রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সদস্য ডা. জাহেদ-উর রহমান ভারত নিয়ে উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের দেওয়া একটি স্ট্যাটাস নিয়ে যে বিতর্ক চলছে তা নিয়ে নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেলে একটি ভিডিও প্রকাশ করেছেন।
ভিডিওতে তিনি এই ইস্যুতে মাহফুজকে উপদেষ্টা থেকে বাদ দেওয়া উচিত কিনা তা বিশ্লেষণ করেছেন।দৈনিক ইনকিলাবের পাঠকদের জন্য তার বক্তব্য হুবহু তুলে ধরা হলো।
ডা. জাহেদ বলেন, সরকারের উপদেষ্টা জনাব মাহফুজকে নিয়ে নানা রকম বিতর্ক আছে। আমি নিজেও তার কিছু কিছু বিষয় নিয়ে সমালোচনা করি। কিন্তু সাম্প্রতিক তার একটা কাজের পর কেউ কেউ বলছেন যে, তাকে উপদেষ্টা পদ থেকে অপসারণ করা উচিত ছিল।
‘‘তিনি অখণ্ড বাংলার আমরা ম্যাপ দিয়ে রীতিমত একটা স্ট্যাটাস দিয়েছেন আমাদের বিজয় দিবসে। যেখানে ভারতের ভূমি বাংলাদেশের সাথে সংযুক্ত করে গ্রেটার বেঙ্গল তৈরি করার কথা আছে। এটা নিয়ে দুপক্ষ হয়ে গিয়েছিল। মানুষের মধ্যে কেউ সমর্থন করেছেন যে, ভারত অখণ্ড ভারতের কথা বললে আমরা কেন অখণ্ড বাংলার কথা বলতে পারবো না। আবার কেউ কেউ মনে করেছেন, যেমুহূর্তে ভারত আমাদের সাথে নানা রকম বাহানা খুঁজছে ঝামেলা করার সেখানে এই ধরনের কথাবার্তা মানে হাতে একটা অস্ত্র তুলে দেওয়া।’’
ডা. জাহেদ বলেন, আমি নিজেও এই দ্বিতীয় মতটা সমর্থন করি। আমি নিজেও এই সমালোচনা করেছি এবং বিশেষ করেতিনি যখন একটা সরকারের উপদেষ্টা। কেউ বলেছে, এ ব্যাপারটা এভাবে দেখার ব্যাপার না। সরকারের জায়গা থেকে এটাকে নানান রকম ইন্টারপ্রেটেশনের সুযোগ আছে কারণ ভারতের অখণ্ড ভারত নিয়ে যখন কেউ কেউ বলছিল ভারতের বিজেপির বিভিন্ন লোকজন তখন কিন্তু সরকার সেটাকে ডিজন করেছে।
তিনি আরও বলেন, সরকার রাষ্ট্রীয় দায়িত্বে বসে করাটার মধ্যে একটা ডিফারেন্ট ডাইমেনশন আছে এবং এখন ভারত ফরমালি এটার প্রতিবাদ জানিয়েছে। বেশ কঠোরভাবে জানিয়েছে। আবার এই আলাপটা এসেছে, জনাব মাহফুজকে কি অপসারণ করে একটা বার্তা দেয়া দরকার ছিল? আমি আগে ভারত কি বলেছে তা বলি এবং তাকে অপসারণের প্রশ্ন কেন আসছে সেটা বলবো।
‘‘ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যে ব্রিফিং হয় নিয়মিত সেখানে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল। সেখানে মুখপাত্র রণধীর বলছেন, আমরাবাংলাদেশ সরকারের কাছে বিষয়টি তুলে ধরেছি। তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছি। তাছাড়া আপনি যে পোস্টের কথা বলছেন, তা সরিয়ে ফেলা হয়েছে বলেও জেনেছি। তিনি বলেন, আমরা প্রত্যেককে তাদের জনসমক্ষে মন্তব্যের ক্ষেত্রে সতর্ক
