টিউলিপ সিদ্দিকের লন্ডনের ফ্ল্যাট নিয়ে অভিযোগ ওঠার পর লেবার নেতা স্যার কিয়ার স্টারমারের নৈতিক মানদণ্ড বিষয়ক উপদেষ্টা স্যার লরি ম্যাগনাসের কাছে এ বিষয়ে তদন্ত চালানোর দাবি জানানো হয়েছে।
টোরি এমপিরা বলছেন, ফ্ল্যাটটি টিউলিপের পরিবারের জন্য বাংলাদেশে তাঁর খালার রাজনৈতিক দলের একজন মিত্রের পক্ষ থেকে আসলেই উপহার হিসেবে দেওয়া হয়েছে কিনা, তা খতিয়ে দেখা উচিত।
টিউলিপের পদত্যাগের দাবি ক্রমান্বয়ে জোরালো হওয়ার মধ্যেই গত রোববার রাতে ডাউনিং স্ট্রিট জানিয়ে দিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী এখনো দুর্নীতি দমন বিষয়ক মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিকের প্রতি আস্থা রাখছেন।
মেইল অন সানডে পত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সিদ্দিক প্রথমে বলেছিলেন, উত্তর লন্ডনে অবস্থিত দুই বেডরুমের ফ্ল্যাটটি তাঁর বাবা-মা কিনেছিলেন। তিনি এমপি হওয়ার আগে সেখানে বসবাস করতেন।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ২০২২ সালে যখন প্রথমবার ওই ফ্ল্যাট (যেটির বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ৭ লাখ পাউন্ড) সম্পর্কে প্রশ্ন তোলা হয়, তখন সিদ্দিক আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন।
কিন্তু গত সপ্তাহে লেবার পার্টি তাদের সুর বদলে ফেলেছে। এখন তারা বলছে, ফ্ল্যাটটি আসলে টিউলিপের বাবা-মাকে তাঁদের এক ‘পরিচিতজন’ উপহার হিসেবে দিয়েছিলেন।
খবর বেরিয়েছে, ফ্ল্যাটটি আবদুল মোতালিফ নামের একজন বাংলাদেশি কিনেছিলেন যাঁর সঙ্গে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের যোগ রয়েছে।
টিউলিপের খালা শেখ হাসিনা ওয়াজেদ দলটির নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। তবে ২০২৪ সালের আগস্টে তাঁকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে উৎখাত করা হয়।
হান্টিংডনের টোরি এমপি বেন ওবিস-জেকটি এ বিষয়ে মন্তব্য করে বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে আমরা টিউলিপ সিদ্দিক এবং তাঁর সম্পত্তি নিয়ে বেশ কিছু বিতর্কিত তথ্য জেনেছি।
তাঁর পরিবারের জন্য বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা এসব সম্পত্তি উপহার হিসেবে দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।…এর চেয়েও গুরুতর বিষয় হলো, গত মাসে বাংলাদেশে একটি অর্থ আত্মসাতের তদন্তে তাঁর নাম উল্লেখ করা হয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে এটি পরিষ্কার যে, কিয়ার স্টারমারের দুর্নীতি বিরোধী মন্ত্রীর বিরুদ্ধে ওঠা এসব অভিযোগ ইনডিপেনডেন্ট অ্যাডভাইজার অন মিনিস্ট্রিয়াল স্ট্যান্ডার্স (নৈতিক মানদণ্ড বিষয়ক স্বাধীন উপদেষ্টা যা যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক মন্ত্রিসভার সদস্যদের আচরণ এবং মানদণ্ড পর্যবেক্ষণের জন্য নিয়োগ করা হয়) দ্বারা তদন্ত করা উচিত। কারণ তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলো যথেষ্ট গুরুতর এবং সেগুলো আরও ভালোভাবে যাচাই হওয়া প্রয়োজন।’
লেবার পার্টির ভেতরের একটি সূত্র গত সপ্তাহে ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে জানিয়েছে, টিউলিপ সিদ্দিকের বাবা-মা তাঁদের এক বন্ধুকে ‘জীবনের কঠিন সময়ে’ আর্থিক সহায়তা দিয়েছিলেন।
সেই বন্ধু পরবর্তীতে কৃতজ্ঞতা প্রকাশের জন্য তাঁর মালিকানাধীন একটি সম্পত্তি টিউলিপের নামে হস্তান্তর করেন।
টিউলিপের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র মেইল অন সানডেকে জানায়, ‘টিউলিপ আগে এই সম্পত্তি কীভাবে তার মালিকানায় এসেছে সে সম্পর্কে যে ধারণা করতেন, সে ধারণা এখন বদলেছে। যখনই তিনি এই ভুল বুঝতে পেরেছেন, তখনই তিনি আগের প্রশ্ন তোলা সাংবাদিককে বিষয়টি জানিয়ে দিয়েছেন।’
মেইল অন সানডের প্রতিবেদন অনুযায়ী, টিউলিপ ২০০৪ সালের নভেম্বর মাসে এই ফ্ল্যাটটির মালিক হন।
ওই সময় তিনি কিংস কলেজ লন্ডন থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি সম্পন্ন করেছিলেন। বর্তমানে তিনি ওই ফ্ল্যাট ভাড়া দিয়ে বছরে ১০,০০০ পাউন্ডের বেশি আয় করছেন যা সংসদীয় রেকর্ডে উল্লেখ রয়েছে।
টিউলিপ সিদ্দিক বর্তমানে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ইকোনমিক সেক্রেটারি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তাঁর এই দায়িত্বের মধ্যে আর্থিক সেবা খাতে দুর্নীতি মোকাবিলার বিষয়টিও অন্তর্ভুক্ত আছে।
টিউলিপের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র মেইল অন সানডেকে জানায়, ‘টিউলিপ আগে এই সম্পত্তি কীভাবে তার মালিকানায় এসেছে সে সম্পর্কে যে ধারণা করতেন, সে ধারণা এখন বদলেছে। যখনই তিনি এই ভুল বুঝতে পেরেছেন, তখনই তিনি আগের প্রশ্ন তোলা সাংবাদিককে বিষয়টি জানিয়ে দিয়েছেন।’
নৈতিক মানদণ্ড বিষয়ক স্বাধীন উপদেষ্টা লরি ম্যাগনাস অবশ্য এখনো এ বিষয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেননি। তাঁর মুখপাত্রও এ নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
- নিক গাটারিজ দ্য টেলিগ্রাফ-এর চিফ পলিটিক্যাল করেসপনডেন্ট।