নাটোরের সিংড়া উপজেলার বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক আনোয়ার হোসেন আনুর বিরুদ্ধে কেন সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না সে বিষয়ে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। আজ শনিবার সিংড়া উপজেলা বিএনপির জনসভায় কেন্দ্রীয় বিএনপি নেতা রুহুল কুদ্দুস তালুকদারের উপস্থিতিতে আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক তথ্য যোগাযোগ ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলকের শালিকা ডাক্তার ফারজানা রহমান দৃষ্টির উপস্থিতি নিয়ে এ কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়।
ডাক্তার ফারজানা রহমান দৃষ্টি সাবেক প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলকের চাচাতো শালিকা এবং সিংড়া উপজেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক আনোয়ার হোসেন আনুর ভাতিজি। সে হিসেবে আনোয়ার হোসেন আনু সাবেক প্রতিমন্ত্রী পলকের চাচা শ্বশুর।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, গতকাল শুক্রবার বিকালে সিংড়া কোর্ট মাঠে উপজেলা বিএনপি জনসভার আয়োজন করে। ওই জনসভায় সভাপতিত্ব করেন উপজেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক আনোয়ার ইসলাম আনু। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু।
ওই জনসভা মঞ্চে ডাক্তার ফারজানা রহমান দৃষ্টিকে দেখা যায়।
শোভা চলাকালে উপস্থাপক সিংড়া গোল ই আফরোজ কলেজের সাবেক ভিপি শামীম তার বক্তব্যে ডাক্তার ফারজানা রহমানকে আগামীর নেত্রী বলেও পরিচয় করিয়ে দেন। শোভা চলাকালে কোনো প্রতিক্রিয়া জানা না গেলেও সভাশেষে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ডাক্তার ফারজানা রহমান দৃষ্টির উপস্থিতি নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা দেখা যায়।
মেহেদী হাসান নামে একজন ফেসবুকে মন্তব্য করেন, আওয়ামী লীগের বেনিফিশিয়ারিরা এখন বিএনপির সভা মঞ্চে। এটা কী করে সম্ভব।
আগামী দিনের রাজনীতি তাহলে কি তারাই নিয়ন্ত্রণ করবেন।
বিএনপির একাংশের নেতাকর্মীরা অভিযোগ করেন, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দৃষ্টি তার দুলাভাইয়ের প্রভাব খাটিয়ে চলতেন। সিংড়ার একটি ক্লিনিকের পরিচালক সে। লাইসেন্সবিহীন ওই ক্লিনিকের বিরুদ্ধে নিউজ করতে গেলে তিনি সংবাদকর্মীদের দেখে নেওয়ার হুমকি দিতেন। ২০২০ সালে জয় বাংলা ইউথ অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন দৃষ্টি।
উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সে নামমাত্র ভাড়ায় ক্লিনিক করেছেন। দলীয় সুবিধাভোগ করা এমন একজন নারী মঞ্চে উঠার সুযোগ পায় কীভাবে। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক।
দৃষ্টির স্টেজে উপস্থিতি নিয়ে উপজেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক ও তার চাচা আনোয়ারুল ইসলাম আনু বলেন, তাকে দাওয়াত দেওয়া হয়নি। মঞ্চে প্রায় দেড়শ লোকের মধ্যে কখন ওঠেন, তা আমরা খেয়াল করিনি।
ডাক্তার ফারজানার রহমান দৃষ্টি বলেন, তিনি আওয়ামী লীগের কোনো রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। শুক্রবার সভা মঞ্চের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় কিছু বিএনপি নেতাকর্মী তাকে বসতে বললে তিনি কিছু সময়ের জন্য বসেছিলেন। এতে তার কোনো রাজনৈতিক অভিপ্রায় ছিল না।
সিংড়া উপজেলা বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা দাওদার মাহমুদ জানান, উপজেলা বিএনপির গ্রুপিং চক্র মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে তাকে বহিষ্কার করিয়েছেন। তিনি কেন্দ্রীয় বিএনপির সিদ্ধান্তের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তবে তিনি বিএনপির আদর্শের প্রতি অনুগত থেকে বিএনপির সঙ্গে রয়েছেন। দৃষ্টির স্টেজে ওঠার বিষয়টি কেউই মেনে নিতে পারেনি বলে জানান তিনি।
জনসভার প্রধান অতিথি রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু বলেন, আমি পলকের শালিকা ফারজানা রহমানসহ সিংড়ার অনেককে চিনি না। তাই তার মঞ্চে আসন গ্রহণের বিষয়টি খেয়াল করতে পারেননি। তবে সভা চলাকালে ঘটনাটি জানার পর মঞ্চ থেকে নেমে যাওয়ার ব্যবস্থা করেছি।
বিএনপির রাজশাহী বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শাহিন শওকত বলেন, বিষয়টি আমি সাংবাদিকের মাধ্যমে জেনেছি। দলের কেউ আমাকে জানাননি। এ বিষয়ে অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নাটোর জেলা বিএনপির সদস্য সচিব রহিম নেওয়াজ বলেন, উপজেলা বিএনপির জনসভার মঞ্চে ফ্যাসিস্ট সরকারের অবৈধ আইসিটি প্রতিমন্ত্রী পলকের শালিকা ডাক্তার ফারজানুর রহমানের উপস্থিত হওয়া এবং আসন গ্রহণের ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয় এবং কয়েকটি গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। যা দলীয় শৃঙ্খলার পরিপন্থী এবং দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে। এ কারণে আমরা আনোয়ার হোসেন আনুর বিরুদ্ধে কেন সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, তা আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সরাসরি হাজির হয়ে লিখিতভাবে জানানোর জন্য নির্দেশ প্রদান করেছি। তার জবাব প্রাপ্তির পর সাংগঠনিকভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।