রাজনৈতিক দলগুলো অন্তর্বর্তী সরকারকে ব্যর্থ প্রমাণ করার চেষ্টা করছে বলে তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম যে বক্তব্য দিয়েছেন, তার জবাবে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, তথ্য উপদেষ্টার এ সম্পর্কিত বক্তব্য ‘রাজনীতিবিরোধী’। অন্যদিকে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী বলেন, সরকারের সমালোচনা করা মানে সরকারকে ব্যর্থ করে দেওয়া নয়।
যুক্তরাজ্যে দেড় সপ্তাহ সফর শেষে গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকায় ফেরেন মির্জা ফখরুল ইসলাম। শাহজালাল বিমানবন্দরে নেমে অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি জানি না, আসলে উনি কী উদ্দেশ্যে, কেন এটা বলেছেন।
কিন্তু উনার এই বক্তব্য রাজনীতিবিরোধী এবং আমি আশা করি না যে তারা এ ধরনের বক্তব্য দেবেন। কারণ রাজনৈতিক দলগুলো সব সময়ই এই অন্তর্বর্তী সরকারকে সমর্থন করেছে এবং এই সমর্থনের একটা উদ্দেশ্য আছে, সেটা হচ্ছে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা। সেটার জন্যই আমরা কাজ করছি ১৫ বছর ধরে। এটা উনি কী উদ্দেশ্যে, কেন বলেছেন, আমি জানি না।
বিএনপির লং মার্চ কর্মসূচি সামনে রেখে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে যে সংকট, সেটির সমাধান কিভাবে হবে জানতে চাইলে দলটির মহাসচিব বলেন, আলোচনার মধ্য দিয়ে সংকটের সমাধান হবে।
বিএনপি সংস্কারের চেয়ে নির্বাচনকে প্রাধান্য দিচ্ছে—এমন বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তা নাকচ করে দিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এ ধরনের ধারণা ভুল। আমরা দুই বছর আগে সংস্কারের কথা বলেছি, ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছি। তারও আগে ২০১৬ সালে আমরা ভিশন-২০২৩ দিয়েছিলাম।
আমরা এখনো বলছি, ন্যূনতম সংস্কার করে নির্বাচন দিতে হবে। বাংলাদেশে যেসব সমস্যা তৈরি হচ্ছে, এই সমস্যাগুলো নির্বাচিত সরকার ছাড়া সমাধান করা বেশ চ্যালেঞ্জিং।’
লন্ডন থেকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছ থেকে কী বার্তা নিয়ে এসেছেন, সে সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের বার্তা হচ্ছে, আপনারা সবাই ধৈর্য ধরবেন। একটা বিশাল বিজয় সূচিত হয়েছে জনগণের। এই বিজয়কে ফলপ্রসূ করতে হলে অবশ্যই সবাইকে ধৈর্য ধরে কাজ করতে হবে এবং গণতন্ত্রের যেটা প্রথম পদক্ষেপ, সেই নির্বাচনের জন্য সবাইকে প্রস্তুতি নিতে হবে।
তারেক রহমানের দেশে ফেরা নিয়ে তিনি বলেন, ‘উনার যখন সুযোগ হবে, অর্থাৎ মামলা-মোকদ্দমা শেষ হবে, তখন চলে আসবেন।’ মির্জা ফখরুল জানান, সফর ফলপ্রসূ হয়েছে। উল্লেখ্য, ১ ডিসেম্বর মির্জা ফখরুল লন্ডনে যান। এই সফরে তার স্ত্রী রাহাত আরা বেগমও সঙ্গে ছিলেন।
রিজভীর প্রতিক্রিয়া
তথ্য উপদেষ্টার বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় রুহুল কবীর রিজভী বলেন, ‘বিএনপিসহ রাজনৈতিক দলগুলো অন্তর্বর্তী সরকারকে সমর্থন দিয়েছে। আবার এই দলগুলোই সরকারের নানা কাজের সমালোচনা করবে। এটাই গণতন্ত্রের রীতি, গণতন্ত্রের বৈশিষ্ট্য।’
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর ভাঙা প্রেস এলাকার নবী টাওয়ারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শহীদ পরিবারের মধ্যে আর্থিক সহযোগিতা প্রদান অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি।
রিজভী বলেন, ‘আমার মনে হয়, সরকারের একজন উপদেষ্টার এ ধরনের কথা বলা সমীচীন নয়। কারণ যে গণতন্ত্র শেখ হাসিনা আটকে দিয়েছিলেন, কথা বলার স্বাধীনতার যিনি টুঁটি চেপে ধরেছিলেন, আইনের শাসনকে যিনি আজিমপুরে কবরস্থ করেছিলেন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতাকে যিনি ভাসিয়ে দিয়েছিলেন বঙ্গোপসাগরে; আপনাদের কথা সেই শেখ হাসিনার মতো হবে কেন?’
সমালোচনায় ভুল সংশোধনের সুযোগ তৈরি হয় জানিয়ে রিজভী বলেন, ‘আপনার প্রতিদিনের কাজে যদি সমালোচনা হয়, আপনি নিজেই নিজের ভুল বুঝতে পারবেন।’
এ সময় জুলাই-আগস্টের আগে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ভূমিকার সমালোচনা করে রিজভী বলেন, বিএনপির নেতা-নেত্রীরা যেমন শেখ হাসিনার দ্বারা অপমানিত হয়েছেন, নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, তিনিও (ড. ইউনূস) শেখ হাসিনার দ্বারা নিপীড়নের শিকার হয়েছেন। কিন্তু গণতন্ত্র তো একটা সর্বজনীন ব্যাপার। দেশে জুলাই-আগস্টের বিপ্লবের আগেও তো অনেকে গুম হয়েছেন, দুজন এমপি গুম হয়েছেন। একজন সাবেক এমপিকে পটুয়াখালীতে যুবলীগ পিটিয়ে মেরে ফেলেছে। কত ছাত্র-যুবককে ক্রসফায়ার দেওয়া হয়েছে। আমরা তো একজন গুণী মানুষ হিসেবে, দেশের একজন বরেণ্য, সব মানুষের শ্রদ্ধেয়…তিনি তো এক দিনও এর প্রতিবাদ করেননি, একটা বিবৃতিও দেননি। কিন্তু উনাকে যখন মামলা দেওয়া হয়েছে, বিএনপি কিন্তু উনার জন্য বিবৃতি দিয়েছে।’
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক নবী উল্লাহ নবীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আ ন ম সাইফুল ইসলাম, মকবুল হোসেন প্রমুখ।