লাগামহীন নিত্যপণ্যের কারণে কষ্টে আছে দেশের সাধারণ মানুষ। এর মধ্যে আবারও ভ্যাটের চাপে দেয়ালে পিঠ ঠেকবে তাদের। চলতি অর্থবছরের মাঝপথে এসে আইএমএফের চাপে পণ্য ও সেবায় মূল্য সংযোজন কর-ভ্যাট, সম্পূরক ও আবগারি শুল্ক বাড়ানোর ফলে শতাধিক পণ্যে ও সেবার দাম বাড়তে পারে। এতে সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমবে। মুঠোফোন সেবার ওপর সম্পূরক শুল্ক বৃদ্ধির ফলে কথা বলা ও ইন্টারনেট ব্যবহারের খরচ বাড়বে। আবার পোশাকের দামও বাড়তে পারে। বাড়তে পারে রেস্তোরাঁয় খাওয়ার খরচও। ফলে নতুন করে ব্যবসাবাণিজ্য সংকটে পড়বে বলে জানান অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা।
বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আইনুল ইসলাম বলেন, মূল্যস্ফীতির চাপ এখনো কমেনি। নিত্যপণ্যের বেশি দামে মানুষ নাভিশ্বাসে আছে। তার ওপর এ সময়ে এ ধরনের সিদ্ধান্ত অর্থনীতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। মানুষের ওপর চাপ আরও তৈরি হবে। মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাবে। শতাধিক পণ্য ও সেবার দামে এর প্রভাব পড়বে। মানুষের মধ্যে অস্বস্তি ও কষ্ট আরও বাড়বে। এ সিদ্ধান্ত নেওয়া কোনোভাবেই উচিত হয়নি। এ বিষয়ে অর্থ উপদেষ্টা যেটা বলছেন সেটা আসলেই অর্থনীতির কথা নয়।
এ ধরনের সিদ্ধান্তে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছে, এর ফলে দেশের সামগ্রিক ব্যবসায়িক কার্যক্রমের পাশাপাশি স্থানীয় ও বিদেশি বিনিয়োগে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ায় পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পাবে, মূল্যস্ফীতি বাড়বে এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ সংকুচিত হবে। তা ছাড়া ব্যবসাবাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণে দীর্ঘমেয়াদি কর সুবিধার পাশাপাশি নীতি ধারাবাহিকতার প্রতিশ্রুতি রক্ষায় স্থিতিশীল ও বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ বজায় রাখা প্রয়োজন। এসব পণ্যের ওপর ভ্যাট ও করের হার বৃদ্ধি সামগ্রিক অর্থনীতিকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলবে। সেই সঙ্গে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা কমিয়ে দেবে। তাই ডিসিসিআই মনে করে, দেশে একটি ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে বিদ্যমান অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ উত্তরণের লক্ষ্যে সরকার, বেসরকারি খাতসহ সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের সম্মিলিত উদ্যোগ গ্রহণ করা একান্ত জরুরি।
বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির মহাসচিব ইমরান হাসান বলেন, ভ্যাটের হার কম থাকলে মানুষ ভ্যাট দিতে আগ্রহী হয়। কিন্তু হার বেশি হলে ভোক্তারা ভ্যাট এড়িয়ে চলার চেষ্টা করে। বর্তমানে প্রায় ৫.২৫ লাখ ব্যবসা ভ্যাট নিবন্ধিত। কিন্তু এর মধ্যে মাত্র ৩.৫০ লাখ নিয়মিত ভ্যাট প্রদান করে। ভ্যাটের হার কমালে ভ্যাট আদায় বৃদ্ধি পায় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ভ্যাট ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করার পর ভ্যাট আদায় ১৯ শতাংশ বেড়েছিল। বেশির ভাগ দেশে আয়ের মূল উৎস হলো প্রত্যক্ষ কর, যেমন আয়কর। করের আওতা না বাড়িয়ে ভ্যাটকে প্রধান রাজস্ব উৎস হিসেবে ব্যবহার করা উচিত নয়।
তিনি বলেন, আইএমএফের শর্ত মানতে গিয়ে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির মতো দেশের জনগণের ওপর ইচ্ছামতো করের বোঝা চাপিয়ে দেওয়া কোনো পূর্ণাঙ্গ সমাধান হতে পারে না।