গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র অভ্যুত্থানে আহত যুবকদের পুনর্বাসনে নতুন প্রকল্প হাতে নেবে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়। এই প্রকল্পের আওতায় আহত ব্যক্তিদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণ দেওয়ার মাধ্যমে তাঁদের শ্রমবাজারের মূলধারায় আনার উদ্যোগ নেওয়া হবে।
আজ বুধবার রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে আয়োজিত এক গোলটেবিল আলোচনায় এ কথা বলেন যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. রেজাউল মাকছুদ জাহেদী।
‘উন্নত, সহনশীল (রেসিলিয়েন্ট) ও টেকসই বাংলাদেশ গঠনে তরুণদের ক্ষমতায়ন’ শীর্ষক অনুষ্ঠানটি যৌথভাবে আয়োজন করে সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম) ও একশনএইড। একশনএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবিরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন সানেমের নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান। সঞ্চালনা করেন সানেমের জ্যেষ্ঠ গবেষণা ফেলো আফিয়া মুবাশশিরা তিয়াশা।
গত জুলাই-আগস্টে দেশে কোটা সংস্কার আন্দোলন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও সরকার পতনের আন্দোলন ঘিরে সারা দেশে সংঘাত-সহিংসতায় ১৮ হাজারের বেশি মানুষ আহত হন, যার মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য অংশ তরুণ-যুবক। ছাত্র–জনতার আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে অনেকেই চোখ হারিয়েছেন কিংবা বিভিন্ন ধরনের পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন।
এ প্রসঙ্গ টেনে অনুষ্ঠানে যুব ও ক্রীড়া সচিব রেজাউল মাকছুদ জাহেদী বলেন, আহত তরুণদের আত্মকর্মসংস্থানের মাধ্যমে শ্রমবাজারের মূলধারায় আনার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। আহত হওয়ার ধরন অনুযায়ী শ্রেণিবিন্যাস করে তাঁদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। ইতিমধ্যে এ প্রকল্প তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। এ ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতা নেওয়া হবে। বর্তমানে চাহিদা যাচাইয়ের কাজ চলছে, এরপর প্রকল্পের বাজেট নির্ধারণ করে তা চূড়ান্ত করা হবে।
সুযোগ হারানোর দশক
গোলটেবিল সভায় সানেমের নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান বলেন, ‘গত এক দশকে অর্থনৈতিক পরিবর্তনের উদ্যোগগুলোতে তরুণদের সেভাবে সম্পৃক্ত করা হয়নি। তরুণদের চাকরির সুযোগও সীমিত ছিল। এ সময় সরকার ভৌত অবকাঠামোতে অনেক বিনিয়োগ করলেও সামাজিক অবকাঠামোতে প্রয়োজনীয় বিনিয়োগ করেনি। সব মিলিয়ে আমরা ‘সুযোগ হারানোর দশক’পার করেছি।’
সেলিম রায়হান বলেন, বিগত সরকারের আমলে রাজনীতিক, আমলা ও ব্যবসায়ীরা মিলে বিভিন্ন প্রকল্পে অনিয়ম-দুর্নীতি করেছেন ও টাকা সরিয়েছেন। এর মাধ্যমে যুবসমাজকে তাঁদের প্রাপ্য সুবিধাবঞ্চিত করা হয়েছে। শুধু স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতই নয়, অর্থনৈতিক উন্নয়ন প্রক্রিয়ার কোথাও সেভাবে তরুণদের সম্পৃক্ততা রাখা হয়নি। বর্তমান পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বিভিন্ন নীতিনির্ধারণী প্রক্রিয়ায় তরুণদের যুক্ত করতে কাঠামোগত পরিবর্তন আনা প্রয়োজন। যেসব উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে, সেখানে তরুণদের জন্য শোভন চাকরির সুযোগ আছে কি না, সে দিকে নজর দিতে হবে।
সেলিম রায়হান আরও বলেন, ‘এত দিন বলা হতো আমরা মধ্য আয়ের ফাঁদে পড়ার ঝুঁকিতে আছি, কিন্তু বর্তমান তথ্য বলছে, আমরা ইতিমধ্যে মধ্যম আয়ের ফাঁদে পড়ে গেছি। সুতরাং এ বিষয়ে এখনই সঠিক সংস্কারমূলক পদক্ষেপ নেওয়া না হলে ভবিষ্যতে বড় ধরনের সংকট সৃষ্টি হবে। আফ্রিকার অনেক দেশে এ রকম উদাহরণ আছে।’
চাকরির বাজারের সঙ্গে প্রাসঙ্গিক পড়াশোনার ক্ষেত্র তৈরির পরামর্শ দিয়েছেন একশনএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবির। তিনি বলেন, নারীরা বিশেষ করে তরুণীদের বিশাল একটি অংশ ‘আনপেইড’ বা বেতনহীন কাজের মধ্যে আছেন, তাঁদের কাজের স্বীকৃতি দিতে হবে।