সিরাজগঞ্জের বেলকুচিতে ১১ বছর আগে ১৮ দলীয় জোটের মিছিলে হামলার ঘটনায় সাবেক মন্ত্রী আবদুল লতিফ বিশ্বাসের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। গতকাল রোববার রাতে যুবদলের স্থানীয় এক নেতা বাদী হয়ে মামলাটি করেন।
ওই মামলার ১ নম্বর আসামি আবদুল লতিফ বিশ্বাস। এ ছাড়া বেলকুচি পৌরসভার সাবেক মেয়র ও যুবলীগ নেতা সাজ্জাদুল হক, বেলকুচি ইউপির চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা সোলায়মান হোসেনসহ আওয়ামী লীগের ৫৬ জন নেতা-কর্মীকে আসামি করা হয়েছে। অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে আরও ১৫০ থেকে ২০০ জনকে।
এ বিষয়ে বেলকুচি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাকারিয়া হোসেন আজ সোমবার দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, মামলাটি নথিভুক্ত করার পর এ বিষয়ে পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে।
মামলার বাদী বেলকুচি পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আবদুল হালিম। এজাহারে বলা হয়েছে, ২০১৩ সালের ২৭ নভেম্বর দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে পৌর শহরের মুকন্দগাতী এলাকা থেকে ১৮ দলীয় জোটের একটি মিছিল সোনালী ব্যাংকের সামনের সড়কে পৌঁছালে হঠাৎ আসামিরা হামলা চালান ও বোমার বিস্ফোরণ ঘটান। এতে জোটের তিন নেতা-কর্মী আহত হন। ওই সময় মামলা করার পরিবেশ ছিল না। তাই অনেক বছর পর মামলা করা হলো।
গত ৪ আগস্ট চৌহালী উপজেলার এনায়েতপুর থানায় ১৫ জন পুলিশ হত্যার ঘটনায় পুলিশের করা একটি মামলায় অজ্ঞাতনামা আসামি হিসেবে সাবেক মন্ত্রী আবদুল লতিফ বিশ্বাসকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। গতকাল সন্ধ্যায় তাঁকে আদালতে হাজির করা হলে বিচারক শুনানি শেষে তাঁকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এর আগে গতকাল দুপুরে বেলকুচি পৌর এলাকার কামারপাড়া নিজ বাসা থেকে আবদুল লতিফকে আটক করে যৌথ বাহিনী। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাঁকে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
সিরাজগঞ্জের পুলিশ সুপার ফারুক হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করে গতকাল সন্ধ্যা পৌনে সাতটার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, ৪ আগস্ট এনায়েতপুর থানায় ১৫ পুলিশ হত্যার ঘটনায় ২৭ আগস্ট পুলিশের করা মামলায় অজ্ঞাত আসামি হিসেবে তাঁকে আদালতে পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া তাঁর বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে তেমন কিছু পাওয়া যায়নি।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় এনায়েতপুর থানায় হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও ১৫ পুলিশ সদস্যকে হত্যার ঘটনায় ২৭ আগস্ট থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আবদুল মালেক বাদী হয়ে মামলা করেন। এতে আওয়ামী লীগের চার নেতাকে আসামি করা হয়। তাঁরা হলেন এনায়েতপুর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি আহমদ মোস্তফা খান (বাচ্চু), সাধারণ সম্পাদক আজগর আলী, শাহজাদপুর উপজেলার খুকনী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মুল্লুক চাঁন, বেলকুচি উপজেলার ভাঙ্গবাড়ি ইউপি চেয়ারম্যান জহুরুল ইসলাম ভূঁইয়া। এ ছাড়া অজ্ঞাতনামা আরও পাঁচ থেকে ছয় হাজার জনকে আসামি করা হয়েছে; ক্ষতির পরিমাণ উল্লেখ করা হয়েছে চার কোটি টাকা।
১৯৯৬ ও ২০০৮ সালে সিরাজগঞ্জ-৫ (বেলকুচি-চৌহালি) আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন লতিফ বিশ্বাস। ২০০৮ সালের ৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়লাভ করলে শেখ হাসিনার দ্বিতীয় মন্ত্রিসভায় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন তিনি। আবদুল লতিফ বিশ্বাস গত বছরের ৭ জানুয়ারির জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঈগল প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেন। ওই নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগ-সমর্থিত প্রার্থীর কাছে স্বল্প ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হন।