‘স্বাধীনতা ছিনতাই করে এক পরিবারের সম্পদ বানানো হয়েছে’ বলে মন্তব্য করেছেন জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান। তিনি বলেছেন, যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিক্রি করে দিয়েছে, তারাই দেশ ছেড়ে পালিয়েছে। তারা যে দেশের আদর্শ ধারণ ও লালন করে, সেই দেশেই চলে গেছে। শেখ হাসিনা এ দেশে ফিরে এসেছিলেন শুধু তাঁর পিতা হত্যার প্রতিশোধ নিয়ে ভারতের কাছে বাংলাদেশের ভূখণ্ড ক্ষমতার বিনিময়ে বন্ধক দিতে।
মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে আজ সোমবার সকালে রাজধানীর পল্টন মোড়ে জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগর দক্ষিণ কমিটি আয়োজিত বিজয় শোভাযাত্রা-পূর্ব এক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জামায়াতের আমির এ কথা বলেন।
শেখ মুজিবুর রহমানকে কারা হত্যা করেছে, এমন প্রশ্ন তুলে জামায়াতের আমির বলেন, ‘স্বাধীনতার সপক্ষের সেনাসদস্যরা তাঁকে হত্যা করেছে। কেন করেছে? কারণ, শেখ মুজিব মুক্তিযুদ্ধের চেতনা থেকে বেরিয়ে বাকশাল প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এ দেশে ভারতীয় আধিপত্যবাদের যাত্রা শুরু করেছিলেন। তাঁর কন্যাও (শেখ হাসিনা) পরবর্তী সময়ে ভারতের তাঁবেদারি করতে এ দেশের আলেম-ওলামা, ছাত্র, কৃষক, শ্রমিক সাধারণ জনগণকে হত্যা করেছে।’
সাবেক রাষ্ট্রপতি ও মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সেক্টর কমান্ডার জিয়াউর রহমানকে স্বাধীনতার ঘোষক স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি কেন, সে প্রশ্নও তোলেন জামায়াতের আমির। তিনি বলেন, ‘শেখ মুজিবুর রহমান কবে কোথায় স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন, সেটি এ দেশের কারও জানা নেই। ৭ মার্চ যদি শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতাসংগ্রামের ডাক দিয়ে থাকেন, তাহলে ২৩ মার্চ পাকিস্তান দিবসে শেখ মুজিবুর রহমান নিজের বাসভবনে কেন পাকিস্তানের পতাকা ঝুলিয়েছেন। সেই পতাকা খুলে তৎকালীন ছাত্ররা বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা ঝুলিয়ে দিয়েছিলেন।’
জামায়াতের এই নেতা আরও বলেন, এই পল্টন ময়দানে ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর লগি-বইঠা দিয়ে মানুষকে সাপের মতো পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শহীদ আবু সাঈদের বক্তব্য ছিল ‘বুকের ভেতর তুমুল ঝড়, বুক পেতেছি গুলি কর’—এই তুমুল ঝড় এ দেশের ১৮ কোটি জনগণের বুকের ভেতরের ঝড়। তিনি বলেন, জামায়াতে ইসলামী রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেলে ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত সব হত্যাকাণ্ডের সঠিক তদন্ত ও ন্যায়বিচার করা হবে।
সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন দলের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল হালিম। তিনি বলেন, এই বিজয় দিবসের অঙ্গীকার হবে ভারতীয় আধিপত্যবাদ নিপাত যাক, পরাজিত শক্তি ভারতের দোসর আওয়ামী লীগ নিপাত যাক। সব বিভেদ ভুলে জাতীয় স্বার্থে ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে সব রাজনৈতিক দলকে এক কাতারে শামিল হওয়ার হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, জাতীয় ঐক্যের মাধ্যমেই ১৯৭১ থেকে ২০২৪ স্বাধীন বাংলাদেশের জন্য জীবন উৎসর্গকারী শহীদদের স্বপ্ন ও চেতনা পূরণ হবে।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন মহানগর দক্ষিণের আমির নুরুল ইসলাম বুলবুল। তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমাদের স্বাধীনতা প্রতিবেশী রাষ্ট্রের কাছে বর্গা দেওয়া হয়েছিল। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট এ দেশের ছাত্র-জনতা জীবন ও রক্ত দিয়ে সেই স্বাধীনতা ফিরিয়ে এনেছে। ছাত্র–জনতার অর্জিত সেই স্বাধীনতা ছিনিয়ে নিতে শেখ হাসিনা ভারতে বসে তার ভারতীয় প্রভুদের সঙ্গে ষড়যন্ত্র করছে। ছাত্র-জনতার অর্জিত স্বাধীনতা রক্ষায় জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবির এ দেশের জনগণকে সঙ্গে নিয়ে ঐক্যবদ্ধ ভূমিকা পালন করবে।’
দলের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য ও মহানগর দক্ষিণের সেক্রেটারি শফিকুল ইসলাম মাসুদের পরিচালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন মহানগর দক্ষিণের নায়েবে আমির আবদুস সবুর ফকির ও হেলাল উদ্দিন, সহকারী সেক্রেটারি মুহাম্মদ দেলোয়ার হোসাইন, কামাল হোসেন, আবদুল মান্নান, ইসলামী ছাত্রশিবির ঢাকা মহানগর পূর্ব শাখার সভাপতি মুজাফফর হোসেন প্রমুখ।
আমিরের নেতৃত্বে বিজয় শোভাযাত্রা
পল্টনে সমাবেশ শেষে জামায়াতের আমির শফিকুর রহমানের নেতৃত্বে পল্টন মোড় থেকে একটি বিজয় শোভাযাত্রা বের হয়। এতে বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মী ও সমর্থকেরা জাতীয় পতাকা হাতে অংশ নেন। শোভাযাত্রাটি পল্টন মোড় থেকে জাতীয় প্রেসক্লাব, কদম ফোয়ারা, মৎস্য ভবন, কাকরাইল মোড় হয়ে আবার পল্টন মোড়ে এসে শেষ হয়। মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে জামায়াতের আমিরের নেতৃত্বে রাজধানীতে এ ধরনের শোভাযাত্রা এই প্রথম বলে দলের নেতা-কর্মীরা জানিয়েছেন।
এদিকে রাজধানীর উত্তরায়ও জামায়াতের উদ্যোগে পৃথক শোভাযাত্রা ও সমাবেশ হয়েছে। এর নেতৃত্বে ছিলেন দলে ঢাকা মহানগর উত্তরের আমির মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন। শোভাযাত্রার আগে উত্তরার জমজম টাওয়ার এলাকায় সমাবেশ হয়। সেখানে সেলিম উদ্দিন প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন।