ব্রাহ্মণবাড়িয়া আখাউড়ায় পৃথক স্থান থেকে এক নারীর পুড়িয়ে ফেলা দেহ ও মাথা উদ্ধার করেছে পুলিশ। আজ মঙ্গলবার সকালে আখাউড়া দক্ষিণ ইউনিয়নের গাজীর বাজার এলাকা থেকে ওই নারীর পোড়া দেহ এবং বেলা তিনটার দিকে মাথা উদ্ধার করা হয়। ওই নারীর পরিচয় শনাক্ত হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত অভিযোগে ঘটনাস্থল থেকে একজনকে আটক করেছে পুলিশ।
নিহত নারীর নাম শারমিন বেগম ওরফে হরলুজা বেগম (৪৭)। তিনি উপজেলার হীরাপুর এলাকার মো. নুরুল ইসলামের (৬২) স্ত্রী। এই দম্পতির তিন মেয়ে আছে। আটক যুবকের নাম ফারহান রনি (২৮)। ফারহান আখাউড়া দক্ষিণ ইউনিয়ন শাখা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক শাহনেওয়াজ ভূঁইয়ার ছেলে। ফারহান এলাকায় মাদক চোরাকারবারের সঙ্গে জড়িত বলে জানা গেছে।
পুলিশ ও স্থানীয় লোকজন জানান, আটক ফারহান ভোরবেলায় ওই নারীকে ডেকে নিয়ে যান। তবে কী কারণে তাঁকে এখানে আনা হয় কিংবা কেন হত্যা করা হয়, এ বিষয়ে পুলিশ বিস্তারিত জানাতে পারেনি।
এলাকাবাসী ও প্রত্যক্ষদর্শী ব্যক্তিরা জানান, উপজেলার গাজীরবাজার এলাকার এক ব্যক্তির বাড়ি থেকে রাজহাঁস চুরি হয়। আজ সকাল সাতটার দিকে হাঁস খুঁজতে এসে শাহনেওয়াজ ভূঁইয়ার জমিতে পরিত্যক্ত টিনের ভাঙা ঘর থেকে ধোঁয়ার গন্ধ বের হতে দেখেন স্থানীয় এক ব্যক্তি। সেখানে থাকা শাহনেওয়াজের ছেলে ফারহান জানান, তিনি পাতা পোড়া দিয়েছেন। এ কথায় বিশ্বাস না হলে হাঁসের মালিক দুই ভাই মো. এনামুল ও মো. রোমান এবং তাঁদের চাচাতো ভাই মো. উবায়দুল ঘরের ভেতরে উঁকি দিয়ে দেখতে চান। সে সময় ফারহান ক্ষুব্ধ হয়ে তাঁদের মারার হুমকি দেন। এতে তাঁদের তিনজনের সন্দেহ বাড়ে। পরে তাঁরাসহ গ্রামের লোকজন গিয়ে গর্তে পুড়তে থাকা লাশ দেখতে পান। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে সকালে ওই নারীর পোড়া দেহ উদ্ধার করে। পুরো শরীর পুড়ে যাওয়ায় এবং সকালে উদ্ধার করা দেহে মাথা না থাকার কারণে প্রথমে লাশের লিঙ্গ নির্ধারণ করতে পারেনি পুলিশ। পোড়া হাতে চুড়ি থাকায় দেহটি প্রাথমিকভাবে নারীর বলে ধারণা করা হয়। দুপুরে মাথা উদ্ধার করার পর তাঁর পরিচয় নিশ্চিত করতে পেরেছে পুলিশ। সে সময় ঘটনাস্থল থেকে ফারহান রনিকে আটক করা হয়। আটক ওই যুবকের দেওয়া তথ্যমতে ঘটনাস্থল থেকে ২০০-৩০০ গজ দূরে পুকুরের পাশের একটি ফসলি জমি খনন করে মাটির নিচ থেকে মাথা উদ্ধার করে পুলিশ। পরে লাশটি শারমিন বেগমের বলে শনাক্ত করা হয়।
নিহত শারমিন বেগমের স্বামী নুরুল ইসলাম বলেন, ‘সকালে ফজরের আজান দিছে ফরে আমি বাড়ি থেইক্যা বের হইয়্যা গেছি গা। আমি যখন গেছি, তখন হে (স্ত্রী) ঘরে আছিল। কয়েকটা কুলা আনছিলাম। আমি বাজারে গেছিলাম কুলা বেচতে। ঘটনা হুইননা আইয়া পড়ছি। আমরার সাথে হের (ফারহান) কোনো ঝগড়াঝাঁটি নাই। হের বাপ-দাদারে চিনি, আমার হাতে বিয়া করাইছি। এই পুলাডারে (ফারহান রনি) কোলে কইরা মানুষ করছি।’
আখাউড়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শাহীনূর ইসলাম জানান, ওই নারীর দেহের বেশির ভাগ অংশ পুড়ে গেছে। পরে আটক যুবকের তথ্যমতে, মাথা উদ্ধার করে পরিচয় শনাক্ত করা হয়। কীভাবে হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে, তা জানার চেষ্টা চলছে। নিহত নারীর লাশ ময়নাতদন্তের জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।