Wednesday, December 25, 2024
Home Politics এখন ভয়ডর নেই’

এখন ভয়ডর নেই’

by radesk
0 comments

নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের প্রায় প্রতিটি তলার সিঁড়ির পাশের দেয়াল পোস্টারে ঢাকা। দলের কেন্দ্রীয় ও জেলা পর্যায়ের বিভিন্ন কর্মসূচি উপলক্ষে এসব পোস্টার লাগানো হয়। তৃতীয় তলায় ওঠার সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে পুরোনো ওই সব পোস্টার দেখছিলেন জুরাইন থেকে আসা আবুল কাসেম।

শুক্রবার বিকেল পাঁচটায় বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের তৃতীয় তলায় এই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় পঞ্চাশোর্ধ্ব আবুল কাসেমের। তিনি বলেন, চেষ্টা করেন ছুটির দিনগুলোতে অন্তত একবার এখানে আসতে। যদিও দলের কেন্দ্রীয় বা স্থানীয় নেতাদের কারও সঙ্গে তাঁর ব্যক্তিগত পরিচয় বা যোগাযোগ নেই। দলে কোনো পর্যায়ের কমিটিতে তাঁর পদ–পদবিও নেই। কাজের ফাঁকে সুযোগ পেলে তিনি ঢাকায় দলের মিছিল–সমাবেশেও যোগ দেওয়ার চেষ্টা করেন।

আবুল কাসেম কাজ করেন একটি পোশাক কারখানায়। তাঁর বাড়ি দোহারে। কথায় কথায় বললেন, বিএনপির কাছে তাঁর নিজের চাওয়া–পাওয়ার কিছু নেই। তবে বিএনপি ক্ষমতায় এলে তাঁর ভালো লাগবে। তাঁর পরামর্শ হচ্ছে, বিএনপি সরকার গঠন করতে পারলে জিনিসপত্রের দামের দিকে বেশি খেয়াল রাখতে হবে। সন্ত্রাস-চাঁদাবাজি বন্ধ করতে হবে এবং মানুষকে সম্মান দিতে হবে।

গণ–অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের চিত্র বদলে গেছে। আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে একাধিকবার কার্যালয়টি বন্ধ রাখা হয়েছিল। নানা ইস্যুকে কেন্দ্র করে ধরপাকড়ের কারণে কার্যালয়ের সামনে নেতা–কর্মীদের খুব একটা আনাগোনা থাকত না। এখন অবশ্য কার্যালয়ের সামনে শত শত নেতা–কর্মী প্রতিদিন ভিড় করেন। তাঁদের অনেকে আসেন শুধু আড্ডা দিতে।

শুক্রবার বিকেল চারটা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা পর্যন্ত বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সমানে দলটির বিভিন্ন পর্যায়ের ১২ জন নেতা–কর্মী–সমর্থকের সঙ্গে কথা বলেছেন এই প্রতিবেদক। দেশের বর্তমান অবস্থাসহ নানা বিষয়ে তাঁরা কথা বলেছেন। তাঁদের একজন পুরান ঢাকার বংশালের মুকিম বাজার এলাকার বাসিন্দা পারভেজ হোসেন। নিজেকে বিএনপির একজন সমর্থক বলে জানান তিনি। আলাপকালে তিনি বলেন, তাঁর অনেক বন্ধু বিএনপির বিভিন্ন পদে আছেন। দীর্ঘদিন তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ নেই। তাঁদের কেউ কার্যালয়ের আছেন কি না, তা দেখতে এসেছেন।

পারভেজ বলেন, দেশের পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়, তা নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত বোঝা যাবে না।

পারভেজের মতোই মোশাররফ হোসেন নামের আরেক ব্যক্তি নয়াপল্টন কার্যালয়ের সামনে ঘোরাঘুরি করছিলেন। তাঁর বাড়ি চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে। তবে তিনি থাকেন পুরানা পল্টনে। কাজ করেন পল্টন এলাকায় একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানে। মোশাররফ বললেন, পারিবারিকভাবে তাঁরা বিএনপির সমর্থক। গত বছরের ২৮ অক্টোবর নয়াপল্টন কার্যালয়ের সামনে বিএনপির সমাবেশে পুলিশের হামলায় আহত অনেক নেতা–কর্মীকে তাঁদের অফিসে আশ্রয় দিয়েছিলেন।

৫ আগস্ট–পরবর্তী সময়ে নয়াপল্টন এলাকায় ভ্রাম্যমাণ দোকানের সংখ্যাও বেড়েছে। বেচাবিক্রিও ভালো বলে জানান বিক্রেতারা। কেউ বিক্রি করেন পেঁয়াজু–পাকুড়া, কেউবা কাবাব, কেউ মৌসুমি ফল কেটে বিক্রি করেন।

পেঁয়াজু বিক্রেতাদের একজন হাবিবুর রহমান। তাঁর বাড়ি টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলায়। নিজেকে বিএনপির একজন কট্টর সমর্থক উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘পুলিশের অনেক দৌড়ানি খাইছি, কিন্তু এই এলাকা ছাড়ি নাই।’

নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সন্ধ্যার আগে বেশ কিছু তরুণকে দেখা গেল সেলফি তুলতে। কথা বলে জানা গেল, তাঁদের অনেকে এসেছিলেন ঢাকার বাইরের বিভিন্ন জেলা থেকে। কেউ আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে বা অন্য কোনো কাজে ঢাকায় এসেছেন। ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত তাঁরা। যেহেতু ঢাকায় এসেছেন, তাই বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এসে সেলফি তুলে যাচ্ছেন।

বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য (কেন্দ্রীয় দপ্তরে সংযুক্ত) আবদুস সাত্তার পাটোয়ারী প্রথম আলোকে বলেন, আগে গ্রেপ্তার, নির্যাতন-নিপীড়নের ভয়ে অনেকে ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও পার্টি অফিসে আসতে ভয় পেতেন। তবু অনেক নেতা-কর্মী নিয়মিতই অফিসে আসতেন। কিন্তু এখন যেহেতু ভয়ডর নেই তাই সবাই স্বতঃস্ফূর্তভাবে আসছেন।

You may also like

Leave a Comment

Rajneeti Ajkal is a leading news portal dedicated to providing comprehensive coverage of news, current affairs, political analysis, and the contemporary landscape of Bangladesh.

Rajneeti Ajkal, A Media Company – All Right Reserved. Designed and Developed by Rajneeti Ajkal