Home » আড়ালে হাজার কোটির ই-কমার্স কেলেঙ্কারি

আড়ালে হাজার কোটির ই-কমার্স কেলেঙ্কারি

১৫ কোটি টাকা ফেরত দিয়েছে ইভ্যালি, ৪০ কোটি আলেশা মার্ট ♦ হিসাব মেলেনি দুই প্রতিষ্ঠানের ৬ হাজার কোটি টাকার ♦ আনুষ্ঠানিক কার্যক্রমে নেই কোনো প্রতিষ্ঠান

by radesk
0 comments

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ই-কমার্সের নামে গ্রাহকদের কাছ থেকে কয়েক হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার পর এখন আড়ালে চলে গেছে ইভ্যালি, আলেশা মার্ট, ই-অরেঞ্জের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো। এসব প্রতিষ্ঠানের না আছে কোনো আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম, না আছে শীর্ষ কর্তাদের কোনো হদিস। ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকদের অর্থ ফেরত দিতেও গড়িমসি করছে অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলো।

কেন্দ্রীয় ই-কমার্স সেলের হিসাবে দেখা গেছে, গত নভেম্বর পর্যন্ত দেশের সবচেয়ে বড় ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালি ১২ হাজার ৯৪০ জন গ্রাহককে মাত্র ১৫ কোটি টাকা ফেরত দিয়েছে। আলোচিত আরেক প্রতিষ্ঠান আলেশা মার্ট ২ হাজার ২৯৬ জন গ্রাহককে ফেরত দিয়েছে প্রায় ৪০ কোটি টাকা। নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ৩৫টি প্রতিষ্ঠানের কাছে তথ্য চেয়ে কিছু হিসাব নিতে সমর্থ হয়েছে, তবে বিপুল পরিমাণ অর্থ রয়ে গেছে হিসাবের বাইরে। শুধু ইভ্যালি ও আলেশা মার্টের সঙ্গে গ্রাহকের ৬ হাজার কোটি টাকার লেনদেনের হিসাব মেলেনি। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, আলেশা মার্টের গ্রাহকদের ২ হাজার কোটি টাকার বেশি লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেলেও টাকার হদিস মেলেনি। বিভিন্ন ব্যাংকে আলেশা মার্টের ৫৬টি হিসাবের সন্ধান পেয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক, যেসব হিসাবে গ্রাহকদের ২ হাজার কোটির বেশি অর্থ জমার তথ্য পাওয়া যায়। এর মধ্যে প্রতিষ্ঠানটি ১ হাজার ৯৯৯ কোটি টাকা তুলে নিয়েছে। হিসাবগুলোতে ছিল মাত্র ২ কোটি ৭ লাখ টাকা। আরেক ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালি শুধু মোবাইল ব্যাংকিংয়ে ৪ হাজার কোটি টাকার বেশি লেনদেন করেছে, যার ঠিকঠাক তথ্য মেলেনি।

কে কত টাকা ফেরত দিল : কেন্দ্রীয় ই-কমার্স সেলের তথ্যানুযায়ী, গত নভেম্বর পর্যন্ত ৬৫ হাজার ৮৭৯ জন গ্রাহক ৪২৩ কোটি ৪১ লাখ টাকা ফেরত পেয়েছেন। ১৫টি প্রতিষ্ঠান তাদের ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকদের টাকা ফেরত দিয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি অর্থ দিয়েছে কিউকম। প্রতিষ্ঠানটি ৪৪ হাজার ১৮ জন গ্রাহককে ৩৪৩ কোটি ১৫ লাখ টাকা ফেরত দিয়েছে। বাকি প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে বুমবুম, আনন্দবাজার, থলেডটকম, ধামাকা, আলিফওয়ার্ল্ড, বাংলাদেশডিল, সফেটিক, আদিয়ান মার্ট, সিরাজগঞ্জ শপের ফেরত দেওয়া অর্থের পরিমাণ কোটি টাকার নিচে। এর বাইরে দালালপ্লাস ২০ কোটি টাকা এবং শ্রেষ্ঠডটকম দেড় কোটি টাকা ফেরত দিয়েছে। তবে ই-কমার্স কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত বৃহৎ দুটি প্রতিষ্ঠান ইভ্যালি ও আলেশা মার্টের টাকা ফেরত দেওয়ার পরিমাণ প্রকৃত লেনদেনের তুলনায় একেবারেই কম। পেমেন্ট গেটওয়েতে আটকে থাকা টাকা থেকে এসব অর্থ পরিশোধ করা হচ্ছে। ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান নিজের তহবিল থেকে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকদের অর্থ ফেরত দিচ্ছে না।

