ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আওয়ামী লীগের এক নেতা ও জেলা গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) উপপরিদর্শকের বিরুদ্ধে জমি-ব্যবসার বিরোধ নিয়ে একাধিক মামলা দিয়ে কৃষক দলের দুই নেতা ও এক পরিবারের সদস্যদের হয়রানির অভিযোগ উঠেছে। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে করে এই অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান।
হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলার বিষয়ে গত ৯ ডিসেম্বর পুলিশ সুপার, ১০ ডিসেম্বর পুলিশের মহাপরিদর্শক ও ২৯ ডিসেম্বর জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন সরাইলের শাহবাজপুর ইউনিয়নের মাছুরপাড়ার বাসিন্দা মোস্তাফিজুর।
হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলার অভিযোগ এনে আজ দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাবে ওই সংবাদ সম্মেলন করেন মোস্তাফিজুর। তিনি শিক্ষানবিশ আইনজীবী। সংবাদ সম্মেলনে তাঁর বাবা সিরাজ মিয়া (৭১), বোন চিকিৎসক মাহমুদা বেগম, ভগ্নিপতি চিকিৎসক ফয়সাল আহমেদ, চাচাতো ভাই ফয়জুর রহমান ও উপজেলার শাহবাজপুর ইউনিয়ন কৃষক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক ইয়ার হোসেন, উপজেলা কৃষক দলের আহ্বায়ক মশিউর রহমান উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে মোস্তাফিজুর রহমান লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন। তিনি জানান, শাহবাজপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম ওরফে কালন, তাঁর ছেলে শহিদুল ইসলাম, শাহ আলমের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে তাঁর পরিবারের ব্যবসায়িক ও জমি–সংক্রান্ত বিরোধ চলছে। বিরোধের কারণে ডিবির এসআই আবু বক্কর ছিদ্দিক আওয়ামী লীগ নেতা নুরুল ইসলামের কথামতো গত ১১ নভেম্বর সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে মোস্তাফিজুরকে আটক করে। পরে তাঁকে ডিবি কার্যালয়ে নেওয়া হয়। ১২ ডিসেম্বর সরাইল থানায় গত ৪ আগস্টে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের কুট্টাপাড়া উচ্চবিদ্যালয়ের সামনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনা দেখিয়ে ২৪ জনকে আসামি করে বিস্ফোরক আইনে একটি মামলা করেন ডিবির এসআই আবু বক্কর ছিদ্দিক। মামলায় মোস্তাফিজুরকে প্রধান আসামি করা হয়। মামলায় তাঁকে ১২ নভেম্বর দুপুর শাহবাজপুর থেকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘১ থেকে ৭ আগস্ট পর্যন্ত অসুস্থতার কারণে ঢাকার ইবনে সিনা হাসপাতালে ভর্তি ছিলাম। ওই বিস্ফোরক মামলায় গত ২৪ নভেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা ও দায়রা জজ আমার জামিন আবেদন মঞ্জুর করেন। জামিনের আবেদন জেলা কারাগারে পৌঁছার পর একই কুচক্রী মহলের প্রভাবে সরাইল থানা থেকে গত ১১ নভেম্বরের একটি হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে কাগজপত্র পাঠান। পরে ২৩ ডিসেম্বর উচ্চ আদালত থেকে আমি জামিন নিয়ে কারাগার থেকে বের হই। আমার পরিবারের লোকজন রাজনৈতিক দল বা সংগঠনের সঙ্গে জড়িত না। আওয়ামী লীগ নেতা নুরুল ইসলাম ও ডিবির এসআই বিভিন্নভাবে আমার পরিবারকে অত্যাচার ও হয়রানি করছে। তারা ঢাকার উত্তরা পশ্চিম থানায় ৪ আগস্টের ঘটনায় গত ৪ জানুয়ারি দায়ের হওয়া একটি হত্যা মামলায় মোস্তাফিজুরের ৭১ বছর বয়সী বাবা সিরাজ মিয়াকে ৭১ নম্বর, কৃষক দলের নেতা ইয়ার হোসেনকে ৭২ নম্বর ও মোস্তাফিজুরকে ৭৩ নম্বর আসামি করা হয়। গ্রেপ্তারের পর আমাকে ছাত্রলীগ নেতা বানানো হয়। আমার পরিবার তাদের ভয়ে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে।’
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত সিরাজ মিয়া কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি বলেন, ‘আমি হৃদ্রোগের রোগী। আমার ওপেন হার্ট সার্জারি করা হয়েছে; কিন্তু আমাকেও মামলায় আসামি করা হয়েছে। নুরুল ইসলামের সঙ্গে আমার ইটভাটার ব্যবসা ছিল। তাঁর কাছে দুটি ইটভাটা ভাড়া দিয়েছি। প্রতি মাসে ৯ লাখ ১৫ হাজার টাকা করে দেওয়ার কথা। ২০২০ সালে অসুস্থ হওয়ার পর তাঁরা ভাড়া দেওয়া বন্ধ করে। চার বছর ধরে ভাড়া বন্ধ রাখায় নুরুলের কাছে আমি ৬৭ লাখ টাকা পাওনা।’
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত থাকা ইউনিয়ন কৃষক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক ইয়ার হোসেন বলেন, ‘মোস্তাফিজুরকে ছাড়ার জন্য এসআই আবু বক্কর ছিদ্দিক আমার কাছে পাঁচ লাখ টাকা উৎকোচ চেয়েছিল; কিন্তু আমরা কোনো টাকা দিইনি।’
তৎকালীন সরাইল থানায় কর্মরত বর্তমানে নবীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত (ওসি) আবুদর রাজ্জাক প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওই আসামি সম্পর্কে আমি কিছু জানি না। কোনো সংস্থা যখন কোনো মামলা নিয়ে আসে আমরা মামলা নিয়ে থাকি। ওই আসামিকে থানায় হাজির করা হয়নি। শুধু এজাহার আনা হয়েছিল।’
একাধিকবার চেষ্টা করেও মুঠোফোন বন্ধ থাকায় আওয়ামী লীগ নেতা নুরুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
সরাইল থানার ওসি রফিকুল হাসান বলেন, ২০২১ সালের ২৮ মার্চ হেফাজতের ইসলামের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় গত ১১ নভেম্বর একটি হত্যা মামলা হয়। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ওই ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ততায় মোস্তাফিজুরকে আসামি করে।
ডিবির এসআই আবু বক্কর ছিদ্দিক প্রথম আলোকে বলেন, ‘ডিবিতে যোগদানের পর আমাকে মামলার এজাহার দেওয়া হয়েছে এবং একজনকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দিয়েছে। আমি রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালনে এজাহার জমা দিয়েছি।’ টাকা চাওয়ার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এসব অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।