Home » হলফনামার তথ্য যাচাই বাধ্যতামূলক করতে চায় সংস্কার কমিশন

হলফনামার তথ্য যাচাই বাধ্যতামূলক করতে চায় সংস্কার কমিশন

by radesk
0 comments

জাতীয় নির্বাচনের সময় হলফনামায় দেওয়া প্রার্থীর তথ্য যাচাই বাধ্যতামূলক করার সুপারিশ করতে পারে নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন। একই সঙ্গে প্রার্থীর বিদেশে সম্পদ থাকলে তারও বিবরণ দেওয়া বাধ্যতামূলক করা হতে পারে। এ জন্য হলফনামার ছকে পরিবর্তন আনার কথা ভাবা হচ্ছে।

নির্বাচনে প্রার্থী হতে মনোনয়নপত্রের সঙ্গে হলফনামা আকারে প্রার্থীর আট ধরনের তথ্য দিতে হয়। সেগুলো হলো শিক্ষাগত যোগ্যতা, বর্তমান এবং অতীতের ফৌজদারি মামলা–সংক্রান্ত তথ্য, পেশা, আয়ের উৎস, প্রার্থীর নিজের ও তাঁর ওপর নির্ভরশীলদের সম্পদ বিবরণী, অতীতে সংসদ সদস্য হয়ে থাকলে নির্বাচনের আগে দেওয়া প্রতিশ্রুতি কতটুকু অর্জন সম্ভব হয়েছে; তার তথ্য এবং প্রার্থীর ঋণসংক্রান্ত তথ্য।

নির্বাচনী আইন অনুযায়ী, এসব তথ্য দেওয়া বাধ্যতামূলক। হলফনামায় অসত্য তথ্য দেওয়া হলে প্রার্থিতা বাতিল করার ক্ষমতা আছে নির্বাচন কমিশনের। এ ছাড়া হলফনামায় দেওয়া তথ্য মিথ্যা বা ভুল প্রমাণিত হলে দণ্ডবিধি অনুযায়ী, প্রার্থীর তিন বছরের জেল ও জরিমানা করার বিধান আছে। তবে বাস্তবে হলফনামায় প্রার্থীরা এসব তথ্য দিলেও এগুলো নির্বাচন কমিশন যাচাই করে না।

নির্বাচন কমিশন (ইসি) সূত্র জানায়, মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের সময় মূলত প্রার্থীর ঋণসংক্রান্ত তথ্য যাচাই করে দেখা হয়। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের ঋণসংক্রান্ত প্রতিবেদন এবং বিভিন্ন ব্যাংকের প্রতিনিধিরা বাছাইয়ের সময় উপস্থিত থাকেন। এর বাইরে কারও তথ্য নিয়ে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ দেওয়া হলে কিছু ক্ষেত্রে তা যাচাই করা হয়। এ ছাড়া অন্য তথ্যগুলো, বিশেষ করে সম্পদের যে তথ্য প্রার্থীরা দেন, সেগুলো কখনো যাচাই করে দেখা হয় না।

নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন সূত্র জানায়, হলফনামার তথ্য যাচাই বাধ্যতামূলক করার বিষয়টি অংশীজনদের সঙ্গে বিভিন্ন মতবিনিময়ে উঠে এসেছে। নির্বাচনে রিটার্নিং ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করা কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময়েও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। সেখানে কর্মকর্তারা তথ্য যাচাইয়ে কিছু সীমাবদ্ধতার কথা তুলে ধরেন। তবে তাঁরা বলেছেন, নির্বাচনের তফসিলে যদি মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের জন্য সময় এখনকার চেয়ে আরও বেশি রাখা হয়, তাহলে সব না হলেও অনেক তথ্য যাচাই করা সম্ভব হবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সংস্কার কমিশন হলফনামার তথ্য যাচাইয়ের ব্যবস্থা করার সুপারিশ করতে চায়। এ ক্ষেত্রে মূলত সম্পদের হিসাব এবং জ্ঞাত আয়বহির্ভূত কোনো আয় আছে কি না, এসব যাচাই করাটা কঠিন। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংস্থাকে যুক্ত করে কীভাবে নির্বাচন কমিশন হলফনামার তথ্য যাচাইয়ের কাজটি করতে পারে, তা নিয়ে চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে।

