Home Politics সচিবালয়ে লাগা আগুন নেভাতে এত সময় কেন লাগল

সচিবালয়ে লাগা আগুন নেভাতে এত সময় কেন লাগল

by radesk
0 comments

সচিবালয়ের প্রধান ফটক দিয়ে ঢুকতে প্রথমেই পড়ে ৭ নম্বর ভবন। গতকাল বুধবার দিবাগত রাত ১টা ৫০ মিনিটে ভবনটিতে আগুন লাগে। ছয় ঘণ্টা পর আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৮টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে ফায়ার সার্ভিস।

আজ সকাল সাড়ে ৯টায় ৭ নম্বর ভবনের চারপাশে দেখা যায়, ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে জানালার ভাঙা গ্লাস। আগুনে ভবনের ছয় থেকে আটতলা পুড়েছে।

ভবনের চারদিকে ফায়ার সার্ভিসের ছিটানো পানি। কয়েকটি কবুতর মরে পড়ে আছে। ভবনের ভেতরে কাউকে ঢুকতে দিচ্ছে না আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

ফায়ার সার্ভিসের একাধিক সদস্য প্রথম আলোকে বলেন, আগুন নেভাতে গিয়ে তাঁদের পদে পদে প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়তে হয়েছে। সচিবালয়ের ফটক দিয়ে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ভেতরে ঢোকাতে বেশ বেগ পেতে হয়েছে।

কর্মকর্তারা বলেন, আগুন নেভানোর জন্য ফায়ার সার্ভিসের দুটি টার্নটেবল লেডার (টিটিএল) ভেতরে ঢুকতে পেরেছে। যদি আরও বেশি টিটিএল ঢুকতে পারত, তাহলে আরও আগে আগুন নেভানো সম্ভব হতো।

সচিবালয়ে ঢোকার মোট ফটক পাঁচটি। তবে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ঢোকার ফটক আছে মাত্র দুটি। এই দুই ফটক দিয়েও ফায়ার সার্ভিসের বড় গাড়ি ঢুকতে সমস্যা হয়েছে বলে জানান কর্মকর্তারা। তাঁরা বলেন, সচিবালয়ের ৪ নম্বর ফটক দিয়ে ঢুকতে গিয়ে ফায়ার সার্ভিসের একটি গাড়ি ভেঙে গেছে।

আগুন নেভানোর কাজ শেষে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি সচিবালয় থেকে বের করতেও বেশ সমস্যা হয়েছে বলে জানান কর্মকর্তারা। গাড়ি বের করতে গিয়ে দেয়ালের কয়েকটি জায়গা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ফায়ার সার্ভিসের একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, এর আগে বিভিন্ন সময় সচিবালয়ে ঢোকার ফটক সম্প্রসারণ করার কথা বলা হয়েছিল, কিন্তু কেউ কথা শোনেনি।

কর্মকর্তারা বলেন, আগুন ছড়িয়ে পড়ার একটি বড় কারণ হলো, মন্ত্রণালয়গুলো কাঠ দিয়ে সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ করেছে। এটি যখন করা হয়, তখন নিষেধ করা হয়েছিল। কিন্তু কাঠ দিয়েই সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ করা হয়। এ ছাড়া মন্ত্রণালয়ের প্রতিটি রুম ছিল বন্ধ। তালা ভেঙে, জানালা ভেঙে ভেতরে ঢুকতে হয়েছে।

আগুন নেভানোর কাজে জড়িত ফায়ার সার্ভিসের একাধিক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, অভিযান পরিচালনা করতে তাঁদের বেশ সমস্যা হয়েছে। যে কারণে আগুন নেভাতে সময় লেগেছে।

সকাল ১০টা থেকে পুরো ভবনের চারপাশ ঘুরে দেখেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, সমাজকল্যাণ উপদেষ্টা শারমীন মুরশিদসহ অন্যরা।

এ সময় ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ঢোকানোর সমস্যা নিয়ে আলোচনা হয়। তখন গণপূর্তসচিব হামিদুর রহমান খান বলেন, ৬ নম্বর ভবনের সামনের চলন্ত করিডর ভেঙে দেওয়া হবে।

সরেজমিন দেখা যায়, ৭ নম্বর ভবনে সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় রয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়। আগুনে মূলত ছয়, সাত ও আটতলা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. এহছানুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘অফিসের নথিপত্র, কম্পিউটার, আসবাব পুড়ে ছাই হয়ে গেছে বলে তিনি শুনেছেন। ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে একটি কমিটি গঠন করা হবে।’

ভবনের সামনে দাঁড়ানো অবস্থায় যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, তিনি ধারণা করছেন, বাজেটের এক্সেল শিটগুলো ফিরে পাওয়া কঠিন হবে। দপ্তরে তাঁর ব্যক্তিগত সার্টিফিকেট ছিল, তা আর ফিরে পাবেন না তিনি। প্রশাসন শাখার গুরুত্বপূর্ণ ফাইল ধ্বংস হয়ে গেছে বলে আশঙ্কা করছেন তিনি।

সচিবালয়ে কর্মরত এক কর্মচারী তাঁর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে ফোনে বলছিলেন, ‘স্যার, সব শেষ হয়ে গেল।’

You may also like

Leave a Comment

Rajneeti Ajkal is a leading news portal dedicated to providing comprehensive coverage of news, current affairs, political analysis, and the contemporary landscape of Bangladesh.

Rajneeti Ajkal, A Media Company – All Right Reserved. Designed and Developed by Rajneeti Ajkal