভূমিকাকে জাস্টিফাই (জায়েজ) করার চেষ্টা করছে এবং দেশপ্রেমিক হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য আরও বলেন, ‘আমরা তাদের (জামায়াত) এত দিন মিত্র হিসেবেই গণ্য করে এসেছি। তাদের ওপর যখন অত্যাচার–নির্যাতন চালিয়েছে ফ্যাসিস্ট বাহিনী, আমরা তাদের সহমর্মিতা জানিয়েছি। তাদের দলকে যখন বিলুপ্ত করে দেওয়া হয়েছে, “ধানের শীষ” দিয়ে তাদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার সুযোগ দিয়েছি। বেগম খালেদা জিয়া তাদের মন্ত্রিসভায় স্থান দিয়েছেন। আমরা অনেকে সেটি পছন্দ করিনি, দলের শৃঙ্খলার স্বার্থে মেনে নিয়েছি। তার বিনিময়ে কি তাদের এই উক্তি করা সঠিক হয়েছে? আমরা এ ধরনের উক্তি তাদের কাছে আশা করি না। এটি বর্তমানে যে ইস্পাত কঠিন ঐক্য গড়ে উঠেছে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে, তাদের মধ্যে ফাটল ধরতে পারে। আশা করি, এ ব্যাপারে তারা (জামায়াত) ভবিষ্যতে আরও যত্নবান হবেন।’
একটি মহল গণ–অভ্যুত্থানকে স্বাধীনতার ওপরে স্থান দেওয়ার অপচেষ্টা করছে উল্লেখ করে হাফিজ উদ্দিন আহমদ বলেন, স্বাধীনতাযুদ্ধের সঙ্গে, স্বাধীনতাসংগ্রামের সঙ্গে কোনো কিছুরই তুলনা হতে পারে না।
শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরত আনা প্রসঙ্গে হাফিজ উদ্দিন আহমদ বলেন, ভারত শেখ হাসিনার ভিসার মেয়াদ আরও বৃদ্ধি করেছে। অর্থাৎ শেখ হাসিনাকে তারা (ভারত) দেশে আশ্রয় দেবে এবং বাংলাদেশকে তারা আনস্টেবল (অস্থিতিশীল) করার জন্য, বাংলাদেশের মধ্যে নানা ধরনের নাশকতা সৃষ্টি করার জন্য ভারত তাকে (শেখ হাসিনা) ব্যবহার করবে। তিনি বলেন, ‘এটি করলে তাদের (ভারত) সঙ্গে আমাদের আর বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রাখার অবকাশ থাকবে না।’
একটি কিংস পার্টি গঠন হতে যাচ্ছে উল্লেখ করে হাফিজ উদ্দিন আহমদ বলেন, কিংস পার্টির ভবিষ্যৎ আগেও ভালো ছিল না, ভবিষ্যতেও ভালো হবে না। নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আগামী নির্বাচনের কথা বললেই অনেক উপদেষ্টার মুখ কালো হয়ে যায়। অথচ বিএনপি গত ১৬ বছর সংগ্রাম করেছে জনগণের ভোটাধিকার ফেরত আনার জন্য।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাতের সভাপতিত্বে সমাবেশে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক, আবদুস সালাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।