Home Politics ঘুম ভাঙতেই আঁতকে ওঠেন আজহারি

ঘুম ভাঙতেই আঁতকে ওঠেন আজহারি

by radesk
0 comments

ঘুম ভাঙতেই ইজতেমার মাঠে সংঘর্ষের খবর শুনে আঁতকে উঠেছিলেন জনপ্রিয় ইসলামী আলোচক মিজানুর রহমান আজহারি। এ ঘটনায় দুই পক্ষকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

বুধবার বিকেলে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে আজহারি বলেন, ‘সাতসকালে ঘুম ভাঙতেই এমন একটা খবর শুনে, রীতিমতো আঁতকে উঠেছি। অত্যন্ত মর্মাহত হয়েছি।

হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়েছে ভীষণ। আহারে, আমার দেশে এক মুসলিম-ভাইয়ের হাতে আরেক মুসলিম-ভাই রক্তাক্ত! এই দৃশ্য কেমন করে সহ্য করি!’

 

তিনি আরো লিখেছেন, “মদিনার আউস ও খাযরাজ গোত্রের ভেতর ছিল শত বছরের শত্রুতা। দা-কুড়াল সম্পর্ক বললেও কম হবে। সেই শত্রুতা ঘোচাতে নবীজির এক ঘণ্টাও লাগেনি।

কেননা, তিনি সমস্যার একেবারে গোড়ায় হাত দিয়েছিলেন। নবীজি দেখলেন, দুই গোত্রের মাঝেই ভীষণ-রকম ইগো-প্রবলেম, নিজেকে সেরা ভাববার বিশ্রী প্রবণতা। নবীজি তাই শুনিয়ে দিলেন তাওহিদের সবক : ‘শোনো, তোমরা কেউই বড় নও। বড়ত্ব একমাত্র আল্লাহর শান।

তাই একবার যখন আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব মেনেই নিয়েছো, তখন আর নিজেকে ছোটো ভাবতে বাধা কোথায়? আল্লাহর ইচ্ছার সামনে নিজেদের সঁপে দাও। সব ভেদাভেদ ভুলে যাও।’ নবীজির এই আপ্তবাক্য সেদিন স্ফুলিঙ্গ হয়ে জ্বালিয়ে দিয়েছিল সমস্ত শত্রুতা আর ইগো। আউস আর খাযরাজ হয়ে গেল ভাই ভাই। এক দেহ, এক প্রাণ।

তাবলীগের নেতৃত্বস্থানীয় মুরব্বিদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘দেশের সবচেয়ে বড় দাওয়াতি প্ল্যাটফরম তাবলিগ জামাআতের এই সংকটে, আপনাদের দায়িত্বশীল ভূমিকার কোনো বিকল্প নেই। আপনারা আলোচনায় বসুন। তবে ফলপ্রসূ আলোচনার পূর্বশর্ত হলো : দলীয় স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে চিন্তা করতে পারা। একে-অপরকে ছাড় দেবার মানসিকতা রাখা। মনে রাখবেন, বিষয়টা কেবল আর দলীয় গণ্ডিতে আটকে নেই। এটার সাথে এখন বাংলাদেশের মুসলিমদের ভাবমূর্তি জড়িত।’

তিনি আরো বলেন, ‘আপনারা খুব ভালো করেই জানেন, আমাদের প্রতিবেশী দেশের গণমাধ্যমগুলো ওত পেতে থাকে কখন এ দেশের মুসলিমদের একহাত নেওয়া যায়। সেখানে আপনারাই যদি বল ঠেলে দেন ওদের কোর্টে, সেটা খুবই দুঃখজনক। গতকালের ঘটনা নিঃসন্দেহে তাদের সুবিধা দেবে। তারা এই ইস্যু ব্যবহার করে, এ দেশের ইসলামী আন্দোলন ও দলগুলোকে বিতর্কিত করবার চেষ্টা চালাতে পারে।’

আত্মসমালোচনার আহ্বান জানিয়ে আজহারি বলেন, ‘এই ঘটনা তাবলিগের দায়িত্বশীলদের সামনে আত্মসমালোচনার সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে। বছরের পর বছর ধরে আপনারা কোন সবক দিলেন সাথীদের? আপনারা কি তাদের এক উম্মাহ কনসেপ্ট শেখাতে ব্যর্থ হয়েছেন? আপনারা যথাযথ তারবিয়‍্যাত দিতে পারেননি বলেই সাথীরা আজ সত্যিকার শত্রু চিনতে ভুলে গিয়ে, নিজেদেরকেই শত্রু ভেবে বসে আছে। পৃথিবীর অন্যান্য দেশে তাবলিগের দুই পক্ষ যার যার মতো কাজ করছে, কিন্তু এমন মারামারি তো হচ্ছে না। কারণ তাদের মধ্যে উম্মাহ স্পিরিট আছে। উম্মাহ স্পিরিটকে যত বড় করে তোলা যাবে, দলীয় স্বার্থ তাদের কাছে তত নগণ্য হয়ে উঠবে।’

তিনি বলেন, ‘শামের দিকে দৃষ্টি ফেরান। সেখানকার বিজয়ের পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছে—ঐক্য। অন্তত দশটা বড় বড় গ্রুপ সেখানে লড়াই করেছে স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে। প্রতিটি গ্রুপই চিন্তা ও মননে আলাদা। কিন্তু মুসলিমদের স্বার্থের প্রশ্নে, দেশের নিরাপত্তার প্রশ্নে, ক্ষমতার লোভ বিসর্জন দিয়ে তারা এক ছাতার নিচে এসে দাঁড়িয়েছে। দিকে দিকে যখন মুসলিমদের ঐক্যের সুবাতাস বইছে, তখন আমার মাতৃভূমিতে কেন ভেদাভেদের কালোছায়া?’

তাবলিগের সাথীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “আল্লাহর ওয়াস্তে সংযত হোন। আল্লাহকে ভয় করুন। মুসলিম ভাইয়ের রক্ত ঝরানো আর যা-ই হোক, নবীজির উম্মতের বৈশিষ্ট্য হতে পারে না। ওটা স্রেফ আসাবিয়্যাত তথা দলবাজি। আর আসাবিয়্যাতের পরিণতি কত ভয়াবহ, তা নবিজির জবানিতেই শুনুন : ‘যে আসাবিয়্যাতের দিকে ডাকে, সে আমার দলভুক্ত নয়। যে আসাবিয়্যাতের জন্য লড়াই করে, সে আমার দলভুক্ত নয়। আর আমার দলভুক্ত নয় সে-ও, যে আসাবিয়্যাতের ওপর মৃত্যুবরণ করে।’ [সুনান আবূ দাউদ : ৫১২১।”

You may also like

Leave a Comment

Rajneeti Ajkal is a leading news portal dedicated to providing comprehensive coverage of news, current affairs, political analysis, and the contemporary landscape of Bangladesh.

Rajneeti Ajkal, A Media Company – All Right Reserved. Designed and Developed by Rajneeti Ajkal