বাংলাদেশের মাটিতে আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলের দোসররা কেউ রাজনীতি করতে পারবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খাঁন।
শুক্রবার বিকালে ঝিনাইদহ শিশু একাডেমি মিলনায়তনে ‘সম্প্রীতির বাংলাদেশ গঠন ও রাষ্ট্র সংস্কারে করণীয়’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
রাশেদ খাঁন বলেন, খুনি হাসিনা ও তার দলকে বিচারের মুখোমুখি না করা পর্যন্ত আওয়ামী লীগকে বাংলাদেশে রাজনীতি করতে দেওয়া হবে না। শুধু আওয়ামী লীগই নয়, ফ্যাসিস্ট হাসিনার আশির্বাদপুষ্ট ১৪ দলের কোনো নেতাকর্মীকে ডামি-মামি ও স্বতন্ত্র পদে নির্বাচন করতে দেওয়া হবে না। খুনি হাসিনাকে গণহত্যা ও গণতন্ত্র হত্যার দায়ে ভারত থেকে ফিরিয়ে তাকে ফাঁসির দড়িতে ঝোলাতে হবে। আর সরকার যদি হাসিনার দলের সঙ্গে সমঝোতা করে তাদের নির্বাচনের মাঠে নামায় তবে সরকারের বিরুদ্ধেও মাঠে নামার হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
তিনি বলেন, বর্তমান সরকারকে গণহত্যার বিচার করতে হবে। লড়াই বন্ধ করে দিলে আবার সেই হাসিনা ফিরে আসবে।ভয় পাবেন না। যতক্ষণ পর্যন্ত ঘুস দুর্নীতি বন্ধ না হবে, ততক্ষণ লড়াই চালিয়ে যেতে হবে। দেশে কোনো মামলাবাজি, চাঁদাবাজি, দখলবাজি চলবে না। আমরা ভারতে গণগোষ্ঠির বিরোধিতা করি নাই। কিন্তু যারা দিল্লি বসে বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে হস্তক্ষেপ করে। কোন সরকার আসবে, কোন সরকার যাবে- তার সিদ্ধান্ত নেয়। আমরা সেটির বিরোধিতা করি। আমাদের সংগ্রাম দিল্লির আগ্রাসনের বিরুদ্ধে।
রাশেদ খাঁন বলেন, ‘বাংলাদেশে মোদির আধিপত্যবাদবিরোধী আন্দোলন আমরাই করেছিলাম। দিল্লির কসাই মোদির হাতে মুসলমানদের রক্ত লেগে আছে। তাকে প্রতিহত করতে সেদিন গণঅধিকার পরিষদ মাঠে নেমেছিল এবং জেল-জুলুমের শিকার হয়েছিল।’
জেলা গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি প্রভাষক সাখাওয়াত হোসেনের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন- কেন্দ্রীয় নেতা এবিএম আশিকুর রহমান, বিল্লাল হোসেন, গণঅধিকার পরিষদের ঝিনাইদহ জেলার সাধারণ সম্পাদক ইকবাল জাহিদ রাজন, রাজশাহী বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সুমন কবির, খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আশিক ইকবাল, মিশন হোসেন ও রিহান উদ্দীন রায়হান।
সভা পরিচালনা করেন ছাত্রঅধিকার পরিষদের নেতা আব্দুল্লাহ আল মামুন।
রাশেদ বলেন, হাসিনা ভারতে বসে ষড়যন্ত্র করছে। অডিও ফাঁসের নাটক করছে।গণমাধ্যম, ফেসবুক, ইউটিউবে হাসিনার বক্তব্য প্রচার বন্ধ করতে হবে। বিজেপি সরকার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে নিয়ে নানা ধরনের অপপ্রচার করছে। মুসলমান আইনজীবীকে হত্যা করা ভারতের ফাঁদ ছিল।সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগবে। ভারত সেনা বাহিনী পাঠাবে। সেই স্বপ্ন ধুলিস্যাৎ হয়ে গেছে। ভারতে ষড়যন্ত্র বাংলাদেশের জনগণ শক্তভাবে প্রতিহত করেছে। রাজনৈতিক দলগুলো ঐক্যবদ্ধ হয়ে সেই সংকট মোকাবিলা করেছে।
বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা জোরদার করেছে অন্তর্বর্তী সরকার উল্লেখ করে রাশেদ খান বলেন, গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম অংশীদার গণঅধিকার পরিষদ। যে সময় সব কিছু ঘুমিয়ে গিয়েছিল নেতারা আত্মগোপনে সে সময় গণঅধিকার পরিষদ নেতৃত্ব দিয়েছে। আমরা এমপি-মন্ত্রী হওয়ার জন্য রাজনীতি করি না। আমরা নেতা তৈরি করি। এমপি হওয়ার জন্য একে অপরের বিরুদ্ধে লাগার সময় নাই। রাষ্ট্র সংস্কারের আগে এমপি হওয়ার লড়াই এখন নয়। আমরা নতুন বাংলাদেশ গঠনের জন্য লড়াই করেছি। ভয় নেই সত্যের পক্ষে লড়াই করুন। ঐক্যবদ্ধভাবে লড়াই চালিয়ে যেতে হবে।
রাশেদ খান বলেন, কেউ স্বীকার না করলেও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান জুলাই গণঅভ্যুথানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। তিনি সর্বশক্তি দিয়ে ছাত্রদের সামাজিক আন্দোলনকে রাজনীতিকরণ করে হাসিনা পতন আন্দোলন ত্বরান্বিত করেন। তারেক রহমান একটি ইতিবাচক চিন্তার জায়গা থেকে আমাকে (রাশেদ খাঁন) সহায়তা করতে ঝিনাইদহ বিএনপি নেতাদের চিঠি দিয়েছিলেন। কিন্তু তারা হাইকমান্ডের ওই চিঠির মর্মার্থ বুঝতে ভুল করে আমাকে অসহযোগিতা করে যাচ্ছেন। ঝিনাইদহ বিএনপি হাইকমান্ডের নির্দেশ মানছেন না বলে অভিযোগ করেন রাশেদ।
রাশেদ খান আরও বলেন, তারেক রহমানের চিঠি নিয়ে যারা নোংরা খেলায় মেতেছেন তারা ছাত্র-জনতার বিপ্লবে বিশ্বাস করে না। রাশেদ খাঁন অভিযোগ করে বলেন, ঝিনাইদহে দখলবাজি, চাঁদাবাজি ও টেন্ডারবাজিসহ নানা অপরাধ চলছে। আমরা তো এসব করার জন্য বিপ্লব করিনি। এসব নেতিবাচক কর্মকাণ্ড চলতে দেওয়া হবে না।
এর আগে বেলা ১১টায় দলীয় (গণঅধিকার পরিষদ) কর্মিসভা অনুষ্ঠিত হয়। জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে দলীয় নেতাকর্মীরা যোগ দেন ওই সভায়।