নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, ‘কারা নির্বাচনে আসবে, কারা যোগ্য, কারা যোগ্য নয়, সে সিদ্ধান্ত নির্বাচন কমিশন (ইসি) নেবে। আমাদের কাজ হলো নির্বাচনীব্যবস্থা সংস্কারের ব্যাপারে প্রস্তাব দেওয়া।’
আজ রোববার দুপুরে জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কারসংক্রান্ত এক মতবিনিময় সভা শেষে সব দলের নির্বাচনে অংশগ্রহণসংক্রান্ত সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বদিউল আলম মজুমদার এ কথা বলে।
সভায় বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষ তাঁদের মতামত ব্যক্ত করেন। কমিশনের অপর দুই সদস্য তোফায়েল আহমেদ ও জেসমিন টুলী এতে উপস্থিত ছিলেন।
সবাই সুষ্ঠু নির্বাচন চান উল্লেখ করে বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘আমরা যেটা উপলব্ধি করেছি, মানুষের মধ্যে আগ্রহ, আবেগ ও উচ্ছ্বাস আছে। যেখানে আমাদের দেখে মানুষ দুটো কথা বলতে চায়। মনের আকুতি ব্যক্ত করতে চায়। তারা বিভিন্ন প্রস্তাব দিতে চায়। তাদের সবার আকুতি, একটা সুষ্ঠু–নিরপেক্ষ নির্বাচন হোক। যার মাধ্যমে আমাদের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাটা একটা শক্ত ভিতের ওপর দাঁড়াবে। এটা জন–আকাঙ্ক্ষা। আমাদেরও আলাদা। সে লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি।’
বদিউল আলম মজুমদার যোগ করেন, ‘আমরা কতগুলো প্রস্তাব দেব। কিন্তু বাস্তবায়ন আমাদের দায়িত্ব নয়। বাস্তবায়ন হবে সরকারের দ্বারা।’
অপর এক প্রশ্নের জবাবে বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘নাগরিক হিসেবে অনেকে সুস্পষ্ট বক্তব্য দিয়েছেন। তাঁরা আর ব্যবহৃত হতে চান না। তাঁরা চান সুষ্ঠু–নিরপেক্ষ নির্বাচন। তাই সেভাবে দায়িত্ব পালন করার চেষ্টা করছি। আর হলফনামায় অনেক রকম ভুয়া, বিভ্রান্তিমূলক তথ্য দেওয়া হয়। তথ্য গোপন করা হয়। এগুলো যাতে যাচাই-বাছাই করা হয়, সে–সংক্রান্ত প্রস্তাব দেওয়ার কথা বিবেচনা করছি। আমাদের প্রস্তাবগুলো এখনো চূড়ান্ত হয়নি।’
সময়সীমা সম্পর্কে বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘আমাদের সময়সীমা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। আমাদের প্রজ্ঞাপনটা জারি হয়েছে ৩ তারিখ। আমরা আশা করি, ৩১ (ডিসেম্বর) তারিখের মধ্যেই সুপারিশ দেব। আর নির্বাচনের ব্যাপারে ব্যাপক দাবি আছে। প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, নির্বাচনী ট্রেনটা যেন ট্র্যাকে ওঠে। এ জন্য প্রথম কাজটা ছিল নির্বাচন কমিশন গঠন করা। ওনারা (সরকার) তা–ই করেছেন। আমাদের কাজের সঙ্গে তাদের কাজের কোনো রকম সাংঘর্ষিক অবস্থা বিরাজ করছে না। তাদের আরও অনেক কাজ আছে। ভোটার তালিকা প্রণয়নসহ নানা কাজ। কাজগুলো শুরু করা দরকার।’
নির্বাচন কমিশন নিয়ে বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করতে চাই, তাঁরা সঠিক ব্যক্তি। তাঁরা একটা সুষ্ঠু–নিরপেক্ষ গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দিতে পারবেন।’
বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘আমাদের নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কারের ব্যাপারে সুপারিশ থাকবে। সংখ্যানুপাতিক আসনের পক্ষেও আছে, বিপক্ষেও প্রস্তাব আছে প্রবল। সব কটা বিবেচনায় নিচ্ছি। তবে এখানে আরেকটা জিনিস জানা দরকার, এসব সিদ্ধান্ত মূলত আমাদের নয়। এগুলোর জন্য সংবিধান পরিবর্তন করতে হবে। তো সংবিধান পরিবর্তনের জন্য যে কমিশন হয়েছে, তাদের এ বিষয়ে সুপারিশ করতে হবে।’
আগের নির্বাচনগুলো প্রসঙ্গে বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘আমাদের কিছু অজানা আছে, তা আমরা জানতে চেয়েছি। তবে আপনারাও জানেন, আমরাও জানি, কী ঘটেছিল। প্রত্যেকেই অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন দেখতে চান। আবার যেন এমন নির্বাচন না হয়। আবার যেন পুনরাবৃত্তি না ঘটে। এই যে অপরাধের যেসব ঘটনা ঘটেছে, হত্যাকাণ্ড ঘটেছে, মানবতাবিরোধী অপরাধ এবং একই সঙ্গে আমাদের নির্বাচনী ব্যবস্থাকে নির্বাসনে পাঠিয়েছে, এটার যেন অবসান হয়। রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকেও দায়িত্বশীল সুপারিশ এসেছে। তারাও চায় যে একটা সুষ্ঠু–নিরপেক্ষ নির্বাচন হোক।’
তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা–সংক্রান্ত আদালতের রায়ের বিষয়ে বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘কয়েকটা জিনিস ভবিষ্যতে ঘটবে। একটা হলো, হাইকোর্টের রায়টা সুপ্রিম কোর্টে যাবে। আমরা আশা করছি যে সুপ্রিম কোর্ট হাইকোর্টের পক্ষেই রায় দেবেন। আরেকটা মামলা আছে যে খায়রুল ইসলামের তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিলের যে মামলা, সেটার ব্যাপারেও আমরা আদালতের দ্বারস্থ হয়েছি। সেটা রিভিউর ব্যাপারে। তারপর সংবিধান সংস্কার কমিশন প্রস্তাব দেবে এবং আমার জানামতে এগুলো সংবিধানের অন্তর্ভুক্ত করতে হলে সংসদে বিল উত্থাপন করতে হবে। বিল উত্থাপন করে সেটা পাস করার পর সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত হবে।’
ইভিএম পদ্ধতিতে আর কোনো নির্বাচন হবে না জানিয়ে বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘ভোটার তালিকার ভুল প্রসঙ্গে আমরা প্রস্তাব করব, সংশোধনগুলো যেন করা হয়। এর সঙ্গে আরও দুর্নীতি যুক্ত আছে, সেগুলোর যেন অবসান হয়। আমরা নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সভা করেছি । আমরা সুস্পষ্টভাবে বলেছি, এনআইডি এবং প্রবাসীদের ভোটাধিকারের বিষয়ে।’