বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, জনগণকে নিয়ে স্বৈরাচার হটিয়েছি। তবে দেশের ভেতর ও বাইরে ষড়যন্ত্র থেমে নেই। এখন স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্র রক্ষার সংগ্রাম চলছে। এ সংগ্রামে জয়ী হয়ে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি নিরাপদ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে। আর ৩১ দফার পক্ষে সমর্থন আদায়ে জনগণের কাছে যেতে হবে। এছাড়া আর কোনো উপায় নেই।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নরসিংদী, মানিকগঞ্জ ও মুন্সীগঞ্জ জেলা বিএনপি আয়োজিত প্রশিক্ষণ কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের ৩১ দফা ও জনসম্পৃক্তিবিষয়ক কর্মশালায় ভার্চুয়ালি বক্তব্য দেন তারেক রহমান।
তিনি বলেন, ৫ আগস্ট পর্যন্ত আমাদের উদ্দেশ্য ছিল স্বৈরাচারকে সড়িয়ে দেওয়া। এখন দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্র রক্ষা করাসহ দেশের মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি দিতে কাজ করতে হবে। শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান দেশের মানুষের ভাগ্যোন্নয়নে কোদাল হাতে মাঠে নেমেছিলেন। সেই দলের নেতা হিসাবে আপনাদের মানুষের ভাগ্যোন্নয়নে কাজ করতে হবে।
তারেক রহমান বলেন, দুষ্টলোকদের দুষ্টামি থেমে নেই। সেটি আমাদের দেশের ভেতর ও বাইরে-উভয় জায়গাই হচ্ছে। কারণ, এ দেশের প্রাকৃতিক সম্পদের দিকে অনেকেরই দৃষ্টি। এখানে যদি বিশৃঙ্খলা লাগিয়ে রাখা যায়, এটি তাদের জন্য সুযোগ। এ দেশে যদি দুর্বল জনসমর্থনহীন একটি সরকার ক্ষমতায় রাখা যায়, তাহলে অনেক কিছু লুটেপুটে নিতে পারবে তারা। তাই যারা দেশের কথা চিন্তা করেন-এমন কেউ দেশ পরিচালনার দায়িত্বে থাকলে দেশ ও জনগণের স্বার্থ নিরাপদে থাকবে। যারা আমাদের প্রাকৃতিক সম্পদের দিকে শকুনের দৃষ্টি দিয়ে তাকিয়ে আছে, তখন তারা ১০ বার ভাববে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ’৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় গিয়ে সংসদে দাঁড়িয়ে বলতে বাধ্য হয়েছিল, বিএনপির আমলে দেশে ছোট-বড় মিলিয়ে ৮০ হাজার কলকারখানা স্থাপন করা হয়েছে। আমাদের সময় সংবাদপত্র আমাদের বিরুদ্ধে, ম্যাডামের বিরুদ্ধে, নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে কত কী লিখেছিল! তারপরও আমরা বলেছি, আমরা বাকস্বাধীনতায় বিশ্বাস করেছি। আমাদের সময় তো পত্রিকার সম্পাদকদের বিরুদ্ধে শত শত মামলা হয়নি। আমরা যখন দেশ পরিচালনার দায়িত্বে ছিলাম, তখন কি গুম-খুন হয়েছিল? আমাদের স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদকে সীমান্তের ওপারে ফেলে দিয়ে এলো। সাবেক সংসদ-সদস্য ইলিয়াস আলীসহ অনেক নেতাকর্মীকে গুম-খুন করা হয়েছে। কোথায়, বিএনপির সময়তো এমন হয়নি। কারণ, আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি। আমরা বাকস্বাধীনতায় বিশ্বাসী।
তারেক রহমান বলেন, বিএনপি খাল খননের মাধ্যমে এ দেশের পানি সমস্যা সমাধান করেছিল। এতে খাদ্য উৎপাদন দ্বিগুণ হয়েছিল। বিএনপি খাদ্য রপ্তানি করেছিল। নারীদের শিক্ষিত করার জন্য ইন্টারমিডিয়েট, ডিগ্রি পর্যন্ত পড়ালেখা ফ্রি করেছিল। এদেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে শিক্ষায় উৎসাহিত করতে শিক্ষার বিনিময় খাদ্য কর্মসূচি শুরু করেছিল।
