Home » অভ্যুত্থানে নিহত আলভীর বাবা বললেন, ‘এত রক্ত শুধু একটা নির্বাচনের জন্য দিইনি’

অভ্যুত্থানে নিহত আলভীর বাবা বললেন, ‘এত রক্ত শুধু একটা নির্বাচনের জন্য দিইনি’

by radesk
0 comments

শুধু একটি নির্বাচনের জন্য জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ ও আহত ব্যক্তিরা রক্ত দেয়নি। গণ-অভ্যুত্থানে নিহত শাহরিয়ার হাসান আলভীর বাবা আবুল হাসান এমন মন্তব্য করেছেন।

ফোরাম ফর বাংলাদেশ স্টাডিজের (এফবিএস) আয়োজনে ঐক্য, সংস্কার ও নির্বাচন নিয়ে দুই দিনব্যাপী জাতীয় সংলাপে এ কথা বলেন তিনি। জাতীয় ঐক্যের লক্ষ্যে ‘ঐক্য কোন পথে’ শীর্ষক এই সংলাপ আজ শুক্রবার সকালে রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটে শুরু হয়। সংলাপের উদ্বোধনী পর্ব সঞ্চালনা করেন পিআইবির মহাপরিচালক ফারুক ওয়াসিফ।

সংলাপে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের শহীদদের স্বজন ও আহত ব্যক্তিরা বলেন, সংস্কার ও নির্বাচনকে মুখোমুখি দাঁড় করানো হয়েছে। এ জন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে দায়ী করা হয়। একই সঙ্গে গণহত্যায় জড়িত পুলিশ সদস্যদের গ্রেপ্তার করার দাবি জানানো হয়।

সকালে শুরু হওয়া জাতীয় সংলাপের উদ্বোধন করেন জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে রাজধানীর ফার্মগেটে নিহত নাফিসের বাবা গোলাম রহমান। সংলাপে প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চ্যুয়ালি বক্তব্য দেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। এর আগে মঞ্চে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের নিহত ব্যক্তিদের স্বজন ও আহত ব্যক্তিদের মঞ্চে আমন্ত্রণ জানানো হয়। পরে নিহত ব্যক্তিদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

আবুল হাসান বক্তৃতায় ছেলের মৃত্যুর কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি বলেন, ছেলের জানাজা এলাকায় দিতে দেওয়া হয়নি। দুটো মসজিদে মরদেহের গোসল করাতে দেওয়া হয়নি। আবুল হাসান বলেন, ‘এত রক্ত শুধু একটা নির্বাচনের জন্য দিইনি।’ তিনি নিহত ব্যক্তিদের পরিবার ও আহত ব্যক্তিদের নিরাপত্তা দেওয়ার কথা বলেন।

জাতীয় সংলাপের শুরুতে কথা বলেন জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে গুলিবিদ্ধ ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী আবু বকর, নিহত ইমাম হোসেনের ভাই রবিউল ইসলাম, উত্তরা চব্বিশের সংগঠক মনিশা মাফরুহা, নিহত শাহরিয়ার হাসান আলভীর বাবা আবুল হাসান।

আবু বকর বলেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের চার মাসের মধ্যেই সংস্কার ও নির্বাচনকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ জন্য তিনি রাজনৈতিক দলগুলোকে দায়ী করেন। এটাকে জাতির জন্য ব্যর্থতা ও জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ ও আহত ব্যক্তিদের জন্য অপমানজনক বলে দাবি করেন আবু বকর।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে হতাহতের ঘটনায় আদৌ বিচার হবে কি না, প্রশ্ন তোলেন রবিউল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘একটি হত্যাকাণ্ডে একজন করে পুলিশ জড়িত থাকলে এক হাজার পুলিশ গ্রেপ্তার হতো। দুজন করে জড়িত থাকলে দুই হাজার পুলিশ গ্রেপ্তার হতো। কিন্তু গ্রেপ্তার হয়েছে ২৩ জন পুলিশ। হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছাত্রলীগের কতজন গ্রেপ্তার হয়েছে? তাহলে আমরা বিশ্বাস করব কীভাবে বিচার হবে?আপনারা সংস্কারের কথা বলেন, কিন্তু বিচারের কথা জোর দিয়ে বলেন না।’ এ সময় তিনি অভিযোগ করেন, ‘যাত্রাবাড়ীতে গণহত্যায় ডিএমপি কমিশনারের (নাম বলেননি) ভাগনে এডিসি জড়িত। তাঁকে গ্রেপ্তারের কথা বললেও হয়নি।’

নিহত পরিবার ও আহত ব্যক্তিদের সহায়তার বিষয়টি দ্রুত করার দাবি জানান মনিশা মাফরুহা। গোলাম রহমান তাঁর ছেলের নামে একটি রাস্তা ও মেট্রোরেলের স্টেশনের নামকরণের দাবি জানান।

রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, দেশের সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে আক্রমণের বিষয়ে একটা জাতীয় ঐক্য দেখা গেছে। এখন বাংলাদেশের শাসনব্যবস্থা কী হবে, সেই ঐক্য দরকার। গত ১৫-১৬ বছরে ব্যক্তির হাতে ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত ছিল। রাজনৈতিক দল, নাগরিক সমাজ ও জনগণকে ঐক্যের মাধ্যমে সংস্কারের পথে নিয়ে যাবে। তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন আনতে হবে। কারণ, আপনি যত ভালো সংবিধান তৈরি করেন না কেন, রাজনৈতিক সংস্কৃতি পরিবর্তন না হলে সেই সংবিধান আবারও ভাঙা হবে। প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের পাশাপাশি রাজনৈতিক সংস্কৃতি পরিবর্তনের জোর দিতে হবে।’

বাংলা একাডেমির চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক বলেন, ‘আমাদের জাতীয় জীবনের দুর্বলতা হচ্ছে রাজনীতি। এ দেশে অনেক ক্ষেত্রে উন্নতি সাধিত হয়েছে, কিন্তু রাজনীতিতে সেভাবে এগোতে পারি নাই।’ তিনি আরও বলেন, ‘আওয়ামী লীগের প্রতি মানুষের আস্থা–বিশ্বাস নেই। তারা যদি ভবিষ্যতে নিজেদের পুনর্গঠন করে সামনে আসে, তাহলে হয়তো মানুষ ভবিষ্যতে ভেবে দেখবে।’

অর্থনীতিবিদ ড. মুশতাক হুসাইন খান বলেন, ‘সংস্কারের মাধ্যমে শুধু আইনকানুন পরিবর্তন করলে হবে না। বাংলাদেশে একটি গোপন ক্ষমতা কাঠামো গড়ে উঠেছে। এ গোপন ক্ষমতার বিন্যাস ভাঙতে হবে। কারণ, আইন করা সহজ। কিন্তু ক্ষমতার কাঠামোর ভাঙা না হলে ওই আইন আবারও ভাঙা হবে। কাজটা এখনই করতে হবে। তা রাজনৈতিক দলগুলোকে সঙ্গে নিয়েই করতে হবে।’ তিনি রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্দেশে বলেন, ‘ক্ষমতার গোপন কাঠামো ভাঙতে না পারলে আপনারা ভালো কিছু চাইলেও তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না। কারণ, আপনার দলেরই এমপি, নেতারা তা ঠেকিয়ে দেবে।’

You may also like

Leave a Comment

Rajneeti Ajkal is a leading news portal dedicated to providing comprehensive coverage of news, current affairs, political analysis, and the contemporary landscape of Bangladesh.

Rajneeti Ajkal, A Media Company – All Right Reserved. Designed and Developed by Rajneeti Ajkal