কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাই কানুকে লাঞ্ছিত করার ঘটনায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কোনো নেতাকর্মী জড়িন নয় বলে দাবি করেছে দলটি। জামায়াতের পক্ষ থেকে সোমবার সন্ধ্যায় এক বিবৃতিতে এ দাবি করে তারা। তবে এ ঘটনায় তদন্ত ও জড়িতদের শাস্তি দাবি করেছে জামায়াতে ইসলামী।
মুক্তিযোদ্ধাকে লাঞ্ছনা করার ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, মুক্তিযোদ্ধারা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান।
জামায়াতে ইসলামী শুধু বীর মুক্তিযোদ্ধা নয়, দেশের সাধারণ কোনো নাগরিককেও হেনস্তা করা সমর্থন করে না। এই দুঃখজনক ঘটনার সাথে জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের হাতে সোপর্দ করার জন্য আমরা সরকারের নিকট জোর দাবি জানাচ্ছি।
কুমিল্লা জেলার (দক্ষিণ) প্রচার সেক্রেটারি মু. বেলাল হোসাইন স্বাক্ষরিত ওই বিবৃতিতে জামায়াত বীর মুক্তিযোদ্ধাকে লাঞ্ছিত করায় নিজের দুই সমর্থককে বহিষ্কার করেছে। তারা হলেন কুলিয়ারার মৃত আবদুল বারেকের ছেলে মু. আবুল হাশেম ও মৃত শফিকুর রহমানের ছেলে মু. ওহিদুর রহমান।
জামায়াতের দাবি, এরা সংগঠনের কোনো নেতা বা কর্মী পার্যায়ের কেউ নয়। তারা দলের সমর্থক হওয়া সত্ত্বেও দল থেকে তাদের বহিষ্কার করা হয়েছে।
বিবৃতি বলা হয়েছে, জামায়াতে ইসলামীর কোনো পর্যায়ের নেতা বা কর্মী আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া কোনোভাবেই সমর্থন করে না এবং প্রশ্রয় দেয় না। আমরা স্থানীয়ভাবে খোঁজ-খবর নিয়ে জেনেছি যে, জনাব আবদুল হাই কানু তার নিজ এলাকায় হত্যা মামলাসহ ৯টি মামলার আসামী।
আমরা মনে করি, এ বিষয়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিবেন। আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার অধিকার কারো নেই। আমরা ঘটনার সাথে জড়িত ঢাকায় অবস্থানকারী আবুল হাশেম ও দুবাই ফেরত অহিদুর রহমানের শাস্তি দাবি করছি এবং কোনো অবস্থাতেই দেশবাসীকে আইন নিজের হাতে তুলে না নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।
কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাই কানুর গলায় জুতার মালা পরিয়ে লাঞ্ছিত করে একদল দুর্বৃত্ত। রবিবার (২২ ডিসেম্বর) এ ঘটনা ঘটে।
রাতে এ ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল করা হয়।
১ মিনিট ৪৭ সেকেন্ডের ভাইরাল ওই ভিডিওতে দেখা গেছে, দুই ব্যক্তি জুতার মালা পরা অবস্থায় ওই বীর মুক্তিযোদ্ধাদের টানাহেঁচড়া করছেন। তাকে লাঞ্ছিত করা ব্যক্তিদের একজনই পুরো ঘটনার ভিডিও করেছেন। এ সময় ওই বীর মুক্তিযোদ্ধা বারবার তাকে ছেড়ে দেওয়ার আকুতি জানান। যিনি ভিডিও করছেন তিনি ওই বীর মুক্তিযোদ্ধাকে বলে ওঠেন, আপনি পুরো গ্রামের মানুষের কাছে মাফ চাইতে পারবেন। তখন ওই বীর মুক্তিযোদ্ধা দুই হাত তুলে বলেন, ‘আমি মাফ চাই। যে দুজন ওই মুক্তিযোদ্ধার দুই হাত ধরে টানাহেঁচড়া করছিলেন তাদের একজন বলে ওঠেন আপনি এলাকা থেকে কবে চলে যাবেন।’ লাঞ্ছিতকারীরা বারবার ওই মুক্তিযোদ্ধাকে এলাকা ছেড়ে চলে যেতে হুমকি দিতে থাকেন। কিন্তু ওই বীর মুক্তিযোদ্ধা বারবার লাঞ্ছিতকারীদের হাতে ধরে এলাকায় নিজ বাড়িতে থাকার আকুতি জানান।
কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা কৃষক লীগের সাবেক সহসভাপতি পদে আছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাই কানু। তিনি লুদিয়ারা গ্রামের বাসিন্দা। তার বিরুদ্ধ আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে এলাকাবাসীর ওপর নির্যাতনের অভিযোগ আছে।
লাঞ্ছিতকারীরা সবাই স্থানীয় জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মী বলে অভিযোগ কানুর পরিবারের। তার ছেলে বিপ্লব কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘কুলিয়ারা গ্রামের আব্দুল বারিকের ছেলে জামায়াত নেতা আবুল হাশেম মজুমদারের নেতৃত্বে আমার বাবাকে লাঞ্ছিত করেছে। ওখানে যারা ছিল সবাই জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মী।’
তার বাবা হাসপাতালে ভর্তি আছেন জানিয়ে বিপ্লব আরো বলেন, ‘আমার বাবা অপমান সইতে না পেরে অসুস্থ হয়ে যান। ফেনীর একটা হাসপাতালে ভর্তি আছেন। আমাদের এলাকায় থাকা নিরাপদ নয়, বারবার আমাকে বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি না করতে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। পরিবার নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় এলাকার বাইরে আছি।’