ফরিদপুরের সালথা উপজেলায় আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন। সংঘর্ষ চলাকালে কয়েকটি বাড়িঘর ভাঙচুর করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যা রাত ৭টার দিকে উপজেলার মাঝারদিয়া ইউনিয়নের মাঝারদিয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। বিএনপির কর্মী-সমর্থকেরা আওয়ামী লীগের একটি পক্ষ নিয়ে সংঘর্ষে জড়ান বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় লোকজন জানান, গ্রাম্য দলাদলি ও আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দুই যুগ ধরে মাঝারদিয়া গ্রামের বাসিন্দা উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মো. সাহিদুজ্জামানের সঙ্গে উপজেলা আওয়ামী লীগের আরেক সহসভাপতি মাঝারদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমানের বিরোধ চলে আসছিল। সেই বিরোধের জেরে প্রায়ই দুই পক্ষ সংঘর্ষে জড়াত। বয়সের ভারে সংঘর্ষ এড়াতে ও মামলা থেকে রক্ষা পেতে এলাকা ছেড়ে ফরিদপুর শহরে বসবাস করে আসছিলেন সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে তিনি পেঁয়াজের জমি দেখতে গ্রামের বাড়িতে আসেন। খবর পেয়ে সাহিদুজ্জামানের কর্মী-সমর্থকেরা হাবিবুরের বাড়িতে গিয়ে তাঁর ওপর হামলা করেন। পরে স্থানীয় আওয়ামী লীগের দুটি পক্ষের লোকজন সংঘর্ষে জড়ান। খবর পেয়ে উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি মো. হারুন মাতুব্বরের কর্মী-সমর্থকেরা হাবিবুর রহমানের পক্ষে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন।
প্রায় ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষ চলাকালে ৫ থেকে ৬টি বসতবাড়িতে ভাঙচুর চালানো হয়েছে। এতে হাবিবুর রহমানসহ উভয় পক্ষের অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে অন্তত ১০ জনকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও নগরকান্দা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
সংঘর্ষের বিষয়ে মো. সাহিদুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ‘উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি মো. হারুন মাতুব্বর আওয়ামী লীগের লোকদের সঙ্গে আঁতাত করে মঙ্গলবার রাতে বিএনপির সমর্থকদের বাড়িঘরে হামলা করে ব্যাপক ভাঙচুর করেছে, অনেককে কুপিয়ে জখম করেছে।’
বর্তমানে কোনো রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নন দাবি করে মো. সাহিদুজ্জামান বলেন, ‘আমি বৃহত্তর নগরকান্দা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ছিলাম। একটি হত্যা মামলার কারণে সাজেদাপুত্র আয়মন আকবর আমাকে আওয়ামী লীগে ভেড়ায়। গত জেলা পরিষদ নির্বাচনে আমি সদস্য প্রার্থী হলে সাজেদার আরেক পুত্র তৎকালীন ফরিদপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য শাহদাব আকবর আমাকে নির্বাচনে দাঁড় করানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে অন্য এক ব্যক্তির কাছ থেকে টাকা খেয়ে তাঁকে জিতিয়ে দেন। এরপর আমি ঘোষণা দিয়ে আওয়ামী লীগ ত্যাগ করি।’
হাবিবুর রহমান আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকায় এ বিষয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে অভিযোগের বিষয়ে মো. হারুন মাতুব্বর প্রথম আলোকে বলেন, হাবিবুর রহমান একজন নিবেদিতপ্রাণ আওয়ামী লীগার। তিনি একজন বৃদ্ধ ও সজ্জন ব্যক্তি। তিনি মারধরের শিকার হওয়ায় এলাকাবাসী দলমত–নির্বিশেষে সাহিদুজামানের সমর্থকদের প্রতিহত করেন। এ নিয়ে দুই পক্ষের সংঘর্ষ হয়েছে। দুই পক্ষের বাড়িঘর ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। দুই পক্ষের লোকজনই আহত হয়েছেন।
সালথা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আতাউর রহমান বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এলাকার পরিবেশ শান্ত রাখতে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। তবে আজ বুধবার বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত কোনো পক্ষ থানায় কোনো অভিযোগ করেনি।