১৯৭২ সালের সংবিধানের চার মূলনীতি ঠিক রেখে প্রয়োজনীয় সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানের ত্রুটি, দুর্বলতা ও অসম্পূর্ণতা দূর করার প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)। আজ সোমবার সংবিধান সংস্কার কমিশনের কাছে নিজেদের লিখিত প্রস্তাব দেয় সিপিবি।
অন্যদিকে রাষ্ট্রের মূলনীতি হিসেবে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের সাম্য, মানবিক মর্যাদা এবং সামাজিক ন্যায়বিচারকে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রস্তাব করেছে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন। তারাও আজ দুপুরে সংবিধান সংস্কার কমিশনের কাছে নিজেদের প্রস্তাব জমা দেয়।
এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সিপিবি জানিয়েছে, তাদের প্রধান প্রস্তাবগুলোর মধ্যে রয়েছে সংবিধানের মূলনীতির ক্ষেত্রে আদিবিধানের ৪-নীতি বহাল রাখা। সংবিধানে আদিবাসীসহ অন্যান্য জাতিসত্তার স্বীকৃতি দেওয়া। জীবনধারণের মৌলিক উপকরণের নিশ্চয়তা প্রদানকে মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকার করে নিয়ে তার দায়িত্ব রাষ্ট্রের নেওয়া। রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার নিষিদ্ধ করা। দুই মেয়াদের বেশি কেউ প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না—এমন বিধান করা। নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ তদারকি সরকার পুনঃপ্রবর্তন করা। আর্থিক ক্ষমতার নিশ্চয়তাসহ স্থানীয় সরকারের প্রকৃত ও পূর্ণ ক্ষমতায়ন ও রাষ্ট্র প্রশাসনের গণতান্ত্রিক বিকেন্দ্রীকরণ করা ও বরাদ্দ এবং কাজ সুনির্দিষ্ট করা। সংসদে নারী আসনের সংখ্যা বাড়ানো ও সরাসরি ভোটের ব্যবস্থা করা। সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব ব্যবস্থা প্রবর্তন করা, এটি না হওয়া পর্যন্ত ‘না’ ভোট ও প্রতিনিধি প্রত্যাহার ব্যবস্থা প্রবর্তন করা। বিশেষ ক্ষমতা আইনসহ কালাকানুন বাতিল করা।
প্রসঙ্গত, ১৯৭২ সালের সংবিধানের চার মূলনীতি হলো জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা।
রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রস্তাব
রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন জানিয়েছে, আজ দুপুরে তারা সংবিধান সংস্কারবিষয়ক প্রস্তাব জমা দিয়েছে। সংবিধান সংস্কার প্রস্তাবে সংবিধানের প্রতিটি ধারার ক্ষেত্রে সংযোজন, বাতিল, সংশোধন বা অপরিবর্তিত রাখা—এই চারটি বিকল্প প্রস্তাব করা হয়েছে।
রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন যেসব বিষয়ের ওপর জোর দিয়েছে, সেগুলোর মধ্যে আছে—রাষ্ট্রের মূলনীতি হিসেবে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের সাম্য, মানবিক মর্যাদা এবং সামাজিক ন্যায়বিচারকে স্বীকৃতি দেওয়া; রাষ্ট্রপতির ক্ষমতাকে প্রধানমন্ত্রীর অর্গল থেকে মুক্ত করা; সংসদে শক্তির ভারসাম্য নিয়ে আসতে সংসদের একাংশের জন্য সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন; স্থানীয় সরকারকে স্বাধীন, স্বশাসিত এবং স্বপরিচালিত করা; বিচার বিভাগকে নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচ্ছিন্ন করা; নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক
সরকার ব্যবস্থার পুনর্বহাল ইত্যাদি।
রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন বলেছে, জাতীয় সমঝোতায় না আসতে পারলে সংবিধানের কোনো সংস্কারই টেকসই হবে না। সেই লক্ষ্যে সংবিধান সংস্কার কমিশন তাদের সংস্কার প্রস্তাব দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে কিছু সম্মিলিত উদ্যোগ নিতে হবে। রাজনৈতিক দল, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়, সিভিল সোসাইটি, ব্যবসায়ী, শ্রমজীবী, কৃষিজীবী ও পেশাদার গোষ্ঠীর প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি জাতীয় সংবিধান কমিটি সৃষ্টি করতে হবে। জাতীয় সংবিধান কমিটি সব পক্ষের সমঝোতার লক্ষ্যে, সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবিত খসড়ার প্রতিটি ধারা বিবেচনা ও আলোচনা করে, সব প্রতিনিধির সম্মতিতে একটি সংবিধান সংস্কার প্রস্তাব নাগরিকদের সামনে উপস্থাপন করবে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এই সংবিধান সংস্কার প্রস্তাবকে বৈধতা দিতে একটি সংবিধান সভার (গণপরিষদ) নির্বাচন আয়োজন করতে হবে। সংবিধান সভা দ্রুততম সময়ের মধ্যে সংস্কার প্রস্তাব চূড়ান্ত করে সেই চূড়ান্ত সংবিধান অনুমোদনের জন্য গণভোটের আয়োজন করবে। গণভোটে সংস্কার প্রস্তাব পাস হয়ে এলে নির্বাচিত
প্রতিনিধিদের হাতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার রাষ্ট্রক্ষমতা হস্তান্তর করবে।
রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, প্রস্তাব জমা দেওয়ার সময় রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সংবিধান প্রস্তাব কমিটির সমন্বয়ক সৈয়দ হাসিবউদ্দিন হোসেন, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সাংগঠনিক সমন্বয়ক ইমরান ইমন, অর্থনৈতিক সমন্বয়ক দিদারুল ভূঁইয়া, জাতীয় সমন্বয়ক কমিটির সদস্য সোহেল সিকদার, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের দপ্তর সমন্বয়ক এহসান আহমেদ এবং রাষ্ট্র সংস্কার ছাত্র আন্দোলনের সভাপতি আহমেদ ইসহাক উপস্থিত ছিলেন। সংবিধান সংস্কার কমিশনের পক্ষে প্রস্তাব গ্রহণ করেন কমিশনপ্রধান অধ্যাপক আলী রীয়াজ, সদস্য ইমরান সিদ্দিক ও ফিরোজ আহমেদ।