বাস্তুতন্ত্র, প্রকৃতি ও পরিবেশ অবস্থান সঠিক রেখে পার্বত্য চট্টগ্রামের টেকসই উন্নয়নে বাস্তবমূখী পরিবেশ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা। তিনি বলেন, ‘প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় পাহাড়ের পরিবেশকে সুন্দরভাবে কাজে লাগাতে হবে। প্রকল্পের উন্নয়নের নামে প্রকৃতি ও পরিবেশের কোনো বিরূপ কিছু না ঘটিয়ে পাহাড়ের ঝোপ-ঝাড়, বন-জঙ্গল ও প্রাণিকূলের পরিবেশকে অক্ষুণ্ন রেখে বাঁশ, বেত-ঝোপ ঝাড়ের ন্যায় বৃক্ষ রোপণ বাড়াতে হবে। পার্বত্য চট্টগ্রামের অপার সৌন্দর্য্যকে অক্ষুন্ন রাখতে হবে।’
রবিবার সচিবালয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা’র অফিস কক্ষে ইউএনডিপি’র ইন্টারন্যাশনাল প্রজেক্ট ম্যানেজার ইয়্যুগেস প্রধানাং-এর নেতৃত্বে দুই সদস্যের প্রতিনিধি দলের সৌজন্য সাক্ষাতে উপদেষ্টা এই আহবান জানান। এ সময় ইউএনডিপি’র ফরেস্ট এন্ড ওয়াটারসেড ব্যবস্থাপনার চিফ টেকনিক্যাল বিশেষজ্ঞ ড. রাম শর্মা, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব প্রদীপ কুমার মহোত্তম, এনডিসি, যুগ্মসচিব কংকন চাকমা ও উপদেষ্টার সহকারী একান্ত সচিব (সিনিয়র এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি) সুভাশীষ চাকমা উপস্থিত ছিলেন।
পার্বত্য চট্টগ্রামে ইউএনডিপি কর্তৃক প্রস্তাবিত ‘ইকোসিস্টেম রেস্টোরেশন এন্ড রেজিলিয়েন্ট ডেভেলপমেন্ট ইন সিএইচটি’ শীর্ষক প্রকল্পের টেকনিক্যাল এসিস্ট্যান্ট প্রজেক্ট প্রোপোজাল (টিএপিপি) প্রণয়নে পার্বত্য চট্টগ্রামের সংশ্লিষ্টদের অন্তর্ভুক্ত করার বিষয় এবং প্রকল্পে অন্যান্য বিষয়াবলী অন্তর্ভুক্ত নিয়ে প্রাথমিক দিক নির্দেশনামূলক আলোচনা ছিল এটি। এ বিষয়ে আগামি ২০২৫ সালের জানুয়ারি মাসের মাঝামাঝিতে আরেকটি সভা আহ্বান করার কথা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে প্রতিনিধি দলকে জানানো হয়েছে।
প্রস্তাবিত প্রকল্পের বিষয়ে উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা বলেন, পার্বত্য অঞ্চলের প্রকৃতি ও পরিবেশকে তার স্বকীয়তা বজায় রেখে ‘যেখানে যেমন, সেখানে তেমন’ উপায়ে সাজাতে হবে। পানির উৎস হলো পাহাড়। পার্বত্য চট্টগ্রামে পানির লেয়ার বিনষ্ট না করে ডিপ টিউবওয়েলের পরিবর্তে গ্রাউন্ড সারফেইস-এর পানি ব্যবহার করতে হবে। পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে এ প্রকল্পে সম্পৃক্ত রাখার জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি পরামর্শ দেন উপদেষ্টা।
পার্বত্য উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা বলেন, সমাজের গতিশীলতা আনতে আমাদের পার্বত্য চট্টগ্রামের শিক্ষা পদ্ধতিগুলোয় উদ্ভাবনী জ্ঞানকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে কোয়ালিটি এডুকেশন গড়ে তোলা জরুরি হয়ে পড়েছে। একটি টেকসই ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য উদ্ভাবনী শিক্ষার পদ্ধতিগুলি খুবই প্রয়োজন। কোয়ালিটি এডুকেশন পার্বত্য অঞ্চলের মানুষকে পৃথিবীর আধুনিক মানুষের সাথে চিন্তা চেতনার সমন্বয় করানো সম্ভব হবে। পরিবেশ রক্ষায় বাঁশ খুবই কার্যকরী উপাদান। কাপ্তাই লেক এর পানি সংরক্ষণ ও ব্যবহারে আমাদের আরও যত্নশীল হতে হবে। নদী-নালা-ঝিরির পানি সঠিক পদ্ধতিতে ধরে রাখা ও ব্যবহারে আরও উদ্ভাবনী প্রক্রিয়া আমাদের বের করতে হবে। আমাদেরকে পরিবেশ রক্ষায় খুব বেশি সচেতন হতে হবে। পার্বত্য অঞ্চলের মানুষের জীবন ও জীবিকার উন্নয়নে তুলা চাষ, ইক্ষু চাষ, বাঁশ চাষ, আম, কলা, আনারস চাষ, কফি ও কাজু বাদাম ফলন বেশি গুরুত্বপূর্ণ। পার্বত্য অঞ্চলের বৈরি ও প্রতিকূল পরিবেশের মধ্যেও দেশের টেকসই উন্নয়নে পার্বত্য অঞ্চলের মানুষ সমান অংশীদার হতে চায়।