বগুড়ায় গভীর রাতে এক কলেজছাত্রকে র্যাবের পোশাক পরা কয়েকজন ব্যক্তি মারধর করতে করতে তুলে নিয়ে যাচ্ছেন—এমন একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। গত শুক্রবার রাতে বগুড়ার আজিজুল হক কলেজ-সংলগ্ন শহরের জহুরুলনগর এলাকার ছাত্রাবাস থেকে ওই শিক্ষার্থীকে অপহরণ করে নিয়ে যাওয়া হয়।
শনিবার ওই শিক্ষার্থীর পরিবারের কাছে সাত লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে অপহরণকারী চক্র। এ ঘটনায় থানায় মামলার পর মুক্তিপণের টাকা পাঠানোর ফাঁদ পেতে চক্রের এক নারী সদস্যকে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থেকে আটক করে পুলিশ। পরে ওই নারীর দেওয়া তথ্যমতে, নরসিংদীর মাধবদী থেকে অপহৃত ফেরদৌসকে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় উদ্ধার করা হয়।
নির্যাতনের শিকার ওই কলেজছাত্রের নাম ফেরদৌস সরকার (২৩)। তিনি বগুড়ার সরকারি শাহ সুলতান হক কলেজের স্নাতক (সম্মান) শ্রেণির শেষ বর্ষের ছাত্র। তিনি গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার নাকাই গ্রামের হাবিল সরকারের ছেলে। তাঁকে অপহরণ করে নিয়ে যাওয়ার ৩৪ সেকেন্ডের ভিডিওতে দেখা যায়, র্যাবের পোশাক পরা তিনজন ব্যক্তি মাটিতে ফেলে এক যুবককে বেধড়ক পিটিয়ে টেনে–হিঁচড়ে মাইক্রোবাসে তুলছেন। মারধরের শিকার যুবক চিৎকার করে কান্নাকাটি করছেন।
বগুড়া সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম মঈনুদ্দীন জানান, শুক্রবার রাতে জহুরুলনগর এলাকার একটি ছাত্রাবাস থেকে ওই ছাত্রকে ধরে নিয়ে যান র্যাবের পোশাক পরা কয়েকজন ব্যক্তি। সকালে স্বজনেরা র্যাব-১২–এর বগুড়া ক্যাম্প ও যৌথ বাহিনীর ক্যাম্পে গিয়ে জানতে পারেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এমন কোনো অভিযান চালায়নি। এর মধ্যে দুপুরের আগে অপহরণকারী চক্র ওই কলেজছাত্রের পরিবারের কাছে ফোন করে সাত লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। দুপুর পর্যন্ত বিভিন্ন নম্বরে বিকাশ ও নগদের মাধ্যমে তিন লাখ টাকা পাঠালেও ফেরদৌসকে মুক্তি দেয়নি ওই চক্র। এরপর ফেরদৌসের স্ত্রী মাহবুবা আকতার বাদী হয়ে থানায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে তাঁর স্বামীকে অপহরণের অভিযোগে বগুড়া সদর থানায় মামলা করেন।
সদর থানার ওসি এস এম মঈনুদ্দীন প্রথম আলোকে বলেন, মামলার পর অপহরণকারী চক্রকে ধরতে মাঠে নামে পুলিশ। বিকাশে টাকা পাঠানোর ফাঁদ পেতে প্রথমে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকা থেকে চক্রের এক নারী সদস্যকে আটক করে সেখানকার পুলিশ। পরে ওই নারীর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী অপহৃত ফেরদৌসকে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় নরসিংদীর মাধবদী থেকে উদ্ধার করা হয়। তিনি বলেন, আটক নারী ও ফেরদৌসকে নিয়ে বগুড়ার উদ্দেশে রওনা দিয়েছে পুলিশ। তারা এখনো বগুড়ায় পৌঁছায়নি। চক্রের অন্য সদস্যদের গ্রেপ্তারে ওই নারীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। তখন অপহরণকারী চক্রে মোট কতজন আছে, সে বিষয়ে বিস্তারিত জানা যাবে।
জানতে চাইলে র্যাব–১২–এর বগুড়া ক্যাম্পের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কমান্ডার সবুজ প্রথম আলোকে বলেন, র্যাবের বগুড়া ক্যাম্পের কোনো সদস্য জহরুল নগরে শুক্রবার রাতে কোনো অভিযানে যাননি। ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করে দেখেছেন, র্যাবের পোশাক পরা কয়েকজন একজনকে টেনে–হিঁচড়ে নিয়ে যাচ্ছে। ওই ব্যক্তিদের পরিচয় শনাক্ত করতে ও আইনের আওতায় আনতে তাঁরা কাজ করছেন। শিগগিরই এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাবেন।