বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক সংসদ সদস্য গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর সমাবেশ থেকে ফেরার পথে কর্মী-সমর্থকদের মারধর ও গুলি ছোড়ার অভিযোগ উঠেছে একই দলের জেলা কমিটির আহ্বায়ক গোলাম আকবর খোন্দকারের অনুসারীদের বিরুদ্ধে।
গতকাল শনিবার সন্ধ্যার দিকে চট্টগ্রাম–কাপ্তাই সড়কের রাউজানের বাগোয়ান ইউনিয়নের ব্রাহ্মণহাট বাজারে এ ঘটনা ঘটে। এতে আহত হন মো. শাহাদত হোসেন নামের এক শিক্ষার্থীসহ পাঁচজন বিএনপি কর্মী।
ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ একটি মোটরসাইকেল জব্দ করেছে। হামলাকারীরা ধাওয়া করলে ওই মোটরসাইকেল আরোহী আহত হন। তাঁকে হাসপাতালে নেওয়ার পর পুলিশ মোটরসাইকেলটি হেফাজতে নেয়। আহত পাঁচজনকে বিভিন্ন হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা ও হামলার শিকার বিএনপি কর্মীরা বলেন, গতকাল বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নোয়াপাড়া পথেরহাট চত্বরে বিএনপির গণসমাবেশে যোগ দিয়েছিলেন তাঁরা। সেখানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী। সমাবেশে কয়েক হাজার নেতা-কর্মী অংশ নেন। সমাবেশ শেষে নেতা-কর্মীদের অনেকে বিভিন্ন যানবাহনে করে যাওয়ার সময় ব্রাহ্মণহাটে হামলা ও গোলাগুলির মুখে পড়েন। সড়কের ওপর দাঁড়িয়ে অস্ত্রধারীরা গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর কর্মী–সমর্থকদের গাড়ি তল্লাশি করতে থাকে। পরিচিত যাকে পেয়েছে, তাকেই ধরে সমাবেশে কেন গেছে বলে মারধর করেছে প্রতিপক্ষের লোকজন।
সমাবেশ থেকে ফেরা মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম নামের এক প্রবাসী প্রথম আলাকে বলেন, সিএনজিচালিত অটোরিকশা করে বাড়ি ফেরার পথে ব্রাহ্মণহাটে একদল অস্ত্রধারী তাঁদের গাড়ি থামিয়ে তল্লাশি করে। তবে পরিচিত না হওয়ায় তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর অনুসারী উত্তর জেলা ছাত্রদল নেতা ছোটন আজম বলেন, গোলাম আকবর খোন্দকারের অনুসারীরা এ ঘটনায় জড়িত। হামলাকারীরা চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজ। তাঁর অভিযোগ, এ ঘটনার নেতৃত্ব দিয়েছেন সন্ত্রাসী আরাফাত মামুন।
তবে অভিযোগের বিষয়ে জানতে আরাফাত মামুনের মুঠোফোনে একাধিকবার চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। হামলার ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাইলে গোলাম আকবর খন্দকার বলেন, ‘কয়েক দিন আগে আমার শুভেচ্ছাতোরণ ভাঙচুর করে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছিল। এর জের ধরে গতকাল সমাবেশ থেকে ফেরার পথে ভাঙচুরকারীদের ধাওয়া করে কিছু কর্মী। এটুকু আমি শুনেছি। তবে এখানে তেমন বড় কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। এটা নিয়ে সংবাদ হওয়ার মতো কিছু হয়নি।’
রাউজানে বিএনপির দুই কেন্দ্রীয় নেতা গোলাম আকবর খোন্দকার ও গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর অনুসারীদের মধ্যে এলাকার নিয়ন্ত্রণ ও আধিপত্য বিস্তার নিয়ে সংঘর্ষ চলে আসছে। গত ৫ আগস্টের পর অন্তত ৩৫ বার মারামারি, হামলা, সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে অনুসারীদের মধ্যে। বিভিন্ন সময় দুই পক্ষের গোলাগুলির ঘটনায় পথচারীসহ উভয় পক্ষের লোকজন আহত হওয়ার ঘটনাও ঘটছে।
রাউজান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ কে এম শফিকুল আলম চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঘটনা শুনে পুলিশ সেখানে গেলে আক্রমণকারীরা পালিয়ে যায়। কয়েকজনকে মারধর করার কথা শুনেছি। তবে গোলাগুলির ঘটনা ঘটেনি। কয়েকটি পটকার আওয়াজ হয়েছে বলে খবর পেয়েছি। হামলার শিকার হয়ে আহত এক কলেজশিক্ষার্থীর মোটরসাইকেল ঘটনাস্থল থেকে নিয়ে পুলিশ হেফাজতে রাখা হয়েছে।’
টাকাপয়সা নিয়ে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীদের দলে ভেড়ানো হচ্ছে
সমাবেশে গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের (বিএনপির) কেউ কেউ টাকাপয়সা নিয়ে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীদের প্রশ্রয় দিয়ে দলে ভেড়াচ্ছেন। এসব কর্মকাণ্ড দলের জন্য বড় ক্ষতির কারণ হবে। দলের নেতা-কর্মীদের কালোকে কালো, সাদাকে সাদা বলতে হবে। সেই সাহস সবাইকে রাখতে হবে।’
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন নোয়াপাড়া ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি মুহাম্মদ হাবিব উল্লাহ। উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মুহাম্মদ জানে আলম ও জেলা ছাত্রদলের সহসম্পাদক ছোটন আজমের সঞ্চালনায় প্রধান বক্তা ছিলেন জেলা বিএনপির নেতা মুহাম্মদ জসিম উদ্দিন।
সমাবেশে গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী বলেন, এত দিন যে নৌকায় এ দেশের মানুষ চড়েছে, সেটি আওয়ামী লীগের নয়, ভারতের। আজ সেটি প্রমাণিত। সেই নৌকা এখন গিয়ে ভিড়েছে ভারতের দিল্লিতে।
সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন জেলা বিএনপির সদস্য আবু জাফর চৌধুরী, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আবুল বশর, নুরুল হুদা, উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক ফিরোজ আহমদ, কৃষি ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপক আবদুল মালেক, জেলা যুবদলের সহসভাপতি সাবের সুলতান, কাসেম রানা, নোয়াপাড়া ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নুরুল আবসার প্রমুখ।