রাষ্ট্র সংস্কার প্রশ্নে দল-মত-নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি। পার্টির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ড. মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বাধীন বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার যেন ব্যর্থ হতে না পারে সেজন্য যার যার অবস্থান থেকে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে হবে।
মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘রাষ্ট্র সংস্কার ও আধিপত্যবাদ মোকাবেলায় জাতীয় ঐক্য : জনতার প্রত্যাশা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে এই আহ্বান জানানো হয়। পার্টির আমীর আল্লামা সারোয়ার কামাল আজিজীর সভাপতিত্বে ও যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা ডা. মুহম্মদ ইলিয়াস খানের সঞ্চালনায় বৈঠকে বক্তৃতা করেন বিএনপি চেয়ারপারসন উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, জামায়াতে ইসলাম বাংলাদেশের নায়েবে আমীর অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমদ আব্দুল কাদের, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব গাজী আতাউর রহমান, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের সহসভাপতি মাওলানা আব্দুর রব ইউসুফী, নেজামে ইসলাম পার্টির সিনিয়র নায়েবে আমীর মাওলানা আবদুল মাজেদ আতহারী ও মাওলানা আতাউল্লাহ, মহাসচিব মুসা বিন ইযহার, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী, এবি পার্টির সদস্য সচিব মোজাফিজুর রহমান মঞ্জু, ইসলামী ঐক্য আন্দোলনের চেয়ারম্যান ড. ঈশা শাহেদী, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ডক্টর ফয়জুল হক প্রমুখ।
বৈঠকে অ্যাডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, আওয়ামী লীগ নামের সঙ্গে তাদের চরিত্র পরিবর্তন করতে অভ্যস্ত। প্রথমে জন্ম নিয়েছে আওয়ামী মুসলিম লীগ নামে। কিছুদিন পরে মুসলিম কেটে শুধু আওয়ামী লীগ। এরপরে আওয়ামী লীগ বাদ, মুসলিম বাদ দিয়ে বাকশাল করেছে।
আবার কিছুদিন পরে আওয়ামী লীগ। জন্মের পর থেকে যারা চারবার নিজেদের নাম পরিবর্তন করেছে তারা চরিত্রও ঘন ঘন পরিবর্তন করবে। তাদের সঙ্গে কোনো আপস হতে পারে না। আওয়ামী লীগকে অবশ্যই জনতার কাছে ক্ষমা চাইতে হবে।
আগে অনুশোচনা প্রকাশ করতে হবে।
তিনি আরো বলেন, আধিপত্যবাদ বিরোধী বলতে শুধু ভারত নয়, আধিপত্যবাদের জন্য যারা আগ্রাসী হবে তাদের বিরুদ্ধে কাজ করতে হবে। বহুমুখী সৌন্দর্যের যে দ্বিমত, সেটাই হচ্ছে একমত। আমাদের ভিন্নমত থাকবে কিন্তু জাতীয় স্বার্থের ব্যাপারে আমরা একমত থাকব।
অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, আওয়ামী লীগ দলটি শুধু চোরের দল নয়, এরা ডাকাত, খুনির দল।
এরা জবর দখল করে সম্পদ লুট করে বিদেশে পাচার করেছে। অতএব এদের ব্যাপারে কোনো কম্প্রোমাইজ করা উচিত হবে বলে আমি মনে করি না। আগে বিচার করতে হবে। বিচার করে শাস্তি দিতে হবে।
তিনি বলেন, ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা ছিল পরাধীনতার। এটা স্বীকার করতেই হবে। এই পরাধীনতা থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি। আল্লাহ আমাদেরকে স্বাধীনতাকে ফিরিয়ে দিয়েছেন।
এবি পার্টির সদস্য সচিব মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, ভারত বাংলাদেশকে সাহায্য করেছে, এতে তার একটা স্বার্থ ছিল। ভারত পাকিস্তান ভাঙার জন্য আমাদেরকে সাহায্য করেছে। তার মানে এই নয় যে আমরা তাদের আনুগত্য ছেড়ে আপনাদের আনুগত্য করব।
মুসলিম লীগের মহাসচিব কাজী আবুল খায়ের বলেন, বিপ্লবী সরকার গঠন করলে হাসিনা আজ মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারত না। আগে সার্বভৌমত্ব রক্ষা, এরপর সংস্কার করতে হবে।
খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমদ আব্দুল কাদের বলেন, বিএনপি চাইছে আওয়ামী লীগকে আগামীতে নির্বাচনের সুযোগ দিতে। অনেকে টাকার বিনিময়ে আওয়ামী লীগের নেতাদের দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার জন্য সাহায্য করেছে। যারা এটা করেছে তাদের মধ্যে দেশপ্রেম নেই।
নেতারা বলেন, টানা ১৬ বছরের ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলন-সংগ্রামের পর চব্বিশের জুলাইয়ে ছাত্র-জনতার সম্মিলিত গণ-অভ্যুত্থানে পতন ঘটে স্বৈরশাসক ও ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার। হাসিনার পতনের মধ্য দিয়ে এদেশে ভারতীয় আধিপত্যেরও পতন ঘটেছে। এখন আমরা এমনভাবে সংস্কার চাই, যাতে ভবিষ্যতে স্বৈরতন্ত্র ও ফ্যাসিবাদ মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার সুযোগ না পায়। এক্ষেত্রে সংবিধান সংস্কার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সংবিধানে সংস্কারে অবশ্যই আমাদের জাতীয় চেতনা, ঐতিহ্য ও বোধ-বিশ্বাসের প্রতিফলন থাকতে হবে।
দ্রুত নির্বাচনী রোডম্যাপ দাবি করে বক্তারা বলেন, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কোনো অনিশ্চয়তা বা অস্থিরতা বিরাজ করুক তা আমরা দেখতে চাই না। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সরকারের উচিত রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচনার মধ্য দিয়ে একটি রোডম্যাপ হাজির করা এবং সেই রোডম্যাপ অনুসারে কার্যক্রম চালানো। এতে সরকারের প্রতি ছাত্র-জনতা ও রাজনৈতিক দলগুলোর আস্থা বৃদ্ধি পাবে।
বক্তারা আরো বলেন, একাত্তরের স্বাধীনতার পর থেকে আওয়ামী ফ্যাসিবাদ ও ইন্ডিয়ান আধিপত্যবাদ মিলিতভাবে আমাদের খণ্ডিত ও বিকৃত ইতিহাসের মধ্যে আবদ্ধ করার নানা চক্রান্ত চালিয়েছে। নজিরবিহীন গুম-খুন ও গণহত্যার মধ্য দিয়ে ত্রাসের রাজত্ব তৈরি করে আবারও স্বৈরশাসন ও ফ্যাসিবাদ চেপে বসে জাতির ঘাড়ে। আওয়ামী ফ্যাসিবাদের চেতনার মিথ ও দলীয় বয়ান ব্যবহার করে ফ্যাসিস্ট হাসিনার সেসব নারকীয় হত্যাযজ্ঞ ও অত্যাচারকে ন্যায্যতা দেওয়ার অপপ্রয়াস চালানো হতো। এই সুযোগ চিরতরে বন্ধ করতে হবে।