যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে অধস্তন আদালতের অর্ধশতাধিক বিচারক ও বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট আবেদন করা হয়েছে।
সোমবার সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. আমিমুল এহসান জোবায়ের জনস্বার্থে এ রিট করেন। আইনসচিব, দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান, সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলসহ ছয়জনকে বিবাদী করা হয়েছে রিটে।
মঙ্গলবার বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর হাইকোর্ট বেঞ্চে আবেদনটির শুনানি হতে পারে বলে জানিয়েছেন রিটকারী আইনজীবী।
নির্দেশনা চাওয়ার পাশাপাশি রুল জারির আরজি জানানো হয়েছে রিটে। যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠা বিচারক ও কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় তদন্তের উদ্যোগ নিতে সংশ্লিষ্টদের নিষ্ক্রিয়তা কেন বেআইনি ও আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না এবং প্রয়োজনীয় তদন্তের উদ্যোগ নিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, মর্মে রুল চাওয়া হয়েছে।
আইনজীবী আমিমুল এহসান জোবায়ের কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘অভিযোগ ওঠা বিচারক ও কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করার অনুরোধ জানিয়ে বিবাদীদের আইনি নোটিশ পাঠিয়েছিলাম। সাড়া না পেয়ে রিট আবেদন করেছি।
জানা যায়, ‘দুদকের অনুসন্ধান/অবিশ্বাস্য সম্পদ অর্ধশত বিচারক-কর্মকর্তার’ শিরোনামে গত ১৪ অক্টোবর প্রতিবেদন প্রকাশ করে একটি জাতীয় দৈনিক। এতে বলা হয়েছে, ‘বিচার বিভাগের অর্ধশতাধিক কর্মকর্তার অবিশ্বাস্য সম্পদের তথ্য-প্রমাণ পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তাদের অনেকেই অবৈধ উপায়ে শত শত কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। কেউ কেউ আবার হাজার কোটি টাকার মালিক।
অনেকের আলিশান ফ্ল্যাট রয়েছে দেশে ও বিদেশে। কানাডার বেগমপাড়ায় বাড়ি কিনেছেন বেশ কয়েকজন। শত শত বিঘা জামির মালিকানা অর্জন করেছেন কয়েকজন। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) গোয়েন্দা শাখার গোপন অনুসন্ধানে বিচার বিভাগের ৫১ জনের দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়া গেছে। তাদের নামে-বেনামে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদের তথ্যও রয়েছে দুদকের কাছে।
দুদক সূত্রের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, শিগগিরই তাদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে অনুসন্ধান শুরু হবে। প্রতিবেদনে যাদের নাম উঠে এসেছে তারা হলেন সাবেক আইনসচিব গোলাম সরোয়ার, আইন মন্ত্রণালয়ের সাবেক যুগ্ম সচিব (বর্তমানে ওএসডি) বিকাশ কুমার সাহা, কুষ্টিয়ার নারী শিশু আদালতের বিচারক শেখ গোলাম মাহবুব, কিশোরগঞ্জ জেলা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মাহবুবুর রহমান সরকার, সিলেটের জেলা জজ মনির কামাল, মাগুরার অতিরিক্ত জেলা জজ মুশফিকুর ইসলাম, গাজীপুরের চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কাইসারুল ইসলাম, নরসিংদীর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোল্লা সাইফুল আলম, ময়মনসিংহের বিশেষ জজ ফারহানা ফেরদৌস, শেরপুর জেলার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের জজ কামরুন নাহার রুমি, ঢাকার অতিরিক্ত জেলা জজ শওকত হোসেন, সিরাজগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ এরফান উল্লাহ, হবিগঞ্জের জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুল আলম চৌধুরী, ঢাকা মহানগর আদালতের যুগ্ম দায়রা জজ তসরুজ্জামান, টাঙ্গাইলের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোস্তফা শাহরিয়ার খান।
এ ছাড়া বরগুনার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মশিউর রহমান খান, কুমিল্লার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক রেজাউল করিম চৌধুরী, রংপুরের জেলা জজ ফজলে খোদা মোহাম্মাদ নাজির, রাঙামাটির জেলা জজ শহীদুল ইসলাম, জামালপুরের জেলা জজ আহসানুল হক, ঢাকার বিশেষ জজ মাসুদ পারভেজ, সিলেটের যুগ্ম জেলা জজ মোহাম্মদ দিদার হোসাইন, রাঙামাটির অতিরিক্ত জেলা জজ তওহিদুল হক, রাজবাড়ীর যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ শাহিনূর রহমান, ফেনীর অতিরিক্ত জেলা জজ কেশব রায় চৌধুরী, বিচার বিভাগের কর্মকর্তা খুরশীদ আলম, আতিকুল ইসলাম, সুরুজ সরকার, আলী মনসুর, নোমান মইন উদ্দিন, সুব্রত মল্লিক, রকিবুল ইসলাম, হারুনুর রশীদ, তেহসিন ইফতেখার, ঢাকার যুগ্ম জজ জিএম নাজমুন শাহাদত, রংপুরের সিনিয়র সহকারী জজ কৃষ্ণ কমল রায়, ডা. এ বি এম মাহমুদুল হক, রুস্তম আলী, মামুনুর রশীদ, জুয়েল রানা, সাইফুর রহমান সিদ্দিকী, আব্বাস উদ্দিন, জিন্নাৎ জাহান ঝুনু, এনামুল হক বসুনিয়া, আ. ন. ম. ইলিয়াস, মোক্তাগীর আলম, মিল্টন হোসেন ও কনক বড়ুয়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতির মাধ্যমে অঢেল সম্পদ অর্জনের তথ্য দুদক পেয়েছে বলে উল্লেখ করা য়েছে প্রতিবেদনে।