থাকার বিষয় স্মরণ করিয়ে দিতে চাই।
রণধীর বলেন, যখন বাংলাদেশের জনগণ ও অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের বিষয়ে আগ্রহের ইঙ্গিত ভারত বারবার দিয়েছে তখন জনসমক্ষে এ ধরনের বক্তব্য দেয়ার ক্ষেত্রে দায়িত্বশীলতা দেখানো দরকার।’’
ড. জাহেদ বলেন, এটা আমার কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ মনে হয় যে তিনি যেটা পরের বাক্যটা বলেছেন। এটা ভারতের মুখপাত্র বলেছে বলেই সেটাকে চোখ বন্ধ করেন, করতে হবে নট নেসেসারিলি। ভারতের মুখপাত্রের এই বক্তব্যটা সঠিক যে, ভারত সাম্প্রতিক সময়ে তাদের পররাষ্ট্র সচিব আসার পর থেকে তারা বাংলাদেশের সাথে এনগেজ করতে চাইছে।
কারণ ভারতকে বাস্তবতা মেনে নিতে হবে। সেইখানে আসলে এই ধরনের মন্তব্য ভালো বার্তা দেয় না। এই আলোচনা আমরা বা সমালোচনা আমরা অনেকেই করেছি। আমি নিজেও সেটা করেছি।
‘‘কিন্তু এই বাহানায় ভারত এটা বলেছে, এটা কাউকে কাউকে আরো বেশি অস্ত্র তুলে দেয় যে, তাহলে তো মাহফুজ এই সরকারকে বিপদে ফেলছেন। জনাব মাহফুজকে সরকার থেকে সরিয়ে ফেলা দরকার। আসলে ঘটনা যেটা হয়েছেজনাব মাহফুজ সম্পর্কে এক ধরনের অস্পষ্টতা আছে। অস্পষ্টতা হচ্ছে, এরকম একটা পারসেপশন সমাজে আছে যারা অন্তত কিছু খোঁজখবর রাখেন তাদের কাছে এইরকম পারসেপশন হচ্ছে যে, ডক্টর ইউনূসের সরকারে অত্যন্ত প্রভাবশালী মানুষ উনি এবং তার এনডোর্সমেন্ট ছাড়া অনেক কিছুই হয় না। সব না বললেও অনেক কিছুই হয় না এ ধরনের আলাপ আছে।’’
ড. জাহেদ বলেন, তার স্ট্যাটাসে মনে হয়, এটা সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে কোনদিনও করা ঠিক হয় বলে আমি মনেকরি না। উনি বিশেষ সহকারী ছিলেন সচিব পদমর্যাদায়। উপদেষ্টা হওয়ার পর কেউ কেউ মনে করছিল তাকে ক্যাবিনেট দেয়া হচ্ছে কিনা। যাই হোক আমরা ধরে নেব যেহেতু পরিবর্তন হয়নিক্যাবিনেট দেয়া হয়নি তিনি ওই দায়িত্বেই আছেন এবংএকইভাবে উনি যখন ভারতের বিরুদ্ধে এ ধরনেরস্ট্যাটাস দিয়েছেন সেটাকে আমি বাহবা দেইনি। আমি বেশ কঠোরভাবে সমালোচনা করেছি।
তিনি আরও বলেন, একইভাবেই আমি মনে করি যেন মাহফুজেরও নাহিদ এবং আসিফদের মত করে সরকারে থাকা উচিত ছিল না। আর যে যা ভুল করবেন সেটা সমালোচনা করব। জনাব নাহিদ যে ভুল আমার দৃষ্টিতে মনে হয়েছে করেছেন, জনাব আসিফ যে ভুল করেছেন বলে আমার মনে হয়েছে আমি সেগুলো নিয়ে সমালোচনা করেছি। ঠিক একইভাবেসমালোচনা করব। কিন্তু জনাব মাহফুজকে উপদেষ্টা পদ থেকে সরিয়ে দিতে হবে আমি এটা একেবারেই
এনডোর্স করি না।