তিনি বলেন, বিএনপির আমলে দেশের শিল্পকারখানার উৎপাদন বেড়েছিল। আবার সুযোগ পেলে আমরা এ কাজগুলো পুনরায় ভালোভাবে করব। দেশ ও দেশের মানুষের কল্যাণে প্রয়োজনে ৩১ দফা আরও বাড়ানো হবে। এই ৩১ দফা বাস্তবায়ন করতে হলে প্রথমেই দরকার জনগণের রায়। তাই যে কোনো মূল্যে স্ব স্ব অবস্থান থেকে আপনাদের জনগণের কাছে যেতে হবে। জনগণের পাশে থাকতে হবে।
মানিকগঞ্জের মুন্নু সিটির গিলন্ডতে আয়োজিত কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও মানিকগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি আফরোজা খান রিতা। বক্তব্য দেন দলটির মিডিয়া সেলের প্রধান ডা. মওদুদ আলমগীর পাভেল, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক সাইদুল আলম বাবুল, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এসএ জিন্নাহ কবীর, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মঈনুল ইসলাম খান শান্ত, সহসভাপতি ড. খন্দকার আকবার হোসেন বাবলু, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহ-প্রশিক্ষণবিষয়ক সম্পাদক রেহেনা আক্তার রানু, নির্বাহী কমিটির সদস্য রুখসানা খানম মিতু, অর্পণ বাংলাদেশের সভাপতি বীথিকা বিনতে হোসাইন প্রমুখ। কর্মশালা পরিচালনা করেন দলটির জাতীয় নির্বাহী কমিটির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু।
নরসিংদীর মাধবদী নওয়াপাড়া হেরিটেজ রিসোর্টে কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও বিএনপির যুগ্মমহাসচিব খায়রুল কবির খোকন। আরও বক্তব্য দেন বিএনপির যুগ্মমহাসচিব শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, তারেক রহমানের উপদেষ্টা মাহাদী আমিন, সহ-ত্রাণবিষয়ক সম্পাদক হালিমা নেওয়াজ আরলি, সহ-স্থানীয় সরকারবিষয়ক সম্পাদক শাম্মি আক্তার, সহ-গণশিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক আনিছুর রহমান তালুকদার খোকন, জেলা বিএনপির সদস্য সচিব মঞ্জুর এলাহীসহ কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা।
মুন্সীগঞ্জের মুক্তারপুর অ্যালাইড কোল্ড স্টোরেজে আয়োজিত কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন জেলা বিএনপির সদস্য সচিব কামরুজ্জামান রতন। বক্তব্য দেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ড. আসাদুজ্জামান রিপন, কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্মমহাসচিব অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ, স্বেচ্ছাসেবকবিষয়ক সম্পাদক মীর সরফত আলী সপু, ঢাকা বিভাগের সহসাংগঠনিক সম্পাদক বেনজির আহম্মেদ টিটু, জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-আহ্বায়ক মো. মহিউদ্দিন, বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য ইসমাইল জবিউল্লাহ, আমরা বিএনপি পরিবারের কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বায়ক ও বিএনপি মিডিয়া সেলের অন্যতম সদস্য আতিকুর রহমান রুম্মান, মিডিয়া সেলের আরেক সদস্য মাহমুদা হাবিবা প্রমুখ। কর্মশালা সঞ্চালনা করেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য (কেন্দ্রীয় দপ্তরে সংযুক্ত) আবদুস সাত্তার পাটোয়ারী।