Home » হাসিনাকে ফেরতের অনুরোধ কেন গুরুত্ব দিচ্ছে না ভারত

হাসিনাকে ফেরতের অনুরোধ কেন গুরুত্ব দিচ্ছে না ভারত

by radesk
0 comments

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের সময় বাংলাদেশ থেকে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর তাঁকে ফেরত চেয়ে সম্প্রতি বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে ভারতের কাছে চিঠি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এ চিঠির কোনো উত্তর দেয়নি ভারত। এ ব্যাপারে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল জানিয়েছেন, তাদের এ বিষয়ে এখনই কিছু বলার নেই।

এ ঘটনার ব্যাপারে গতকাল বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারত সরকারের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ সূত্র দিল্লিতে বিবিসি বাংলাকে আভাস দিয়েছে, তারা এ অনুরোধকে আদৌ খুব একটা আমল দিচ্ছেন না। এমনকি বাংলাদেশ সরকারও যে খুব একটা ‘সিরিয়াসনেস’ বা গুরুত্বের সঙ্গে অনুরোধটা করেছে- সেটাও মনে করছেন না কর্মকর্তারা।

কেন ভারত সরকার এরকম মনোভাব পোষণ করছে, কর্মকর্তা এবং বিশ্লেষকদের সঙ্গে কথা বলে ধারণা পাওয়া গেছে, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার যদিও দাবি করছে শেখ হাসিনাকে ফেরানোর প্রচেষ্টাকে তারা সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছে, ভারত কিন্তু মনে করছে তাদের পাঠানো বার্তা একটা ‘দায়সারা পদক্ষেপ’র চেয়ে বেশি কিছু নয়। শীর্ষস্থানীয় একজন সরকারি কর্মকর্তা বলেছেন, সত্যিই  যদি বাংলাদেশ এ ব্যাপারটা নিয়ে সিরিয়াস হতো, তাহলে তো তারা শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট অভিযোগগুলো কী এবং তাঁর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য-প্রমাণই বা কী, সেই বিবরণও পেশ করত। বাংলাদেশ সরকার আসলে তাদের দেশের মানুষকে এটা দেখাতে চাইছে যে, তারা ভারতের কাছে প্রত্যর্পণের অনুরোধ জানিয়ে দিয়েছে, ফলে ‘বল এখন ভারতের কোর্টে, আমাদের এখন আর কিছু করার নেই!’ ভারতের একজন সাবেক কূটনীতিবিদের কথায়, ‘আমার তো মনে হচ্ছে যেন বাংলাদেশ এই পদক্ষেপের মাধ্যমে যেন একটা বক্সে টিক দিয়ে দায়িত্ব সারল- আমাদের প্রত্যর্পণের অনুরোধ জানানোর কথা ছিল, জানিয়ে দিয়েছি- ব্যাস!’

কিন্তু শেখ হাসিনাকে ভারত বিচারের জন্য হস্তান্তর করবে- বাস্তবে এরকম সম্ভাবনা ক্ষীণ বলেই বাংলাদেশ হয়তো সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালায়নি, এমনটাও ধারণা করছেন তিনি। প্রকৃত কারণটা যাই হোক, নোট ভার্বালে যে যুক্তি দেখিয়ে শেখ হাসিনাকে ফেরত চাওয়া হয়েছে, সেটাকে ভারত আসলে জোরালো কোনো দাবি বলে মনেই করছে না। কারণটা হলো কোনো সাক্ষ্য-প্রমাণ ছাড়া এ অভিযোগ জানানোর অর্থ এ বার্তার চরিত্র পুরোপুরি রাজনৈতিক। ভারতের সাবেক শীর্ষস্থানীয় কূটনীতিবিদ পিনাকরঞ্জন চক্রবর্তী বলেন, ‘মনে রাখতে হবে ৫ আগস্ট তারিখেও শেখ হাসিনার নামে সে দেশে কোনো মামলা ছিল না। ফলে ভারত যখন তাকে আতিথেয়তা দিচ্ছে, সেই মুহূর্তে তিনি কিন্তু কোনো ফেরার আসামি নন। এখন শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার পর যদি তার বিরুদ্ধে দেশজুড়ে শত শত মামলা একসঙ্গে দায়ের করা হতে থাকে, তাহলে এটা মনে করার যথেষ্ট কারণ থাকতে পারে এগুলো রাজনৈতিক প্রতিহিংসামূলক- যার ভিত্তিতে প্রত্যর্পণের কোনো প্রশ্নই ওঠে না।’ এ ছাড়া বিশ্লেষকদের কেউ কেউ মনে করেন, শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণের অনুরোধ ভারতের তেমন একটা আমল না-দেওয়ার বড় কারণ হলো- তার দেশ ছাড়ার পেছনে বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন। শেখ হাসিনা যে বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর প্রচ্ছন্ন সমর্থনেই নিরাপদে দেশ ছাড়তে পেরেছিলেন বা বলা যেতে পারে- একটা সেইফ প্যাসেজ পেয়েছিলেন-তা এখন আর কোনো গোপন তথ্য নয়। ভারতের শাসক দল বিজেপির ঘনিষ্ঠ পররাষ্ট্রনীতি বিশেষজ্ঞ শুভ্রকমল দত্ত বলেন, ‘ভারতের কাছে শেখ হাসিনাকে ফেরত চাওয়ার আগে আমি তো বলব মুহাম্মদ ইউনূস সরকারের উচিত তাদের নিজেদের সেনাবাহিনীর কাছে জবাবদিহি চাওয়া, কেন তারা শেখ হাসিনাকে ভারতে যেতে দিল।’

 

You may also like

Leave a Comment

Rajneeti Ajkal is a leading news portal dedicated to providing comprehensive coverage of news, current affairs, political analysis, and the contemporary landscape of Bangladesh.

Rajneeti Ajkal, A Media Company – All Right Reserved. Designed and Developed by Rajneeti Ajkal