‘সরকারের সমালোচনা করা মানে সরকারকে ব্যর্থ করা নয়’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। রাজনৈতিক দলগুলো অন্তর্বর্তী সরকারকে ব্যর্থ প্রমাণ করার চেষ্টা করছে— তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টার এ বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় রিজভী আজ বৃহস্পতিবার সকালে দলীয় এক অনুষ্ঠানে এ মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ‘বিএনপিসহ রাজনৈতিক দলগুলো অন্তর্বর্তী সরকারকে সমর্থন দিয়েছে। আবার আপনাদের নানা কাজের সমালোচনা হবে। এটাই গণতন্ত্রের রীতি, গণতন্ত্রের বৈশিষ্ট্য।’
রাজধানীর ভাঙা প্রেস এলাকার নবী টাওয়ারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শহীদ পরিবারের মধ্যে আর্থিক সহযোগিতা প্রদান অনুষ্ঠানে এ কথাগুলো বলেন তিনি।
আজ আলোচনা প্রসঙ্গে ফ্যাসিবাদী শেখ হাসিনা সরকার-বিরোধী আন্দোলনে বিরোধীদলীয় নেতা-কর্মীদের গুম-খুনের সময়ে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ভূমিকা সামনে আনেন রুহুল কবির রিজভী।
রিজভী বলেন, ‘আমরা যদি বলি, ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে আমরা সবাই পছন্দ করেছি, সবাই। বিএনপির নেতা-নেত্রীরা যেমন শেখ হাসিনার দ্বারা অপমানিত হয়েছেন, নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, তিনিও শেখ হাসিনার দ্বারা নিপীড়নের শিকার হয়েছেন। কিন্তু গণতন্ত্র তো একটা সর্বজনীন ব্যাপার। (দেশে) এখানে জুলাই-আগস্টের বিপ্লবের আগেও তো অনেকে গুম হয়েছেন, দুজন এমপি গুম হয়েছেন। একজন সাবেক এমপিকে পটুয়াখালীতে যুবলীগ পিটিয়ে মেরে ফেলেছে। কত ছাত্র-যুবককে ক্রসফায়ার দেওয়া হয়েছে। আমরা তো একজন গুণী মানুষ হিসেবে, দেশের একজন বরেণ্য, সব মানুষের শ্রদ্ধেয়… তিনি তো এক দিনও এর প্রতিবাদ করেননি, একটা স্টেটমেন্ট দেননি। কিন্তু ওনাকে যখন মামলা দেওয়া হয়েছে, বিএনপি কিন্তু ওনার জন্য বিবৃতি দিয়েছে।’
এ প্রসঙ্গে ১৯১৫ সালে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে ব্রিটিশ সরকারের দেওয়া ‘নাইটহুড’ উপাধি ত্যাগের ঘটনার উল্লেখ করেন রিজভী। তিনি বলেন, ‘আমি এ কারণেই বলছি, ভারতে সম্ভবত ১৯১৯ সালে জালিয়ানওয়ালাবাগে ইংরেজ সৈনিকেরা নির্বিচারে গুলি চালিয়ে অসংখ্য ভারতীয়কে হত্যা করে। এর প্রতিবাদে রবীন্দ্রনাথ ইংরেজদের দেওয়া খেতাব পরিত্যাগ করেছিলেন। কিন্তু গোটা জাতি তো প্রত্যাশা করেছিল ড. ইউনূস সাহেব, যিনি নিজেও শেখ হাসিনা দ্বারা নির্যাতিত, তিনি গণতান্ত্রিক আন্দোলনে কমপক্ষে একটা বিবৃতি দেবেন।’
তথ্য উপদেষ্টার বক্তব্য প্রসঙ্গে রিজভী বলেন, ‘সরকারের একজন উপদেষ্টা বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকারকে রাজনৈতিক দলগুলো ব্যর্থ করতে চাইছে। আমার মনে হয়, অন্তর্বর্তী সরকারের একজন উপদেষ্টার এ ধরনের কথা বলা সমীচীন নয়। কারণ, যে গণতন্ত্র শেখ হাসিনা আটকে দিয়েছিল, কথা বলার স্বাধীনতার যিনি টুঁটি চেপে ধরেছিলেন, আইনের শাসনকে যিনি আজিমপুর গোরস্তানে কবরস্থ করেছিলেন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতাকে তিনি ভাসিয়ে দিয়েছিলেন বঙ্গোপসাগরে। আপনাদের কথা সেই শেখ হাসিনার মতো হবে কেন।’
সরকারের উপদেষ্টাদের উদ্দেশে বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, ‘দেশ গণতন্ত্রের পথে যে যাত্রা শুরু করেছে, আপনারা তাকে সহায়তা করবেন। এই মুহূর্তে যখন দেশ সংকটে পড়েছে, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূস সবার সঙ্গে কথা বলে তিনি জাতীয় ঐক্যের যে বৈশিষ্ট্য দেখিয়েছেন, তাতে সবাই একাত্মতা ঘোষণা করেছে। বিএনপিসহ রাজনৈতিক দলগুলো সরকারকে সমর্থন দিয়েছে। আবার আপনাদের নানা কাজের সমালোচনা হবে। এটাই তো গণতন্ত্রের রীতি, গণতন্ত্রের বৈশিষ্ট্য।’
সমালোচনায় ‘ভুল’ সংশোধনের সুযোগ তৈরি হয় জানিয়ে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ‘আপনার প্রতিদিনের কাজে যদি সমালোচনা হয়, আপনি নিজেই নিজের ভুল বুঝতে পারবেন। ইউরোপ-আমেরিকাসহ পৃথিবীর উন্নত গণতান্ত্রিক দেশগুলো এটাই চর্চা করে। সমালোচনা করা মানে সরকারকে ব্যর্থ করা নয়। এ ধরনের কথা একজন উপদেষ্টার মুখ থেকে আসা কখনোই ঠিক হয়নি।’
ভারতের সমালোচনা করে রুহুল কবির রিজভী বলেন, আজকে পতিত স্বৈরশাসকের জন্য ভারত মায়াকান্না করছে। তারা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার করছে। এই যাত্রাবাড়ীতে শত শত মানুষ হত্যা করা হয়েছে। এখানেই তো অনেক মন্দির আছে, সেখানে কোনো হামলা হয়েছে? কোনো হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা হয়েছে? এসব ধূম্রজাল সৃষ্টি করে তারা গণধিক্কৃত আওয়ামী লীগকে আবার ফিরিয়ে আনতে চায়। তিনি বলেন, অপপ্রচার দিয়ে, অপতথ্য দিয়ে ধূম্রজাল তৈরি করা যায়, কিন্তু সেই ধূম্রজাল কেটে যায়।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক নবী উল্লাহ নবীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আ ন ম সাইফুল ইসলাম, মকবুল হোসেন প্রমুখ।