রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় রাজনৈতিক দল হলে সরকারের গ্রহণযোগ্যতা নষ্ট হবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
শুক্রবার (২০ ডিসেম্বর) রাজধানীর মোহাম্মদপুরের কাটাশুর এলাকায় আমরা বিএনপি পরিবার আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এই কথা বলেন।
রিজভী বলেন, ‘আমরা খবরের কাগজে দেখছি, জাতীয় নাগরিক কমিটি নামে একটি রাজনৈতিক দল করা হচ্ছে। ভালো কথা, গণতন্ত্রের পথে যখন আমরা হেঁটে যাচ্ছি, যে কোনো রাজনৈতিক দল করতে পারে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বা যারা এটা করছেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্ররা, যারা নেতৃত্ব দিয়েছে, তারা যদি দল করে খুবই ভালো কথা। কিন্তু এটা যেন আবার রাজকীয় দল না হয়। রাষ্ট্রের পৃষ্ঠপোষকতায় কোনো দল গঠন করার প্রক্রিয়া যদি হয়, তাহলে সরকারের গ্রহণযোগ্যতা নষ্ট হবে।’
রিজভী আরও বলেন, ‘আমরা একটি জিনিস দেখছি, এই দলকে সুসংগঠিত করার জন্য ইতোমধ্যে যে কমিশনার-কাউন্সিলরদের বাদ দেওয়া হয়েছে, তাদের সেখানে নেওয়া হবে এমন কথা হচ্ছে। আওয়ামী লীগের আমলে শেষ যে কাউন্সিলর বা পৌর নির্বাচন, মেয়র নির্বাচন হয়েছে, যারা কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছে তারা তো অধিকাংশ ক্রিমিনাল (অপরাধী), জুলাই-আগস্ট বিপ্লবে এরা রিভলবার, চাকু, ধারালো অস্ত্র নিয়ে ছাত্রদের আক্রমণ করেছে। ওদের গুলিতেও অনেকে মারা গেছে। তারা যদি কোনো দলের অস্তিত্বের নির্ণায়ক হয়, তাহলে খারাপ বার্তা যাবে জনগণের কাছে।’
কোনো ভদ্রলোক নির্বাচিত হোক শেখ হাসিনা চাননি, উনি ক্ষমতায় থাকতে চেয়েছেন উল্লেখ করে রিজভী বলেন, ‘তিনি অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচন চাননি, তার কিছু গুণ্ডা-পাণ্ডা হলেই চলবে। সেই কারণে সারা দেশে তিনি বেছে বেছে কাউন্সিল সিলেকশন দিয়েছেন। তাদের নির্বাচন কমিশন নির্বাচিত ঘোষণা করেছে। তারা যদি কোনো রাজনৈতিক দলে গিয়ে দল সংগঠিত করে, ওটা তো অপরাধীদের সংগঠন হবে।’
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে বিএনপির ৪৫০ ছেলে মারা গেছে উল্লেখ করে বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, ‘বিএনপির সঙ্গে ছল-চাতুরি করে কোনো লাভ হবে না। নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা করলো অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। তাদের যত ধরনের সহযোগিতা বিএনপি করে এসেছে, সমর্থন দিয়ে এসেছে। কেন জানি মনে হচ্ছে, রোডম্যাপ প্রলম্বিত ম্যাপ। আমার মনে হয়, এটি সাধারণ মানুষের কাছে প্রশ্নবোধক চিহ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে, কোনো উদ্দেশ্য আছে কি না?’
রিজভী আরও বলেন, ‘জনগণ কিন্তু উটপাখির মতো বালির নিচে মাথা গুঁজে রাখেনি। জনগণ কিন্তু চোখ খোলা রেখেছে। যারা গণতন্ত্রের পক্ষের মানুষ, তাদের দিক থেকে যদি কোনো ভুল হয়, তাহলে কিন্তু বড় ধরনের খেসারত দিতে হবে। শেখ হাসিনা যে দেশে আশ্রয় নিয়েছে, সে দেশে থেকে তিনি অনেক ষড়যন্ত্র করছেন। সেই দেশ ও সেই দেশের মিডিয়াকে প্রভাবিত করে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অনেক অপতথ্য-অপপ্রচার করছেন। শুধুমাত্র বিএনপির বিরুদ্ধেই তারা অপপ্রচার করছে না, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিরুদ্ধেও তারা অপপ্রচার করছে।’
‘আমরা আলোচনা করছি সরকারের সঙ্গে, সমালোচনা করছি, অনেক বিষয়ে নিন্দা জানাচ্ছি, অনেক বিষয়ে ধন্যবাদ জানাচ্ছি, এটা আমাদের নিজেদের প্রক্রিয়ায় করছি। বাইরের কোনো বিপদ এলে আমরা একসঙ্গে বসছি, কথা বলছি। এই কারণে অন্তর্বর্তী সরকারকে অনেক মেপে মেপে পা ফেলতে হবে। যদি ভুল হয়, ইতিহাস যেমন আমাদের ক্ষমা করবে না, বাইরের শত্রু আমাদের কাউকে ক্ষমা করবে না। আমাদের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব বিপন্ন হবে,’ বলেন রিজভী।