বিগত ১৫ বছরে ছাত্রলীগের লেজুড়বৃত্তিক অপরাজনীতির ফলে ক্যাম্পাসগুলোতে সুষ্ঠু রাজনৈতিক চর্চা বিঘ্নিত হয়েছে। জুলাই বিপ্লব পরবর্তী সময়ে নতুন করে রাজনৈতিক চর্চার ছক আঁকা প্রয়োজন। যে ছাত্র রাজনীতি শিক্ষার্থীদের অধিকারের কথা বলবে এবং ছাত্রদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট অর্থাৎ শিক্ষামূলক কর্মসূচি গ্রহণ করবে সেটাই মূলত ছাত্র রাজনীতি হতে পারে।
বৃহস্পতিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে স্বোপার্জিত স্বাধীনতা চত্বরে ডায়ালগ ফর ডেমোক্রেসির আয়োজনে ‘গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী ছাত্র রাজনীতি প্রশ্ন: নয়া স্বরূপ অভিসন্ধানের অভিপ্রায়’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন তিনি।
‘ডায়ালগ ফর ডেমোক্রেসি’ এর আহ্বায়ক শেখ মো. আরমানের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সহ-সাধারণ সম্পাদক মেঘমল্লার বসু, জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রাফিয়া রেহনুমা হৃদি।
অনুষ্ঠানে পর্যবেক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সভাপতি মহিউদ্দিন মুজাহিদ মাহি ও ঢাকা ইউনিভার্সিটি ডিবেটিং সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক আদনান মোস্তারী।
এসময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, জনগণের খয়রাতের পয়সায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পরিচালিত হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল লক্ষ্যই হচ্ছে- জ্ঞান বিস্তার করা। মূল লক্ষ্যই হচ্ছে আপনার সুবিধার জনক চিন্তাগুলোকে পর্যাপ্ত ভাষা দিয়ে জ্ঞানভিত্তিক এবং গবেষণা ভিত্তিক রাষ্ট্র তৈরি করা। কিন্তু বিদ্যমান যে দলীয় ছাত্ররাজনীতি রয়েছে তা আপনাকে ক্লাস মিস দিয়ে মধুর ক্যান্টিনে আসতে বাধ্য করেছে। দলীয় রাজনীতি আপনাকে রিডিং রুমে না নিয়ে গিয়ে নেতার পাশে গিয়ে হাততালি দিতে বাধ্য করেছে। দলীয় রাজনীতি আপনাকে আপনার রুমের সিট থেকে বঞ্চিত করেছে। যেখানে দলীয় রাজনীতিতে ছাত্র নেতাদের কথা বলা উচিত ছিল আসন সমস্যার সমাধান কিভাবে করা যায় সেখানে দলীয় রাজনীতিতে আমরা দেখেছি ছাত্রনেতারা গণরুম ব্যবস্থাকে জিইয়ে রেখে ছাত্রদের ব্যবহার করেছে। দলীয় রাজনীতিতে যেখানে ছাত্র নেতাদের উচিত ছিল লাইব্রেরিতে শিক্ষার্থীদের নিয়ে যাওয়া সেখানে তারা লাইব্রেরি থেকে শিক্ষার্থী নিয়ে এসে মধুর ক্যান্টিনে ভ্যানগার্ড দিয়েছে।
বাংলাদেশী ইসলামী ছাত্র শিবিরের সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম বলেন, যে ছাত্র রাজনীতি শিক্ষার্থীদের অধিকারের কথা বলবে এবং ছাত্রদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট অর্থাৎ শিক্ষামূলক কর্মসূচি গ্রহণ করবে সেটাই মূলত ছাত্র রাজনীতি হতে পারে। কিন্তু লেজুড়বৃত্তির যে চর্চা, দলকে ক্ষমতায় নিয়ে আসার জন্য যে চর্চা তার মধ্য দিয়েই আমাদের ছাত্র রাজনীতি যায় আসলে।
তিনি বলেন, সাইয়েদ আবুল আলা মওদুদী বলেছেন, ছাত্র রাজনীতি একটা ইবাদত। ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে আমরা মনে করি প্রত্যেকটা ভালো কাজ, ন্যায়ের পক্ষে থাকা এবং অন্যায়ের প্রতিবাদ করা সেটাই আসলে ইবাদত। মধ্যপ্রাচ্যে রাজতন্ত্রই বেশি প্রয়োগ করা হয় সেহেতু সেখানে ওই অর্থে রাজনৈতিক দল বা সংগঠন কাজ করে না। তবে পশ্চিমা বিশ্ব, এশিয়া এবং অন্যান্য অঞ্চলে ছাত্র রাজনীতির কাঠামো রয়েছে। তাদের ভুল ধরার গণতান্ত্রিক দলগুলোর ছাত্র রাজনৈতিক সংগঠন রয়েছে। তারা সহশিক্ষা ও দক্ষতা উন্নয়নমূলক কার্যক্রম করে থাকে। কিন্তু আমাদের দেশে আমরা যতটা তাত্ত্বিকভাবে বিবৃতি বা বক্তব্য দেই কিন্তু আমাদের বাস্তবিক কাজে সেটা নড়বড়ে হয়ে যায়। বাস্তবে আমরা কি করছি এটাই গুরুত্বপূর্ণ।
বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সহ-সাধারণ সম্পাদক মেঘমল্লার বসু ছাত্র ইউনিয়নকে দলীয় লেজুড়বৃত্তিহীন সংগঠন দাবি করেন। এসময় তিনি একটি সুষ্ঠু ও যুগোপযোগী রাজনীতির জন্য তিনি চারটি সংস্কারের কথা বলেন। এগুলো হচ্ছে সি আর কাউন্সিল নির্বাচন, অনুষদভিত্তিক ডাকসু নির্বাচন, ডাকসুর গঠনতন্ত্রের আমূল পরিবর্তন এবং ফলের সিট বন্টনের দায়িত্ব প্রশাসনের হাতে রাখা।
ডাকসুর সাবেক সমাজসেবা সম্পাদক ও জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক আখতার হোসেন বলেন, ফোন থেকে দেখে চেক করে করে মারধর করার রাজনীতি থেকে আমরা বেড়ে উঠেছি। আমিই স্বয়ং মার খেয়েছি। আজ ছাত্রদলের প্রতিনিধি নাসির ভাইয়ের এখানে আসার কথা ছিল। তিনি এখানে না এসে তারেক জিয়ার মিটিংয়ে গিয়েছেন। এটাকে আমরা লেজুড়বৃত্তিকতা বলতে পারি কিনা সেটাও একটা বড় প্রশ্ন।