এ ছাড়া প্রার্থীদের অনেকের দেশের বাইরেও সম্পদ থাকে। কিন্তু তাঁরা সেটা হলফনামায় সাধারণত উল্লেখ করেন না। হলফনামায় প্রার্থীরা দেশের অভ্যন্তরে থাকা স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের হিসাব দেন। সাবেক ভূমিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য সাইফুজ্জামান চৌধুরী এবং আরেক সাবেক সংসদ সদস্য আবদুস সোবহান গোলাপের দেশের বাইরে বিপুল সম্পদের তথ্যের কথা গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছিল; কিন্তু তাঁরা নির্বাচনী হলফনামায় বিদেশে থাকা সম্পদের তথ্য গোপন করেন। এটি নিয়ে নির্বাচন কমিশনও কোনো তদন্ত করেনি।

নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন সূত্র জানায়, হলফনামার তথ্য যাচাই বাধ্যতামূলক করার বিষয়টি অংশীজনদের সঙ্গে বিভিন্ন মতবিনিময়ে উঠে এসেছে। নির্বাচনে রিটার্নিং ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করা কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময়েও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়।

গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হওয়ার পর গত বছরের মার্চে সাইফুজ্জামান চৌধুরী সংবাদ সম্মেলন করে দেশের বাইরে তাঁর সম্পদ থাকার কথা স্বীকার করেন। নির্বাচনী হলফনামায় বিদেশে সম্পদ থাকার কথা গোপন করার বিষয়ে তিনি বলেছিলেন, হলফনামা পুরোপুরি বাংলাদেশের আয়কর রিটার্নের ওপর ভিত্তি করে দেওয়া হয়। এতে বিদেশে সম্পদের তথ্য দেওয়ার আলাদা কোনো ছক নেই। বাড়তি তথ্য কেন দিতে যাবেন।

নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন সূত্র জানায়, তাঁরা হলফনামার ছকে পরিবর্তন আনার বিষয়ে একমত হয়েছেন। হলফনামায় বিদেশে থাকা সম্পদের হিসাব দেওয়ার জন্য আলাদা একটি ছক করার প্রস্তাব করতে চায় কমিশন।

নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার প্রথম আলোকে বলেন, হলফনামার তথ্য যাচাই করা না হলে এগুলো দেওয়াটা অর্থহীন আনুষ্ঠানিকতা হয়ে থাকে। এগুলো যাচাইয়ে ব্যবস্থা করার বিষয়টি তাঁরা গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছেন। এ ছাড়া কোনো প্রার্থীর বিদেশে সম্পদ থাকলে সে সম্পদের হিসাব এবং উৎস আলাদাভাবে উল্লেখ থাকা উচিত। কারণ, এটা পাচার করা টাকা কি না, তা নির্ধারিত হওয়া দরকার।

হলফনামার সব তথ্য যাচাই করা সম্ভব কি না, এই প্রশ্নও অনেকে তুলেছেন। তবে নির্বাচন বিশেষজ্ঞ মো. আবদুল আলীম প্রথম আলোকে বলেন, যদি নির্বাচনের তফসিলে বাছাইয়ের সময় বাড়িয়ে দেওয়া হয় এবং বাংলাদেশ ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও দুর্নীতি দমন কমিশনকে কাজে লাগানো হয়, তাহলে হলফনামার তথ্য যাচাই করা সম্ভব। প্রয়োজনে প্রতিটি সংসদীয় আসনে এই কাজের জন্য একটি করে দল গঠন করা যেতে পারে।

You may also like

Leave a Comment

Rajneeti Ajkal is a leading news portal dedicated to providing comprehensive coverage of news, current affairs, political analysis, and the contemporary landscape of Bangladesh.

Rajneeti Ajkal, A Media Company – All Right Reserved. Designed and Developed by Rajneeti Ajkal