দীর্ঘদিন পর রাজনীতির মঞ্চে ফিরলেন মাগুরা-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) কাজী সালিমুল হক কামাল (কাজী কামাল)। জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় প্রায় সাত বছর কারাভোগের পর গত আগস্টে মুক্তি পান তিনি। গতকাল রোববার বিকেলে মহম্মদপুর উপজেলা মিনি স্টেডিয়াম মাঠে স্থানীয় বিএনপি আয়োজিত এক জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন জেলা বিএনপির সাবেক এই সভাপতি।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ঘোষিত ৩১ দফা বাস্তবায়নের প্রচারে ‘মুক্তির গণসংবর্ধনা ও ঐক্যের জনসভা’ শিরোনামে এ সভার আয়োজন করেন মহম্মদপুর উপজেলা বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা। জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আলী আহমেদের সভাপতিত্বে সভায় প্রধান বক্তা ছিলেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবদলের সদস্যসচিব রবিউল ইসলাম। সভা মঞ্চে বিশেষ অতিথি হিসেবে জেলা, উপজেলা বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। তবে উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মৈমূর আলী মৃধাসহ দলের নেতা-কর্মীদের একটি অংশকে সভাস্থলে দেখা যায়নি।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে সাবেক এমপি কাজী সালিমুল হক বলেন, ‘দলের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করা যাবে না। সব নেতা-কর্মীকে সুসংগঠিত করতে হবে। দল কাকে নমিনেশন (মনোনয়ন) দেবে পরের ব্যাপার। কেউ কারও পিছে লাগব না, কেউ কারও বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করব না। আমাদের একমাত্র উদ্দেশ্য ধানের শীষের প্রার্থীকে জেতাতে হবে।’ বক্তব্যের সময় সাবেক এই সংসদ সদস্য দাবি করেন, মাগুরা-২ আসন থেকে সরানোর জন্য দলের ভেতরের একটি অংশের ষড়যন্ত্রে তাঁকে মিথ্যা মামলায় আসামি করা হয়।
সমাবেশে প্রধান বক্তা ছিলেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবদলের সদস্যসচিব রবিউল ইসলাম। তাঁর বাড়ি মহম্মদপুর উপজেলার নহাটা ইউনিয়নে। সম্প্রতি মাগুরা-২ আসনের বিএনপির রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছেন এই যুবনেতা। সমাবেশে বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘দীর্ঘ ১৭ বছরের আন্দোলন–সংগ্রামের মাধ্যমে স্বৈরাচার হাসিনা সরকারের পতন ঘটিয়েছি। কিন্তু দলের মধ্যে কিছু নেতা আছেন, যাঁরা বিভেদ সৃষ্টি করে বিএনপির ভিত দুর্বল করতে চান। ত্যাগী নেতাদের বঞ্চিত করে রেখেছেন। এবার তাঁদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করলাম। এই যুদ্ধ শেষ হবে আগামী নির্বাচনে মাগুরা-২ আসনে ধানের শীষের প্রার্থীর জয়ের মাধ্যমে।’ তিনি দাবি করেন, কাজী সালিমুল হক কারাগারে যাওয়ার পর একটি পক্ষ বিএনপির ত্যাগী নেতাদের কোণঠাসা করে রেখেছিল। তারা এখন জোট বেধেছে।
মাগুরা জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি কাজী সালিমুল হক ১৯৯৪ সালে বহুল আলোচিত মাগুরা-২ (শালিখা-মহম্মদপুর) আসনের উপনির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী হয়ে জয়ী হন। তখন উপনির্বাচনে ভোট ডাকাতি ও কারচুপির অভিযোগ তুলে তৎকালীন বিরোধী দল আওয়ামী লীগ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলন শুরু করে। পরে বিএনপি সরকার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি মেনে নিয়ে সংসদে বিল পাস করে। জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে তিনিও আসামি ছিলেন। এই মামলায় ২০১৭ সাল থেকে কারাগারে ছিলেন তিনি।
বিএনপি নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দীর্ঘদিন পর কাজী সালিমুল হক রাজনীতির মাঠে ফেরা এবং একই সঙ্গে যুবদল নেতা রবিউল ইসলামের একই সঙ্গে সমাবেশ করা স্থানীয় বিএনপির রাজনীতির জন্য তাৎপর্যপূর্ণ। তাঁরা দুজনই আগামী নির্বাচনে এই আসনে মনোনয়ন চাইতে পারেন। সর্বশেষ ২০১৮ সালের নির্বাচনে এ আসনে বিএনপির প্রার্থী হন দলটির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী।
বিএনপি নেতারা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরেই মাগুরায় বিএনপির রাজনীতি মোটাদাগে দুটি ধারায় বিভক্ত। এই সমাবেশের মাধ্যমে সেই বিভক্তি আবারও প্রকাশ্যে এলো। সমাবেশে নাম উল্লেখ না করলেও ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী ও তাঁর অনুসারীদের ইঙ্গিত করে বক্তব্য দেন একাধিক বক্তা। তাঁদের বিরুদ্ধে দলকে বিভক্ত করার অভিযোগ আনা হয়।
উপজেলা বিএনপির ব্যানারে এই সমাবেশের আয়োজন করা হলেও সেখানে উপস্থিত ছিলেন না উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মৌমূর আলী মৃধা। তিনিসহ নিতাই রায় চৌধুরীর অনুসারী হিসেবে পরিচিত অনেক নেতাকেই এই সমাবেশে দেখা যায়নি। জানতে চাইলে উপজেলা বিএনপির শীর্ষ এই নেতা মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘একজন নেতাকে সংবর্ধনা দেওয়ার জন্য এই সমাবেশের আয়োজন করা হয়। এটা দলের কোনো কর্মসূচি ছিল না। এই সমাবেশ আয়োজন নিয়ে আমাদের সঙ্গে আলোচনাও করা হয়নি। যাঁরা এটার আয়োজন করেছেন, তাঁদের বেশির ভাগই আন্দোলন–সংগ্রামে নিষ্ক্রিয় ছিলেন। আর উপজেলা বিএনপি যদি এই সমাবেশ আয়োজন করবে সেখানে জেলার বিএনপির নেতা কোন প্রটোকলে সভাপতিত্ব করেন সেটিও বোধগম্য নয়।’