শুধু টাকার হিসাব নয়, ই-কমার্স কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত অনেক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদেরও কোনো হদিস মিলছে না। কেউ গ্রেপ্তার হয়ে জেলে, আর কেউ জামিনে ছাড়া পেয়ে গা-ঢাকা দিয়েছেন। ক্ষমতার পালাবদল আর রাজনৈতিক টানাপোড়েনের সুযোগ নিয়ে কেলেঙ্কারির দায়ে অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর শীর্ষ কর্মকর্তারা দেশের বাইরে সটকে পড়ছেন বলেও জানা গেছে। অবশ্য ই-অরেঞ্জের পৃষ্ঠপোষক বনানী থানার পরিদর্শক সোহেল রানা বিগত সরকারের আমলেই দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান।

সূত্রগুলো আরও জানায়, বিগত সরকারের শেষদিকে জেল থেকে জামিনে মুক্ত হয়ে নতুন করে ব্যবসার উদ্যোগ নিয়েছিল ইভ্যালি। সরকারকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল ব্যবসা করে গ্রাহকের অর্থ ফেরত দেবে। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরও কয়েকদিন কার্যক্রম চালু রেখেছিল কেলেঙ্কারির দায়ে অভিযুক্ত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানটি। ইভ্যালির এমডি মোহাম্মদ রাসেল মাঝেমধ্যে ফেসবুকে ইভ্যালির পেজে বিভিন্ন পণ্যের প্রমোশনের বার্তা দিতেন। এখন তাকেও আর কোনো আনুষ্ঠানিক কার্যক্রমে দেখা যাচ্ছে না। এমনকি তার ফোন নম্বরটিও বন্ধ।

গতকাল ইভ্যালির ফেসবুক পেজে গিয়ে একটি পণ্যের প্রমোশন স্ট্যাটাসে আরিফুর রহমান ট্টুুল নামে এক গ্রাহক লিখেছেন, ‘রাসেল ভাই ২০২৫ সাল হয়ে গেল, আমাদের পূর্বের অর্ডারগুলো/টাকা ফেরত দেওয়ার কোনো শিডিউল করেছেন?’ ক্ষতিগ্রস্ত আরেক গ্রাহক মনিরুল ইসলামের কমেন্ট, ‘এরা কি নতুন কোনো চক্রান্ত করে ফেলেছে, পালাবে মনে হয়।’

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, ইভ্যালি একটি লিখিত পরিকল্পনায় জানিয়েছে, তারা ব্যবসা পরিচালনার মাধ্যমে ২০২৬ সালের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকদের অর্থ ফেরত দেবে। এখন পেমেন্ট গেটওয়েতে যে ২৫ কোটি টাকা আটকে ছিল, সেগুলোর গ্রাহকদের পাওনা পরিশোধ করা হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটির কাছে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকদের পাওনা টাকার সঠিক হিসাব মেলেনি। সে টাকা পরিশোধের উদ্যোগও চোখে পড়েনি।

বাংলাদেশ প্রতিদিনের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে জানতে গতকাল সন্ধ্যায় ইভ্যালির এমডি মোহাম্মদ রাসেলকে ফোন দিলেও তার ব্যক্তিগত মোবাইল নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়। হোয়াটসঅ্যাপে কল ধরেননি;  মেসেজ দেওয়ার পরও উত্তর দেননি।

You may also like

Leave a Comment

Rajneeti Ajkal is a leading news portal dedicated to providing comprehensive coverage of news, current affairs, political analysis, and the contemporary landscape of Bangladesh.

Rajneeti Ajkal, A Media Company – All Right Reserved. Designed and Developed by Rajneeti Ajkal