ডিসেম্বরের শুরুতে ঢাকায় নির্ধারিত আসন্ন বাংলাদেশ-ভারত পররাষ্ট্র দপ্তর আলোচনা (এফওসি)’র সময় বাংলাদেশ ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণের বিষয়ে আলোচনা করতে পারে।
আজ মন্ত্রণালয়ে সাপ্তাহিক সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র তৌফিক হাসান বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে আলোচনার সুযোগ রয়েছে।
শেখ হাসিনা ৫ আগস্ট ঢাকা থেকে পালানোর পর থেকে ভারতে অবস্থান করছেন। জুলাই-আগস্টের অভ্যুত্থানের সময় গণহত্যা সংক্রান্ত অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে তিনি বিচারের মুখোমুখি হতে যাচ্ছেন।
হাসান বলেন, শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ প্রক্রিয়া শুরু করার জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক নির্দেশনা পায়নি।
এই বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা দিলি¬র সাথে এ বিষয়ে আলোচনা করব এবং প্রয়োজনীয় নির্দেশনা পেলেই বিদ্যমান প্রত্যর্পণ চুক্তি অনুসারে আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া শুরু করবো।’
পররাষ্ট্র সচিব মো. জসিম উদ্দিন এবং তার ভারতীয় সমকক্ষ বিক্রম মিসরি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পর্যায়ের বৈঠকে তাদের নিজ নিজ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন। এতে শেখ হাসিনার সম্ভাব্য প্রত্যর্পণসহ ব্যাপক দ্বিপক্ষীয় বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা হবে।
দুই দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) পর্যালোচনার বিষয়ে হাসান বলেন, এই চুক্তিগুলো বাংলাদেশের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের এখতিয়ারভুক্ত।
তিনি বলেন, ‘সকল প্রাসঙ্গিক স্টেকহোল্ডারদের সাথে পরামর্শ করা অপরিহার্য এবং যেকোনো পদক্ষেপ বাস্তবায়নে সময় লাগবে।’ গত ১০০ দিনে অগ্রগতি সীমিত হলেও, আগামী মাসগুলোতে ‘উলে¬খযোগ্য অগ্রগতির’ আশাবাদ রয়েছে।
ভারতীয় ভিসা সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে হাসান বলেন, ভারতীয় ভিসা কেন্দ্র চালু রয়েছে কিন্তু বর্তমানে মেডিকেল ও স্টুডেন্ট ভিসা আবেদনকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, ভারত জনবলের অপর্যাপ্ততার কথা উলে¬খ করে তা দ্রুত নিরসনের আশা প্রকাশ করেছে।
মুখপাত্র বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কিছু ভারতীয় মিডিয়ায় নেতিবাচক প্রচারণার বিষয়টিও উল্লেখ করেছেন।
হাসান বলেন, ‘এই বিষয়টি ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনের নজরে আনা হয়েছে এবং ভারতীয় কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে যে, দুই দেশের পারস্পরিক সম্পর্কের প্রেক্ষাপটে এই ধরনের প্রচারণা অনাকাঙ্ক্ষিত।’
ঢাকা ও করাচির (পাকিস্তান) মধ্যে সরাসরি বিমান চলাচলের বিষয়ে হাসান জানান, পাকিস্তান বিমান চলাচল পুনরায় চালু করার জন্য একটি অনুরোধ জানানো হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘বিষয়টি পর্যালোচনাধীন রয়েছে এবং বেসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রণালয়ের কাছে পাঠানো হয়েছে।’ যথাসময়ে অগ্রগতির বিষয়ে অভিহিত করা হবে।
রোহিঙ্গা ইস্যুতে হাসান ৭৯তম জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সময় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সক্রিয় কূটনীতির কথা তুলে ধরেন, যেখানে প্রধান উপদেষ্টা ২৫টি দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে অংশ নেন।
বাংলাদেশ জাতিসংঘে উচ্চ-পর্যায়ের একটি সাইড ইভেন্টেরও আয়োজন করেছিল, যেখানে ড. ইউনূস সকল স্টেকহোল্ডারদের নিয়ে সম্মেলনসহ তিনটি উদ্যোগের প্রস্তাব করেছেন।
সম্প্রতি ড. ইউনূস জাতিসংঘ মহাসচিবকে একটি চিঠি পাঠিয়ে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছেন।
হাসান বলেন, বুধবার জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের তৃতীয় কমিটিতে ‘মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলিম ও অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানবাধিকার পরিস্থিতি’ শীর্ষক একটি প্রস্তাব সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হওয়ার মাধ্যমে এই প্রচেষ্টা ফলপ্রসূ হয়েছে।
অর্গানাইজেশন অফ ইসলামিক কো-অপারেশন (ওআইসি) এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন কর্তৃক যৌথভাবে উপস্থাপিত প্রস্তাবটি জাতিসংঘের ১০৬টি সদস্য রাষ্ট্র থেকে একযোগে স্পন্সরশিপ লাভ করেছে, যা ব্যাপক আন্তর্জাতিক সমর্থন প্রতিফলিত করে।
এ প্রস্তাবের মাধ্যমে, সদস্য-রাষ্ট্রগুলো রোহিঙ্গা সংকটের টেকসই সমাধানের জন্য একটি সময়াবদ্ধ পরিকল্পনা প্রস্তাব করার জন্য ২০২৫ সালে একটি সব-স্টেকহোল্ডারদের নিয়ে উচ্চ-পর্যায়ের সম্মেলন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
হাসান বলেন, ‘সর্বসম্মতিক্রমে এই প্রস্তাবটি গৃহীত হওয়া একটি উলে¬খযোগ্য মাইলফলক, যা রোহিঙ্গা সংকট মোকাবেলায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অঙ্গীকারের প্রতিফলন।’
তিনি আরও বলেন, আগামী বছরের প্রথমার্ধে নিউইয়র্কে এ সম্মেলন হওয়ার আশা করা হচ্ছে।